আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ‘মহাজোটে’ নেওয়া হবে সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদাকে। তবে সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীকে ওই জোটে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর তিন এবং সম্পাদকমণ্ডলীর চার সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তবে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় কাদের সিদ্দিকী এবং আওয়ামী লীগের নেতারা কেউই ঐক্যের সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘তৃণমূল বিএনপি’র চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে গুলশান এলাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে ১৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে কাদের সিদ্দিকীর উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কড়া সমালোচক কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল কিংবা নির্বাচনকালীন জোট বা মহাজোটে যোগ দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কোনো জোটে কাদের সিদ্দিকীর যোগদানের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। উনি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যখন ৭ই মার্চের ভাষণ দেন তখন উপস্থিত ছিলেন সে জন্য হয়তো নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। ’
নির্বাচনের আগে কাদের সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের সঙ্গে ঐক্য হতেই পারে।
’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী একজন বড় মুক্তিযোদ্ধা। সে জন্য হয়তো তিনি নাগরিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। তবে তাঁকে জোটে নেওয়ার বিষয়ে এখনো আওয়ামী লীগে কোনো আলোচনা নেই। ’ তিনি বলেন, ‘এখন আমরা মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের জরিপ চালাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের নির্বাচনী জোট কাদের নিয়ে করব, কাদের কত আসন ছেড়ে দেব, সেগুলো নিয়েও আলোচনা চলছে। আগামীতে এগুলো নিয়ে আরো আলোচনা হবে। কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। ’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী সাহেব তো নেত্রী (শেখ হাসিনা) আর আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমালোচক। তাঁর তো বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। এখন হয়তো কোনো হিসাব-নিকাশ করে আমাদের দিকে আসতে চাইছেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক-দুজন নেতার সঙ্গে তাঁর ভালো যোগাযোগও আছে বলে জানি। তবে তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। ’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে উপস্থিতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে যোগদানের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেছি ৭ই মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এ জন্য। এটা আমাদের সমগ্র বাঙালি জাতির অর্জন। এটি সমগ্র বাঙালির অহংকার, সম্পদ। আমি এটা ধারণ করেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছি, নির্বাচন করতে যাইনি। ’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা নাকচ না করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি, একটি সুস্থ ধারার রাজনীতির জন্য চেষ্টা করছি। যতক্ষণ থাকব সেই চেষ্টা করব। ’ জোট গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে সম্ভাবনা নাই, এমন কোনো কথাই নাই। সেটা এখন প্রশ্ন নয়। এটা সময়ই বলবে। ’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী সাহেব বিভিন্ন সময় আমাদের সমালোচনা করলেও নাগরিক সমাবেশে তাঁর যোগদান ইতিবাচক। ’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোট গঠনের বিষয়ে কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। দুই ধরনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে নির্বাচনী জোটের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে ১৪ দল, জাতীয় পার্টিসহ আরো কয়েকটি ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে মহাজোট গঠন করা হবে। ওই মহাজোটে নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি, ইসলামী ফ্রন্টসহ আরো কয়েকটি দলকে দেখা যেতে পারে। বিএনপি অংশ না নিলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তখন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ১৪ দলের বাইরে যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসনে প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ জন্য মহাজোট গঠন করে আমাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া মহাজোটের বাইরেও কোনো কোনো দলের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা হতে পারে। ’
নাজমুল হুদা এবং ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী ক্ষমতাসীন ১৪ দলে যোগ দিতে বিভিন্ন সময় জোরালো আগ্রহ দেখিয়েছেন। সে অনুযায়ী ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম চলতি বছরে জোটের একাধিক বৈঠকে বিষয়টি তোলেন। ১৪ দলের এক বৈঠকে অংশ নিয়ে ইসলামী ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা তাঁদের জোটে যোগদানের আগ্রহের কারণ এবং দলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। কিন্তু তাঁদের জোটে নিতে ১৪ দলের শরিকরা তীব্র আপত্তি জানানোয় বিষয়টি ঝুলে যায়।
তখন ১৪ দলের শরিকরা মত দেয়, আদর্শিক জোট ১৪ দলে তাদের না নিয়ে নির্বাচনকালীন জোট বা মহাজোটে নেওয়া হোক। এমন পরিস্থিতিতে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে নাজমুল হুদা ও সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীকে নির্বাচনকালীন জোটে নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন।
সূত্র : কালেরকন্ঠ
Leave a Reply