আ. লীগের দুঃসময়ের ফারুক, হিরো থেকে যেভাবে জিরো

আল হাছিব তাপাদার:: ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন জকিগঞ্জ পৌর এলাকার আনন্দপুর গ্রামের ফারুক আহমদ। আওয়ামী রাজনীতিতে শেষ করে দিয়েছেন জীবন যৌবনের বেশী সময় ও সহায় সম্পত্তি। র্দীঘ রাজনৈতিক জীবনে রয়েছে নানা উত্থান-পতন। ভাগ্যে জুটেছে বার বার কারাবরণ। ৯৬ সালে বিএনপি সরকারের এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে শহরে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে হন বিষ্ফোরক মামলার আসামী। যৌবনের ৫টি বছর কেটে যায় কারাগারে। ইতিঘটে শিক্ষা জীবনের। তবু দমে থাকেনি আন্দোলন সংগ্রাম। ৫ বছর জেলের চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে আবারো ফিরে আসেন রাজপথে।

বিএনপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে জকিগঞ্জের রাজপথে তুমুল আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করেন। এরমধ্যে চলে আসে ওয়ান ইলেভেন। সেই ১/১১ কেটেছিলো ফেরারী হয়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে জকিগঞ্জ কাস্টমসের ইমিগ্রেশনে ভারত যাত্রীদের হয়রানী ও দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান নিয়ে দলীয় কোন্দলের বলি হয়ে যান জেলহাজতে। ২০১৪ সালে সেটেলমেন্ট অফিসের ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারো রাজপথে নেমে ভাগ্যে জুটে মিথ্যা মামলা ও কারাবরণ।

আওয়ামীলীগ পরপর ৩ বার ক্ষমতায় থাকার পরও ফারুক আহমদের জীবনে এখনো চলছে দুর্দিন। দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারী সুযোগসন্ধানী ও হাইব্রিড নেতাদের কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। ত্যাগের বিনিময়ে পাচ্ছেন শুধু বঞ্চনা-লাঞ্ছনা। বাবার ছিলো অনেক সহায় সম্পত্তি। রাজনৈতিক মামলা ও রাজনীতির পেছনে অনেক সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে শেষ করে দেন। দল ক্ষমতায় আসার পরও রাজনীতির পেছনে হারানো সহায় সম্পত্তি আর ফিরে আসেনি ফারুকের হাতে।

সম্প্রতি দেশব্যাপী আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রীড নেতারা ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়ার খবরে যখন আলোচিত ঠিক সেই সময় ‘হিরো থেকে জিরো’ ফারুক সততার রাজনীতিবীদ হিসেবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছেন। তাঁকে ঘিরে চলছে নানান আলোচনা। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে নিজের ত্যাগের উপহার স্বরূপ পেয়েছিলেন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক পদ। এরপর কারাগারে থাকাকালে হন জেলা যুবলীগের সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। দল ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে হন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক।

২০১৫ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সেই কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে সেই ফারুক এখন নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়েই উপজেলা জুড়ে পরিচিত। সৎ, সাহসী রাজনীতিবীদ হিসেবে সর্ব মহলেই রয়েছে ব্যাপক সুনাম। তাঁর হাতধরেই অনেক নেতাকর্মী রাজনীতিবীদ থেকে হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। ২০১৫ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বদ্বী ছিলেন ফারুক। তখন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আশফাক আহমদ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমানসহ জেলা নেতৃবৃন্দ ফারুক আহমদকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের ত্যাগী নির্যাতিত নেতা ফারুক আহমদকে আওয়ামীলীগ ১৫ দিনের মধ্যে মূল্যায়ন করবে কিন্তু সেই কথার বাস্তবায়ন করেননি তাঁরা। এতে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তারা আক্ষেপ করে বলে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় ত্যাগীদের অবমুল্যায়নের রাজনীতি। জকিগঞ্জ আওয়ামীলীগে এখন সুবিধাবাদীদের জয়জয়কার। দলের কতিপয় নেতার ছত্রছায়ায় থেকে সুবিধাভোগী চক্র এখন দারুন ত্যাগী বনেগেছে। তাদের কারণে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলের নির্যাতিত ও সহায় সম্পত্তি হারানো নেতারা নিষ্ক্রিয় হওয়া ছাড়া অন্য পথ নেই। ফারুক আহমদের মত দুর্দিনের কান্ডারীদেরকে আওয়ামীলীগে মূল্যায়ন করার খুবই প্রয়োজন।

জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, ফারুক আহমদ দলের কঠিন সময়ের ত্যাগী নেতা। দলের স্বার্থে নিজের সহায় সম্পত্তি শেষ করে দিয়েছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ পর্যন্ত রয়েছে তাঁর ত্যাগের ইতিহাস। উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ পদপদবী দিয়ে তাঁর ত্যাগের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

এ নিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ বলেন, ৯৬ সালের একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে বিষ্ফোরক মামলার আসামী হয়ে যৌবনের ৫টি বছর কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে অনেক কষ্টে কাটাতে হয়েছে। সেই স্মৃতি মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি। শিক্ষা জীবনে দলের জন্য জেলে গিয়ে বাবা মায়ের লালিত স্বপ্নের ইতি ঘটিয়েছি। পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে দুঃসময়ে রাজনীতি ও মামলার খরচ বহন করে এখন অনেকটা নিঃস্ব হয়েছি। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আবারো জেলহাজতে যেতে হয়েছে। আজ পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষলে আক্ষেপ লাগে মনে। বঙ্গবন্ধুর আর্দশ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে কিন্তু সুবিধাবাদী রাজনীতিবীদদের কারণে দল ক্ষমতায় থাকার পরও নানা হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। ত্যাগের বিনিময়ে সইতে হচ্ছে শুধু বঞ্চনা-লাঞ্ছনা। দলীয় পদপদবীতে আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। সুবিধাভোগী নেতারা আমাকে সুসময়ে মূল্যায়ন না করলেও আমি জাতির পিতার আর্দশকে বুকে লালন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল মিশন বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর