একের পর এক সাফল্য পাচ্ছিল মেয়েরা। এক বছরে তিন ফাইনাল খেলে দুটো ট্রফি জিতেছে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন। ভুটানে এবার রানার্সআপ। এরপর আবার অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে চ্যাম্পিয়ন। প্রতি আসরেই গোল উৎসবে মাতছে মারিয়া, স্বপ্না, মনিকা, আঁখিরা। যে দল অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছিল তাদের কিনা হঠাৎ ছন্দপতন। পুরুষ জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকলেও ফুটবলের আশার আলোটা জ্বালিয়ে রেখেছে মেয়েরাই। জয়ের ধারাবাহিকতা বের হয়ে মারিয়ারা এখন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন। ফুটবলে সব সময় জয় আসবে এমন ভাবাটাও ঠিক না। তবে বাংলাদেশের মেয়েরা যেভাবে প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসাচ্ছিল তাতে হোঁচট খাওয়াটা কিছুটা বিস্ময়ই বটে। কথা হচ্ছে হঠাৎ ছন্দপতন কেন? তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফ অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা ভালো করতে পারেননি। সত্যি বলতে কি গ্রুপে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়া থাকায় বাংলাদেশ অন্তত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না তা সবারই জানা ছিল। তবে টার্গেট ছিল বেস্ট রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখা।
সেই আশাও ভেস্তে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে প্রত্যাশিতভাবে ৭-০ গোলে হারে। অনূর্ধ্ব-১৪ বা ১৬ টুর্নামেন্টে চাইনিজ তাইপে বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায় না। অথচ তাজিকিস্তানে সেই চাইনিজ তাইপের কাছে ২-০ ব্যবধানে হার। টানা দুই ম্যাচ হেরে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়ায় শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। যাক একেবারে খালি হাতে আসর শেষ করেনি মারিয়ারা। স্বাগতিক তাজিকিস্তান ৫-১ উড়িয়ে সান্ত্বনার জয় পেয়েছে। হ্যাটট্রিক করেছেন মনিকা। পুরুষরা হলে সান্ত্বনার জয়ে সান্ত্বনা পাওয়া যেত। কিন্তু মেয়েদের কাছে সান্ত্বনার জয়ে কোনো মূল্য আছে। বরং ব্যর্থতাই বলা যায়। ব্যর্থতা বলে তো মেয়েদের আর দোষ দেওয়া যাবে না। খুঁজতে হবে হঠাৎ ছন্দপতনের কারণ। যদি বলা হয় বাফুফের দায়িত্বহীনতায় তাজিকিস্তানে এমনটি ঘটে তাহলে কী বাড়িয়ে বলা হবে? অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৮ বা ১৯। দেখা যাচ্ছে মেয়েদের একই দল খেলছে। গত এক বছরে মেয়েরা একের পর এক টুর্নামেন্ট খেলেই যাচ্ছে। অতিরিক্ত ম্যাচ খেলায় স্বাভাবিকভাবে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্রামও নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সাফল্যের পর মেয়েদের অনেক কিছুই প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু মেয়েদের ঘিরে তিনি কী কখনো পরিকল্পনার কথা ভেবেছেন। একই মেয়েরা একাধিক টুর্নামেন্ট খেলছে। বয়স ভাগ করে দল কি তৈরি করা যায় না। প্রশ্ন উঠতে পারে এত খেলোয়াড় কোথায়? যুক্তি সঠিক, কিন্তু নারী ফুটবলে প্রতিভা অন্বেষণে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে না কেন? বাংলাদেশের নারী ফুটবলে উত্থানের পেছনে কিন্তু বাফুফের অবদান নেই। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা স্কুল কিশোরী ফুটবল চালু হওয়ার পরই একঝাঁক সম্ভাবনাময় নারী ফুটবলারের দেখা মিলে। কলসিন্ধুর স্কুলের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাফুফে পরবর্তীতে এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলাচ্ছে। ফেডারেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খেলোয়াড় তৈরি হয়নি। তৈরি হওয়ার পথও খোলা আছে। তা বাফুফে কাজে লাগাচ্ছে না। মেয়েদের ফুটবলে এখন যে অবস্থা তাতে অনায়াসে লিগ চালু করা যায়। বিভিন্ন ক্লাব অবশ্যই এগিয়ে আসবে। এ থেকে সন্ধান মিলবে নতুন খেলোয়াড়ের। সালাউদ্দিন নিজেই বলেছিলেন করপোরেট লিগের কথা। কই সেই লিগেরও তো দেখা নেই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করা যেতে পারে। পরিকল্পনা নেই বলেই তো ছন্দপতন ঘটেছে। সাফ সাফল্য অবশ্য গর্বের। কিন্তু ফুটবলকে আরও এগুতে হলে যা করা দরকার তা কি ভাবছে বাফুফে।
Leave a Reply