নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রচণ্ড গরম ও ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা এখন তুঙ্গে। এ নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতা অংশগ্রহণ না করলেও জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে আলোচনায় চলে এসেছেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধের সুযোগে সমর্থন আদায় করে নিয়েছেন দলটির বড় একটি অংশের।
মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রকাশ্যে জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানকে জনসভা করে সমর্থন দিয়েছেন। ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ এবং আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম চৌধুরী শিমুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তুতিউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু জাফর রায়হান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফ বখতিয়ার চৌধুরী খুররম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুনেদ আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল করিম, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল্লাহ আল আমিন সুমন, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সদস্য ফয়েজ আহমদ, উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম, উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক মখলিসুর রহমান মেখন, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল গফুর, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোওয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন লিমনসহ বিভিন্ন ইউপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন ও বক্তব্য দেন। এরপর মিছিল সহকারে জকিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে এমএ হক চত্ত্বরে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পথসভায় বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনী সভায় বক্তারা বলেন, দলীয় প্রতীকের নির্বাচন না হওয়ার কারণে এবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানকে সমর্থন দিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণা করবেন। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বলেন, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বিগত জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও প্রতিকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নৌকাকে পরাজিত করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে নষ্ট করে নিজের ফায়দা লুটে নিয়েছেন। জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগ কোনভাবেই লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর কাছে নিরাপদ নয়। তাঁর নানা কর্মকাণ্ডের কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে এবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানকে বিজয়ী করতে চান। বক্তারা ৫ জুন হস্তক্ষেপমুক্ত অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান এবং মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানের কাপ পিরিচ মার্কায় সবাই ভোট প্রদানের অনুরোধ করেন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের বড় অংশের নেতাকর্মীরা জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেওয়ায় ভোটের মাঠে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। পাল্টে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চিত্র। সাধারণ ভোটারদের ধারণা, অন্য যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে এবার বেশি উৎসবমুখর এবং প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরিস্থিতিতে এবার বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রভাবে এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছেন। এতে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ভোটের মাঠে ধরাশায়ী হতে পারেন বা তাঁর বিজয় নিশ্চিত করতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান ছাড়াও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুশ শুক্কুর। এই দুই প্রার্থীও দিনরাত গ্রামেগঞ্জে চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বিরোধকে সামনে রেখে তাঁরাও বিচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকে তাঁদের পক্ষে ধরে রাখার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজয়ের স্বাদ নিতে এই দুই প্রার্থীও দিনরাত ভোটারকে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
Leave a Reply