ইরান-ইরাক সীমান্তে প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর এক শিশুকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়েছে। সারপোল-ই-জাহাব শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে গতকাল বুধবার ভোরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ব্রিটিশ অনলাইন ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে ইরানের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা গেছে, শিশুটি হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। অনেকেই শিশুটিকে উদ্ধারের ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ বলে অভিহিত করছেন। এ ঘটনা ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকার মানুষের মনোবল বাড়াতেও ভূমিকা রাখছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইরাক ও ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় গত রোববার রাতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৫৩০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাত হাজারের বেশি মানুষ। একটি সাহায্য সংস্থার দাবি, এই ভূমিকম্পের কারণে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ প্রদেশে নিহত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইরাক সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের সারপোল-ই-জাহাব শহরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূমিধসের কারণে সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা।
কুর্দিপ্রধান শহর সারপোল-ই-জাহাবে এখনো পুরোদমে উদ্ধারকাজ চলছে। ভূমিকম্পে শহরটি বড় অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলো ভেঙে পড়েছে। ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে খুব কম মানুষকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যেই গতকাল উদ্ধার হয় শিশুটি। উদ্ধার ও সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে, এই শহরে কম্বল, শিশুদের কাপড়, ওষুধ ও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে।
এদিকে ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের মানুষের সাহায্যার্থে দেশটির অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী ভারোত্তোলক কিয়ানোশ রুস্তামি নিজের পদক নিলামে তুলেছেন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে তিনি সোনার পদক জিতেছিলেন। গতকাল বুধবার ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে তিনি পদক নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমি কেরমানশাহ প্রদেশের সন্তান। আমি আমার পদক সেখানকার মানুষকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি পদকটি নিলামে তুলব।’
গত রোববারের ভূমিকম্পের পর থেকেই শক্তিশালী পরাঘাতের আশঙ্কায় আছেন উপদ্রুত এলাকার অধিবাসীরা। ওই ভূমিকম্পের পর থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৪০০টি পরাঘাত অনুভূত হয়েছে। ২০১২ সালের পর এটিই ইরানে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ইরানে গত বছর ১৬টি ও এ বছর ১৯টি ভূমিকম্প হয়েছে।
Leave a Reply