ছাত্রলীগ নেতা সাহেদকে খুঁজছে জকিগঞ্জ থানা, লিমন হত্যা মামলায় উত্তেজনা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেটের জকিগঞ্জে আলোচিত লিমন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পৌরসভার কেছরী গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে সাহেদ আহমদ (২০) এখনও পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। মামলার এজাহারভুক্ত ৬ নম্বর আসামি সাহেদকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নেয়। তখন সারাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, দাঙ্গা ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ আগস্ট বিকেলে জকিগঞ্জ পৌর শহরে বিএনপি ও জামাতপন্থী নেতাকর্মীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালায়। ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এ সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হন। তাদের মধ্যে কেছরী গ্রামের তরুণ লিমন আহমদ মারাত্মকভাবে আহত হলে স্থানীয়রা তাকে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পরে নিহত লিমনের ভাই জাফর আহমদ বাদী হয়ে ১৫ আগস্ট জকিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছাত্রলীগের নেতা সাহেদ আহমদসহ ২১ জনকে নাম উল্লেখ করে আরও ২৫-৩০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “মামলার পরপরই আমরা ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছি। তবে মামলার অন্যতম আসামি ও পৌর ছাত্রলীগের কর্মী সাহেদ আহমদ এখনও পলাতক। তাকে ধরতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে এবং দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে।”

অন্যদিকে মামলার বাদী জাফর আহমদ অভিযোগ করে বলেন, “আমার ভাই লিমন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সাহেদ আহমদ। সে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি—যত দ্রুত সম্ভব সাহেদসহ সব আসামিকে গ্রেফতার করতে হবে।”

তবে সাহেদের পরিবার দাবি করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ কারণে সাহেদ আত্মগোপনে আছে। পরিবার আশঙ্কা করছে, সে গ্রেফতার হলে প্রতিপক্ষ মব জাস্টিসের শিকার করতে পারে।

সাহেদের মা মিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। প্রাণ ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার ছেলে বাড়িতে না থাকায় মামলার বাদী পক্ষ আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আমার সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমি গভীর উদ্বেগে আছি।”

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লিমন হত্যা মামলা বর্তমানে জকিগঞ্জে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। একদিকে নিহতের পরিবার দ্রুত বিচার দাবি করছে, অন্যদিকে আসামিপক্ষ বলছে ছাত্রলীগের কর্মী সাহেদকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ফাঁসানো হয়েছে।

নাগরিক সমাজ মনে করছে, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো কিংবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হয়রানি করা যাবে না।”

 

 

http://ছাত্রলীগ নেতা সাহেদকে খুঁজছে জকিগঞ্জ থানা, লিমন হত্যা মামলায় উত্তেজনা বাড়ছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর