বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার মাঠে কোনও কর্মসূচি থাকবে না আওয়ামী লীগের। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলটির সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনেরও নেই কোনও রাজনৈতিক তৎপরতা। তবে, দিনভর দলীয় কার্যালয়ে সতর্কভাবে অবস্থান করবেন ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর শাখা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে কোনও কর্মসূচি না দেওয়ার পাশাপাশি সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, রায়কে কেন্দ্র করে কোনও বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোর হস্তে দমন করবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত। দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজর ৬৭১ টাকার দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ৬ জন আসামি রয়েছেন। আদালতে মামলার শুনানি শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা প্রত্যাশা করছেন, ছয় আসামির সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। এদিকে, নির্দোষ দাবি করে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন বলে আশা করছেন, তার আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত রাজপথে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা করতে পারে। এ অবস্থায় মাঠে নামলে ওই বিশৃঙ্খলার দায় তারা আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে মহল বিশেষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ আনতে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে তারা ৮ ফেব্রুয়ারি রাজপথে কোনও কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলটির নেতারা জানান, বিষয়টি আইন-আদালতের। রায় আসবে আদালত থেকে। আর ওই রায়কে কেন্দ্র করে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়, তা মোকাবিলার দায়িত্ব সরকারের। কাজেই সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার রায়ের আগে-পরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর শাখা ও সহযোগী সংগঠনে সঙ্গে যৌথসভা করেছে। ওই সভায় বৃহস্পতিবার কোনও কর্মসূচি না দিয়ে নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। ওই সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা এখন ক্ষমতায় আছি। গায়ে পড়ে আমরা কেন দেশে অশান্তি ডেকে আনবো? তারা যদি উসকানি দেয়, হাইকোর্টের সামনে প্রিজনভ্যানে হামলা চালানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সহযোগিতা করবেন।
এর আগে রবিবার যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় দেবেন আদালত। এ রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা বিএনপির ফাঁদে পা দেবো না। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনও কর্মসূচির প্রয়োজন নেই।’
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা পাল্টা কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি না। কারও সঙ্গে কোনও পাল্টা কর্মসূচি দেবোও না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা ঠাণ্ডা মাথায় যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করবো।’
মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘রায়ের দিন বিএনপি রাস্তায় কোনও ধরনের নৈরাজ্য করলে, বিশৃঙ্খলা করলে, তা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নামবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করা প্রয়োজন, তাই করবে। আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মী রাস্তায় নামবেন না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. ফারুক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকার কোনও কারণ নেই। রায়কে কেন্দ্র করে কোনও নৈরাজ্য বা উত্তেজনার সৃষ্টি হলে সেটা সরকার দেখবে। নাশকতা মোকাবিলার জন্য সরকারের পুলিশ বাহিনী রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য যা করণীয়, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের দলীয়ভাবে কোনও কর্মসূচি নেই। তবে, আমরা মহানগরের নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর থানা-ওয়ার্ড কার্যালয়ে সতর্কভাবে অবস্থান করবো। কোথাও কোনও নৈরাজ্য দেখলে নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবো।’
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘আমরা যারা সহযোগী সংগঠন রয়েছি, তাদের সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
খালেদা জিয়ার রায়কে নিয়ে কেউ উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে মন্তব্য করে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস নৈরাজ্য তৈরি করতে চায়। রায়ের তারিখ ঘোষণার পর থেকে দেখছি বিএনপি নিরবচ্ছিন্নভাবে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চলছে। তাদের কর্মকাণ্ডে তারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় কিনা, জনমনে সেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের উসকানিতে পা দেবো না। সতর্ক অবস্থানে থাকবো।’
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগও একই ধরনের মন্তব্য করেন। বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের কোনও কর্মসূচি নেই। তবে, কেউ ষড়যন্ত্র ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে চাইলে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবো।’
Leave a Reply