নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে নিখোঁজের ৫ দিন পর হাওরের একটি খাল থেকে মুসরাব হোসেন নামের স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেলে লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেনি পরিবার। কাউকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করাও সম্ভব হয়নি। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, নিহত স্কুলছাত্রের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। নিহতের পরিবারের সন্দেহভাজনদের বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, স্কুলছাত্র মুসরাব হত্যার প্রতিবাদে ও দৃষ্ঠান্তমূলক বিচারের দাবীতে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী। সোমবার বিকেলে রতনগঞ্জ বাজারে ও সন্ধ্যা পরে জকিগঞ্জ শহরে এওলাসার সমাজ কল্যাণ সংস্থার ব্যানারে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। জকিগঞ্জ শহরের মানবন্ধনে এওলাসার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি ইমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএজি বাবর, উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি আব্দুল আহাদ, জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহসভাপতি রহমত আলী হেলালী, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আল হাছিব তাপাদার, এওলাসার সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লতিফ মাহমুদ চৌধুরী, নিহত স্কুল ছাত্রের চাচা শামিম আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা আজহার আহমদ, রতনগঞ্জ টমটম সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম রাহাত, জাতীয় পার্টি নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, ইমরান আহমদ চৌধুরী, সুমন আহমদসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার শতশত মানুষ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খুনিকে দ্রæত চিহ্নিত করে গ্রেফতারের আহবান জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্কুলছাত্র মুসরাব হত্যার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারী চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। মুসরাবের দাফন শেষ হয়ে গেলেও খুনি অধরা রয়ে গেলো। দ্রæত সময়ের মধ্যে এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও খুনিকে গ্রেফতার না করলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। নিরপরাধ স্কুলছাত্র নিখোঁজের পর লাশ পাওয়ার ঘটনায় অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। নির্মম এই হত্যাকান্ডের খুনি চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এই হত্যাকান্ডের সূত্রধরে যেন কোন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হয়রানীর শিকার না হন সেদিকেও প্রশাসনকে সর্তক থাকার আহবান জানান।
নিহত মুসরাবের চাচা শামিম আহমদ এ প্রতিবেদকের কাছে জানান, মুসরাবের দাফনের কারণে থানায় অভিযোগ দিতে বিলম্ব হয়েছে। সোমবার রাতেই অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন। তিনি বলেন, এক যুবককে ঘিরে তাদের সন্দেহ হচ্ছে। পুলিশের কাছে সেই তথ্য দেবেন। মুসরাব নিখোঁজের রাতে ওই যুবক নুসরাবের ঘরের নাম্বারে কল দিয়ে ১৬ মিনিট কথা বলেছে এবং নুসরাবকে সে জকিগঞ্জ কাস্টমঘাট এলাকায় দেখেছে বলে জানিয়েছে। আবার কাজলসার ইউপির চৌধুরী বাজার এলাকায় খোঁজখবর নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে। এই যুবককে পরিবারের পূর্ব পরিচিত নয়। তাছাড়া সন্দেহভাজন আরও দুএকজনের বিষয়ে পুলিশকে মৌখিকভাবে তথ্য দেবেন।
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত চৌধুরী বলেন, মুসরাবের লাশ দাফন শেষে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা লিখিত অভিযোগ দেবেন। নিহত স্কুলছাত্রের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ডিএনএ রিপোর্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন যে যুবকের কথা বলা হচ্ছে তাকে ঘিরেও তদন্ত চলমান রয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, রতনগঞ্জের গোলাম মোস্তফা চৌধুরী একাডেমির অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র মুসরাব গত ৬ ফেব্রæয়ারী বিকেল চারটার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী নান্দিশ্রী গ্রামের একটি জলসায় যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করে তাকে না পেয়ে তার বাবা ওই দিন জকিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। রোববার বিকেলে রতনগঞ্জ এলাকার বালাই হাওরের কুছির খালে অর্ধগলিত একটি লাশ ভেসে ওঠে। পরে নিখোঁজ মুসরাবের স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি মুসরাবের বলে সনাক্ত করেন। খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করে। সোমবার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।
Leave a Reply