আল হাছিব তাপাদার:: জকিগঞ্জের ভোটারদের সামনে ১৮ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে উপজেলার জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। শেষ সময়ে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় ভোটাররা আগের মত তেমন সাড়া দিচ্ছেন না বলে অনেক প্রার্থীই জানান। সৃষ্টি হয়নি নির্বাচনী উত্তাপ। ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অতীতের মত তৎপরতা ও আগ্রহ নেই। প্রচার প্রচারণা জৌলুস হারিয়েছে। ভোটের আমেজহীন হাট বাজার। বিভিন্ন এলাকায় এখনো টাঙ্গানো হয়নি কোন কোন প্রার্থীর পোস্টার। এর কারণ হিসেবে নাগরিক সমাজের দৃষ্টিতে শক্তিশালী প্রার্থীর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত দূর্বল প্রার্থী অন্যতম কারণ।
নদী ভাঙনের হুমকিতে থাকা সীমান্তের এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ৪ প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান (পুুরুষ) পদে ৭ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে ৪ জন। প্রতীক বরাদ্দের পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী নৌকা প্রতীকে, সিলেট জেলা যুবসংহতির সভাপতি মরতুজা আহমদ চৌধুরী লাঙ্গল প্রতীকে, ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সামাদ মিনার প্রতীকে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শুয়েব লস্কর আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উড়োজাহাজ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, বই প্রতীকে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, চশমা প্রতীকে সিলেট মহানগর আল ইসলাহর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সবুর, মাইক প্রতীকে উপজেলা শ্রমিকলীগের নির্বাহী সভাপতি সজল কুমার সিংহ, তালা প্রতীকে জকিগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুহেল, বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে যুবলীগ নেতা শামীম হোসেন, টিউবওয়েল প্রতীকে ছাত্রদল নেতা ফজলে আশরাফ মান্না প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদিকা মাজেদা রওশন শ্যামলী (কলসি), উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ইয়াহিয়া বেগম (হাঁস), উপজেলা আওয়ামীলীগ নেত্রী রুশনা বেগম রফা (প্রজাপ্রতি) ও বিএনপি সমর্থক সুলতানা বেগম (ফুটবল) প্রতীক লড়ছেন।
উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, লোকসমাগম হয় এমন স্থানে প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার টাঙানো হয়েছে। কোন কোন এলাকায় কোন প্রার্থীরই পোস্টার ব্যানার নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রাম্য হাট-বাজারগুলোতেও নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা নেই।
বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর নৌকা প্রতীকের বিপরীতে থাকা অন্য ৩ প্রার্থীই অপেক্ষাকৃত দূর্বল। ভোটের আগের ভোটেই অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী। শক্তিশালী প্রার্থী লোকমান চৌধুরীর সাথে ভোটের মাঠে টক্কর দিতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন আরেক চৌধুরী মরতুজা আহমদ। তিনি লাঙল প্রতীক নিয়ে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিজয়রে স্বপ্ন দেখছেন। তাদের ধারণা আওয়ামীলীগের প্রার্থী লোকমান চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত মরতুজা নিরবে ভোট বিপ্লব ঘটাবেন। তবে শেষ সময়ে নৌকার পক্ষে সর্বদলীয় সভা শুরু হয়েছে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সর্বদলীয় ভোটে লোকমান উদ্দিন নির্বাচিত হবেন এমনটাই তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদের ধারণা।
মরতুজা চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীরা জানান, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থীকে পরাজিত করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। এবারো জাতীয় পার্টির ভোট ব্যাংকে কাজে লাগিয়ে মরতুজা চৌধুরী নির্বাচিত হবেন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির কর্মী সমর্থকদের এমন কল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, উন্নয়নের জন্য ভোটারগণ আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। জাতীয় পার্টির একটি অংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে মাঠে রয়েছে। নৌকা প্রতীকে সর্বদলীয় ভোট পড়বে। আওয়ামীলীগের প্রার্থী লোকমান চৌধুরী বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ¦ হাফিজ আহমদ মজুমদারের একান্তজন হওয়ায় উন্নয়নের জন্য তাকেই বেছে নেবে ভোটাররা। সাধারণ মানুষ বিগত সময়ে স্্েরাতের বিপরীতে ভোট দিয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এবার আর অতীতের মত ভূল করবেনা। বিগত সময়ের ভূলকে সুধরাতে ও উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এবার নৌকা মার্কায় ভোট দেবে জনগন।
উত্তাপহীন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলেন, চেয়ারম্যান পদের ভোটে আমেজ না থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও নারী পদের প্রার্থীদের নিয়ে কিছুটা উৎসাহ রয়েছে। এলাকার টান, দলীয় ও গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়বে ভাইস চেয়ারম্যান পদের ভোটে। শেষ পর্যন্ত নানা হিসেব মিলিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা পদে ভোট দিতে ভোটাররা তৎপর হতে পারেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক গণসংযোগ করে ভোটারদেরকে পক্ষে আনতে কৌশলী অবস্থানে আছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান পদের ভোটে শেষ পর্যন্ত নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকের মধ্যে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের ধারনা।
ভরন এলাকার দিনমজুর খালিক মিয়া বলেন, আগের মত এখন আর ভোটের উৎসব নেই। চেয়ারম্যান পদে শক্তিশালী কয়েকজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থাকলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠে। চেয়ারম্যান পদে শক্তিশালী প্রার্থীর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত দূর্বল প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণে ভোটের আমেজ নেই। ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তৎপরতার কারণে নির্বাচনের বাতাস কিছুটা আছে।
পৌর এলাকার গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বলেন, শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে আনন্দের পরিবেশ হয়। এবার তা নেই। চেয়ারম্যান পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সব চাইতে জনপ্রিয় প্রার্থী। ভোটের আগেই ভোটাররা ফলাফল কি হবে তা অনুমান করে নিয়েছে। এ কারণে নির্বাচনী হিসেব নিকেশ নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই সাধারণ ভোটারদের।
রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও বিএনপি প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদার ভোটের মাঠে থাকায় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠেছিলো। সাথে ছিলেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীও। কিন্তু এবার সেরকম পরিবেশ নেই। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার নির্বাচনে অংশ নেননি। চেয়ারম্যান পদে ৪ প্রার্থীর মধ্যে তিন প্রার্থীই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্বল। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পেছনে নেই বিদ্রোহী। এ কারণে ঝড় ছাড়াই ঘাট পার হবেন নৌকার মাঝি লোকমান চৌধুরী।
এদিকে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিস্কার হয়েছেন উপজেলা মহিলা দলের সভানেত্রী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া বেগম ও পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ফজলে আশরাফ মান্না। সম্প্রতি সময়ে বিএনপি থেকে এ দুজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। তারা দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করায় বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলে অনেকটা ক্ষোভও বিরাজ করছে। ভোট গ্রহণের আগে হলেও তারা ভোট থেকে সরে দাড়াঁতে নেতাকর্মীরা আহবান জানিয়েছেন।
Leave a Reply