যুদ্ধাপরাধ সমর্থকদের রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না

মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে তাদের গণতন্ত্রের নামে রাজনীতি করতে দেওয়া যাবে না। কারণ, দেশের স্বার্থে গণহত্যাকারীদের বিচার সবচেয়ে জরুরি। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি রাজনীতি করে। দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ এখনো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের চেতনা ও বর্বরতাকে সমর্থন করে।

গতকাল শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক গবেষণা কেন্দ  আয়োজিত ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার শুরু হয়েছে। এর উদ্বোধনী পর্বে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা এ সময় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনী পর্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা দুুই ব্যক্তিত্ব- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী টমাস এ ডাইন ও ভারতের সাংবাদিক ও লেখক হিরন্ময় কার্লেকার। গবেষণা কেন্দে র ট্রাস্টি সভাপতি মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, স্বাগত বক্তব্য রাখেন কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক।

ড. গওহর রিজভী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট ছকভিত্তিক গবেষণা চলমান রাখতে হবে। গণহত্যা নিয়ে অনেক অপপ্রচার হয়েছে। পাকিস্তান বারবার তাদের পরিচালিত এ গণহত্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু এ গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্ববাসী জেনেছে। টমাস এ ডাইন বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা আমি দেখেছি। সেই সময় আমি দিল্লীতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করছি। আগ্রহের শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের রাজনীতি। তখন নিক্সন-কিসিঞ্জারের সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির যোগাযোগ আমাকে ভীষণভাবে অবাক করেছিল। টমাস আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। সেই বাংলাদেশ আজ মিয়ানমারের শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছে।

হিরন্ময় কার্লেকার বলেন, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার জন্য পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ক্ষমা চায়নি। উল্টো দেশটি গণহত্যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি আর্মি ও তাদের দোসরদের যথোপযুক্ত শাস্তি হয়নি বলে তারা এখনো সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই জঘন্য অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। শাহরিয়ার কবির বলেন, ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে তার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় না বলেই এখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীও গণহত্যা চালানোর সাহস দেখাচ্ছে।

মুনতাসীর মামুন বলেন, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। যুদ্ধাপরাধীরা ’৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের মনোজগতে যে আধিপত্য বিস্তার করেছে তাতে গণহত্যা বিষয়ক গবেষণা খুবই প্রয়োজনীয়। সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, একাত্তরে যারা গণহত্যা পরিচালনা করেছে তারা অনেক সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তাদের আর কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

উদ্বোধনী পর্বের পরে প্রথম অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ও বিডিনিউজের রিপোর্টার জয়ন্ত কুমার সাহা/রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, ভারতের ব্রিগেডিয়ার (অব.) আর পি সিং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী টমাস এ ডাইন প্রমুখ।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিরা মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার কথা আরো একবার মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলন থেকে তিনি যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দিয়ে সেই আন্দোলন শেষ করেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।

পরে বিকালে দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান বক্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ভারতের সাংবাদিক ও লেখক হিরন্ময় কার্লেকার, ইংল্যান্ডের সমাজকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ভারতের সাংবাদিক মানস ঘোষ ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। আজ রবিবার দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে দুটি অধিবেশন। এ অধিবেশনে অংশ নেবেন মিশর, কম্বোডিয়া, ইংল্যান্ড,  যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর