সভা-সমাবেশ বা কালো পতাকা মিছিলের মতো কর্মসূচির বাইরে গিয়ে আগামী ‘৫ জানুয়ারি’ নতুন আঙ্গিকে পালন করতে চায় বিএনপি। এই ‘নতুন কিছু’তে জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে পোস্টার-লিফলেট প্রকাশসহ উচ্চপর্যায়ের সংবাদ সম্মেলন করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। যদিও শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত কর্মসূচিই চূড়ান্ত করা হয়নি। এমন তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি। এরপর ২০১৬ সালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিবসটিকে উপজীব্য করে সমাবেশ করলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি। ফলে, আগামী ২০১৮ সালের ৫ জানুয়ারি সমাবেশ করা নিয়ে দলের ভেতরে উৎকণ্ঠা রয়েছে। বিশেষ করে নতুন বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা থাকায় বছরের শুরুতেই রাজপথে নামতে দেওয়ার অনুমতি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিএনপির।
বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি ভিন্ন আঙ্গিকে করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে বিএনপির। এক্ষেত্রে সভা-সমাবেশ বা কালো পতাকা মিছিল শুধু দলীয় নেতাকর্মী-নির্ভর হবে–এমন চিন্তাকে সামনে রেখে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির নীতি-নির্ধারকদের। এক্ষেত্রে ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণামূলক পোস্টার করা হবে সারা দেশে।
শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ পোস্টারের ডিজাইন চূড়ান্ত করে ছাপাখানায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন ছাপার কাজ চলছে। এছাড়া ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন বলেও জানিয়েছেন এই নেতারা।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৫ জানুয়ারির প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছুই জানি না। বলতে পারবো না। এটা মহাসচিব বা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জানতে পারেন।’
পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচি কী হবে, এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়নি ৫ জানুয়ারি কী হবে।’ খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন হবে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়নি।’
দলটির চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। জনগণ গ্রহণ করবে, এমন কার্যক্রমই হাতে নেওয়া হবে। সংঘর্ষের বাইরে গিয়ে ইতিবাচক কর্মসূচি দেওয়া। এই সূত্রটির ভাষ্য, সভা-সমাবেশ হবে না। লিফলেট-পোস্টার হতে পারে। চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলন করবেন। আর এই প্রোগ্রাম ৫ জানুয়ারির দিনই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে দাবি করে সূত্রটি।
পোস্টারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সূত্রটির তথ্য, দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি ও লুটপাটের প্রতিবাদ করে পোস্টার হতে পারে।
বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, পোস্টার ছাপার কাজ চলছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই বেরোতে পারে।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাজাহান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘পোস্টার এখনও হাতে পাইনি। হয়তো দুই/একদিনের মধ্যে পাব।’
আগামী ৫ জানুয়ারিতে রাজপথে কর্মসূচির অনিশ্চয়তা রয়েছে বিএনপিতে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এদিন কর্মসূচি ডেকেছে। গত কয়েক বছরও বিএনপির ৫ জানুয়ারিসহ অন্য অনেক দিনেই সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, যেসব সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি সেগুলো হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মানববন্ধন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর সাদেক হোসেন খোকার বাড়ি বাতিলের প্রতিবাদে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে, একই বছরের ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সমাবেশ করতে ৭, ৮ ও ১৩ নভেম্বর অনুমতি চাইলেও প্রশাসন সাড়া দেয়নি। এছাড়া ২০১৪ সালের ১৪ মে, একই বছরের ২২ মে গুম-খুনের প্রতিবাদে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি।
সবশেষে ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে সমাবেশ করতে ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী বা নয়া পল্টন চাইলেও প্রশাসনের সাড়া পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply