জকিগঞ্জ সিনিয়র মাদ্রাসায় ফাজিল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৯ হতে ২০১৯ পর্যন্ত ফাজিল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার মাদ্রাসার হলরুমে মাদ্রাসা গভর্ণিংবডির সভাপতি আল্লামা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীর সভাপতিত্বে ও প্রভাষক রফিকুল ইসলাম এবং সহকারী মৌলভী মাওলানা মো. কায়েস মাহমুদ চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্টিত হয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শায়খুল হাদিস আল্লামা মো. হবিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমী ও সিলেট প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী। মাদ্রাসা গভর্ণিংবডির পক্ষে বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালিক, সাবেক শিক্ষকবৃন্দের পক্ষে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মুশাহিদ আহমদ কামালী।

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুর রহিম, হবিবপুর-কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুল হাকিম, জকিগঞ্জ উপজেলা আনজুমানে আল ইসলাহ সভাপতি সুপার মাওলানা মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী, উপজেলা দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সুপার মাওলানা মো. আব্দুছ ছবুর। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আব্দুস সবুর।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ করে শিক্ষার্থী মারুফ আহমদ, হামদ/না’ত, মার্সিয়া পাঠ করে মো. হিফজুর রহমান ও মো. তাউহিদুল ইসলাম শ্রাবন। এ সময় অতিথিবৃন্দকে ক্রেস্ট তুলে দেন মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ। অনুষ্ঠানে ফাজিল উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি স্মারকের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। অনুষ্টানে মাদ্রাসা গভর্ণিংবডির দায়িত্বশীলবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকার সমাজসেবীগণ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য দিয়েছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শায়খুল হাদিস আল্লামা মো. হবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষালাভের দুইটি মহান উদ্দেশ্য রয়েছে একটি হলো নিজের পূর্ণতা লাভ করা এবং মানবতার জন্য যে সমস্ত আমল আখলাক জ্ঞান বিশ্বাসের প্রয়োজন সেগুলো আজীবন চেষ্ঠা করে অর্জন করা। অন্যটি হলো মানুষজনকে পথ দেখানো। কেবল শুধু ওয়াজ নসিহত করে নয়, নিজেদের আমল, আচার, আচরণ দ্বারা মানুষকে সঠিকভাবে পথ দেখাতে হবে। যাতে মানুষ সঠিক পথ খুঁজে পায়। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজকে যারা বিদায় নিচ্ছেন আসলে তাদের বিদায় নয়। তারা দ্বীন ইসলাম ও এই মাদ্রাসার প্রশস্তভাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপর এই মাদ্রাসার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সবাই যেন এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আল্লামা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যে কয়েকটি মাদ্রাসা এগিয়ে গেছে তার মধ্য অন্যতম জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসার অনেক ছাত্র আজ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এ জন্য আমরা গর্বিত। মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করে মাদ্রাসাকে আজ এ অবস্থানে আনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। তিনি যে অবদান রেখেছেন তার বদলা দুনিয়া এবং আখেরাতে পাবেন।

তিনি আরও বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা একজন মানুষকে প্রকৃত প্রজ্ঞাবান করে তুলে। এখন বেশীরভাগ মানুষ ইসলাম নিয়ে ভাবেনা। দুনিয়া নিয়ে মত্ত নিয়ে মত্ত হয়ে পড়েছেন। আখেরাতকে ভূলে গেছেন। প্রত্যক মানুষের আচরনসহ সকল বিষয়ের উপর ইসলাম ধর্মে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সবার উচিত ধর্মীয় নির্দেশনাকে মেনে চলা। সৃষ্টিগত দিক দিয়ে মানুষ খুবই সম্মানি। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষকে যথাযথ জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেন। প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর বন্দেগি নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। ব্যাতিত অন্তর দিয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলে আল্লাহ সকলের দোয়া শুনেন। দুনিয়ায় সকলের কর্তব্য আল্লাহর বন্দেগি করা।

ফ্রান্স ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, সমগ্র মানব ও জ্বীন জাতি একত্রিত করলেও মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর কোন ভূল করা সম্ভব হবেনা। তাই কেয়ামত পর্যন্ত হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করতে পারবেনা। এরপরও যারা মহানবী নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী বলেন, আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের কারণেই জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যার কারণেই আজ অত্র এলাকা আলোকিত হয়েছে। এই মাদ্রাসার কোন শিক্ষার্থী আজ পর্যন্ত অপরাধে জড়িত নেই। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আমাদের গৌরব। নৈতিক শিক্ষা অর্জনের জন্য মাদ্রাসায় লেখাপড়ার গুরুত্ব খুব বেশী। কোন মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া নৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া সকলের দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর