অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীদের গুলিতে পাঁচ বাঙালি দিনমজুর নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে জ্বলছে বিক্ষোভের আগুন। পালিত হচ্ছে বন্ধ। আসামে বাঙালি হত্যার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সন্দেহভাজনদের খোঁজে বিভিন্ন সীমান্তে চালানো হচ্ছে সেনা অভিযান।
ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) রাত ৮টা নাগাদ বিসনিমুখ গ্রামে প্রবেশ করে অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা। এরপর পাঁচ বাংলাভাষী দিনমজুরকে ঘর থেকে ডেকে বের করা হয় এবং তাদের ব্রহ্মপুত্রের তীরে নিয়ে গিয়ে গুলি করা হয়। হত্যাকারীরা সবাই সেনাবাহিনীর মতো পোশাক পরে ছিল বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহতদের মধ্যে শ্যামল বিশ্বাস (৬০), অনন্ত বিশ্বাস (১৮) ও অবিনাশ বিশ্বাস একই পরিবারের সদস্য। এছাড়া আরও দুই নিহত হলেন সুবল দাস (৬০) ও ধনঞ্জয় নমশূদ্র (২৩)। এরা সকলেই দিন মজুরের কাজ করতেন। এ হত্যাকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে বিদ্রোহী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (ইন্ডিপেনডেন্ট) তথা উলফাকে (আই) সন্দেহ করছে পুলিশ। অবশ্য, বিবৃতি দিয়ে এ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করেছে উলফা (আই)।
এমনিতেই নাগরিক তালিকা ইস্যুতে আসামে আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরমধ্যেই বৃহস্পতিবার আসামের তিনসুকিয়া জেলার ধোলা এলাকায় পাঁচ বাঙালি হত্যার শিকার হওয়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
আসামের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ১২ ঘণ্টার বন্ধ। রেল অবরোধ, সড়ক অবরোধে বিপর্যস্ত গোটা আসাম। সারা ভারত নমঃশূদ্র সমাজের পক্ষ থেকে সীমান্ত এলাকায় পিকেটিংয়ের ডাক দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন দুজন উলফা নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আসামের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই টুইট করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তিনি ডাক দিয়েছিলেন বিক্ষোভের। শুক্রবার রাজ্যের সর্বত্র বিক্ষোভে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস। দুপুরে যাদবপুর ৮-বি বাসস্ট্যান্ড থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল হওয়ার কথা। মিছিলের নেতৃত্বে থাকবেন যুব তৃণমূল সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নামবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল।
আসামে নাগরিক তালিকাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তার জেরেই এই হামলা কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। মমতার টুইটার পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘অসম থেকে ভয়ঙ্কর খবর এসেছে। এই নারকীয় হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করছি। শ্যামলাল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, অবিনাশ বিশ্বাস, সুবোধ দাসকে খুন করা হয়েছে। এটাই কী জাতীয় নাগরিকপঞ্জি করার সাম্প্রতিক উন্নয়ন?’
বৃহস্পতিবার রাতেই তিনসুকিয়ার খেরবাড়ি এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার রাতেই টুইট করে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে কড়া পদক্ষেপের কথা বলেছিলেন। শুক্রবার সকাল থেকেই আসাম-অরুণাচল এবং আসাম-মিয়ানমার সীমান্তে শুরু হয়েছে সেনা অভিযান। চলছে তল্লাশি। সমস্ত পয়েন্টে তল্লাশি করছে আসাম রাইফেলসের বিশেষ বাহিনী।
Leave a Reply