নিজস্ব প্রতিবেদক::
জকিগঞ্জে প্রভাবশালীদের হুমকিতে হিন্দু মৎস্যজীবি পরিবার এলাকা ছেড়ে অনিরাপত্তায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কাজলাসার ইউপির পশ্চিম গোটারগ্রামের সঞ্জিত দাস এমন অভিযোগ করে জানান, চৌধুরী বাজারে কুলনদীর অভয়াশ্রমের সীমানার বাইরে থেকে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্য ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম, আব্দুল আহাদ, মোস্তাফিজ, সেলিম আহমদসহ স্থানীয় কয়েকজন লোকের হুমকির কারণে আমরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের নিরাপত্তা নেই। কুলনদীতে মাছ ধরতে হলে তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়। আমরা চাঁদা না দেয়ায় এলাকা ছেড়ে চলে যেতে তারা আমাদের হুমকি দিয়েছে। তাদের হুমকির পরও এলাকা ছেড়ে না যাওয়ায় মঙ্গলবার ইউপি সদস্য ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম, আব্দুল আহাদ, ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজ, সেলিম আহমদসহ স্থানীয় কয়েকজন লোক আমাকে ও সোনারাম দাসের ছেলে দিপু রাম দাস (৩৫), দিপু রামের মামা নিপেন্দ্র রাম দাস (৪৮) কে কাজলসার ইউপি অফিসে ধরে নিয়ে যান। পরে ইউপি চেয়ারম্যান জুলকার নাইন লস্কর ও ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম মারধর করে ছেড়ে দেন।
পরে আমরা হাসপাতালে যাবার পথে আবারো তারা দিপু রামকে আটক করে মারধরের ঘটনাকে আপোষে সমাধান করা কথা বলে কাজলসার ইউপি অফিসে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নাহিদুল করিম। পরে তিনি আব্দুস সালাম মেম্বারসহ অন্যদের মৌখিক অভিযোগ শুনে দিপু রাম দাসকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
এদিকে দিপু রাম দাস কারগারে যাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে বাড়ীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দিপু বিশ্বাসের স্ত্রী স্মৃতি রানী দাস অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে মারধর করে অভয়াশ্রম থেকে মাছ চুরির কথিত অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আমরা প্রভাবশালীদের ষড়যন্ত্রের শিকার। মঙ্গলবার রাতে আমার বাড়ীতে প্রভাবশালীরা হামলা করেছে। তারা হুমকি দিয়েছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে।
অন্যদিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের এ বিচারকে প্রহসনের বিচার আখ্যা দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন ও ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মোত্তালিব বলেন, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতিকে কথিত অভিযোগে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। রাতে তাদের বাড়ী ঘরে হামলার খবর শুনেছি। যা মোটেও কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবসা নেয়া জরুরী।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নাহিদুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মোবাইল কোর্ট আইনে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানতে তিনি মৎস্য অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু তাহের চৌধুরী বলেন, সরকার অভয়াশ্রমকে খুব বেশী গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে। অভয়াশ্রমকে রক্ষা করতে স্থানীয়ভাবে একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটি অভয়াশ্রমকে দেখাশুনা করেন। যারা অভয়াশ্রমকে দেখাশুনা করেন তারা অভয়াশ্রম থেকে মাছ ধরার অভিযোগে একজনকে আটক করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে অবগত করলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আটক ব্যক্তিকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান জুলকার নাইন লস্কর বলেন, অভয়াশ্রমের মাছ ধরার অভিযোগে দিপু রামকে আটক করে ইউপি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তার সাথে মাছ পাওয়া যায়নি। ইউপি অফিসে দিপু রামসহ কাউকে মারধর করা হয়নি। আটক করে শুধু উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের হাতে সোর্পদ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আব্দুস সালাম বলেন, দিপু রাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক অভয়াশ্রম থেকে চুরি করে মাছ ধরতো। মঙ্গলবারও মাছ ধরার চেষ্ঠা করেছিলো। এমন অভিযোগে দিপু রাম বিশ্বাসকে আটক করে কাজলসার ইউপি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দিপুর মামা নিপেন্দ্র রাম দাস ইউপি অফিসে গিয়ে চেয়াম্যান সাবের সাথে অসদ আচরন করলে চেয়াম্যান সাব দিপু রামের মামাকে একটি মাত্র তাপ্পড় দিয়েছেন। এ ছাড়া আর কোন মারধর করা হয়নি। মাছ চুরির ঘটনাকে আড়াল করতে বাড়ীতে হামলার ঘটনা বলা হচ্ছে।
সাবেক মেম্বার আব্দুল আহাদ জানান, দিপু রাম বিশ্বাস অভয়াশ্রম থেকে প্রায় সময় চুরি করে মাছ ধরতো। এমন অভিযোগে মঙ্গলবার আটক করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে তাকে সোর্পদ করা হয়েছে। তার বাড়ীতে হামলা ও মারধরের ঘটনা সাজানো হয়েছে। তবে তাকে মাছ ধরার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
Leave a Reply