আল হাছিব তাপাদার:: সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সাবেক এমপি ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার বিজয়ী করতে শেষ সময়ে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হওয়ার আগে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা কানাইঘাটের সড়কের বাজার, জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ, মুন্সিবাজার, সোনাসার, শরিফগঞ্জ, বাবুর বাজার, থানাবাজার, রতনগঞ্জ, বিরশ্রী, খলাছড়া, জকিগঞ্জ শহরসহ সংসদীয় আসনের বিভিন্ন বাজারে নির্বাচনী সমাবেশ করে নৌকা মার্কার জোয়ারের জানান দিয়েছে।
এ সময় পৃথক পথসভায় বক্তব্য রাখেন, নৌকা মার্কার প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার, জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা হুসাম উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সাবেক ছাত্রনেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মোশতাক আহমেদ, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আব্দুল মোমিন চৌধুরী প্রমূখ। লক্ষ করা গেছে হাফিজ আহমদ মজুমদারের প্রতিটি পথ সভায় হাজারো জনতা যোগদান করে আন্তরিক ভালোবাসার প্রমান দিয়েছেন।
সীমান্তের এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছাড়াও ধানের শীষে লড়ছেন ২৩ দলীয় জোটের শরীক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুক। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মহাজোটের শরীক জাপার বর্তমান এমপি সেলিম উদ্দিন। সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামীলীগ নেতা ফয়জুল মুনির চৌধুরী, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরামের বাহার আল রাজী, মিনার প্রতীক নিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী এমএ মতিন চৌধুরীর, হারিকেন প্রতীকে মুসলিমলীগের শহীদ আহমদ চৌধুরী, হাতপাখা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নুরুল আমিন নির্বাচনে রয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ সুবাদে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিভিন্ন কারণে সাধারণ মানুষের কাছে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত পান। তৈরী করেন নিজস্ব একটি ভোট ব্যাংক। এবারের নির্বাচনে লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি আসনটি ধরে রাখতে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে তুলে ধরেছেন। তাঁর প্রতিটি পথসভায় অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। ব্যক্তি ইমেজ, উন্নয়ন কর্মকান্ড ও পার্টির ভোট ব্যাংককে পুঁজি করে বিজয়ী হতে শেষ চেষ্ঠায় আছেন সেলিম উদ্দিন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, আমার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে জনগন লাঙল মার্কায় গণরায় দিবেন। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের উন্নয়নের জন্য মানুষ আমাকে নির্বাচিত করবে। আমি যে এলাকায় গণসংযোগ করেছি সেখানে হাজারো জনতা আমাকে ভোট দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। লাঙল প্রতীকে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যালেটের মাধ্যমে তা প্রমাণ হবে। আমার ভোটের জোয়ার দেখে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সাধারণ জনতা সাথে আছে, আমি ভোটে আছি। কখনো ভোট থেকে সরবো না। ৩০ ডিসেম্বর বিজয়ের মালা পরবো।
নবম সংসদ নির্বাচনে হাফিজ মজুমদার ৩১ হাজার ৬শ ৩৫ভোটের ব্যবধানে চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেছিলেন। এবারো জামায়াতের ফরিদ চৌধুরী এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু বিএনপি এ আসনে জামায়াতের পরিবর্তে জমিয়তের হাতে তুলে দেয় ধানের শীষ। এতে প্রথম দিকে জামায়াত বেঁকে বসলেও শেষ সময়ে সমর্থন দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীকে। তবে সমর্থন দিলেও জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এখনো ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
ক্লিন ইমেজের হাফিজ মজুমদার সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। দুইবারের সাংসদ থাকাবস্থায় এলাকায় তিনি অনেক উন্নয়ন কাজ করেছেন। নির্বাচনী এলাকা জকিগঞ্জ-কানাইঘাট ছাড়াও পুরো সিলেটের শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাস্ট। অবহেলিত এলাকায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ‘সীমান্তের মশাল’ হিসেবে পরিচিতিও লাভ করেছেন। দলীয় মার্কা ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে হাফিজ আহমদ মজুমদারকে বিজয়ের মালা পরাতে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের আওয়ামীলীগ মাথা বেঁধে কাজ করছেন। মান অভিমান ভেঙ্গে এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, সাবেক ছাত্রনেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি মোশতাক আহমেদ, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আব্দুল মোমিন চৌধুরী ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করায় নৌকা পালে হাওয়া লেগেছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এ আসনে আল্লামা ফুলতলীর আঞ্জুমানে আল ইসলাহর কর্মী সমর্থকরা ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর। আল ইসলাহ আনুষ্ঠানিকভাবে হাফিজ মজুমদারকে সমর্থন দিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও নৌকাকে সমর্থন জানিয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। ‘উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই’ এই বক্তব্যকে ভোটার সামনে তুলে ধরে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরাা।
জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততায় হাফিজ মজুমদার অনন্য। উন্নয়নের স্বার্থেই জকিগঞ্জ-কানাইঘাটবাসী এবার নৌকাকে বিজয়ী করবে। নৌকা বিজয়ী হলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। ড. হাফিজ মজুমদার জনগনের কল্যাণে কাজ করেন। জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের উন্নয়নের জন্য এ বয়সে উনাকে আমরা প্রার্থী করেছি। জনগন ৩০ ডিসেম্বর হাফিজ আহমদ মজুমদারকে বিজয়ের মালা পরাতে প্রস্তুত রয়েছে।
অপরদিকে ধানের শীষের প্রার্থী উবায়দুল্লাহ ফারুক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে। ভোটের মাঠে তিনি নতুন খেলোয়াড় নয়। এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ না হলেও ইসলামপন্থী একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে তাঁর।
২০০৮ সালে ৮ম সংসদ নির্বাচনে খেজুর গাছ প্রতীক নিয়ে তিনি প্রতিদ্বন্ধিতা করে প্রায় ৯ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে উবায়দুল্লাহ ফারুকের সবচেয়ে বড় পুঁজি ধানের শীষ। ধানের শীষকে পুঁজি করেই এবার উবায়দুল্লাহ ফারুককে বিজয়ের মালা পরাতে চান নেতাকর্মীরা। প্রতীক পেয়ে প্রথম দিকে বিএনপির-ঐক্যফ্রন্ট নেতাকর্মীরা যে কয়েকটি শোডাউন করেছেন তাতে আলোচনায় চলে আসেন উবায়দুল্লাহ ফারুক।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার ও কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীসহ জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের বিএনপি, জমিয়ত নেতাকর্মীরা প্রতীককে গুরুত্ব দিয়ে বিজয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। তবে অভিযোগ আনা হচ্ছে, পুলিশি গ্রেফতার অভিযানের কারণে নেতাকর্মীরা আত্মগোপন করেছেন। ধানের শীষের বিজয়কে বানচাল করতে ষড়যন্ত্র চলছে।
জমিয়ত নেতা মাওলানা আব্দুশ শহীদের বরাতে ধানের শীষের প্রার্থী উবায়দুল্লাহ ফারুক জানিয়েছেন, হয়রানীর ভয়ে সাধারণ ভোটার ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামতে না পারলেও নিরবে বিপ্লব ঘটাবে। নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা বাকি এরমধ্যেও ‘বিনা কারণে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। প্রশাসনকে নিরপক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে তিনি আহবান জানিয়েছেন।
Leave a Reply