জকিগঞ্জে ২৬ দিনেও গ্রেফতার হয়নি তানিয়ার খুনি!

জকিগঞ্জে ২৬ দিনেও গ্রেফতার হয়নি তানিয়ার খুনি!

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করার জেরে জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী তামান্না আক্তার তানিয়া হত্যার ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও দায়েরকৃত মামলার আসামী কালন আহমদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে সঠিক বিচার না পাওয়ার আশঙ্কার কথা বলে চরম ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে নিহত তানিয়ার পরিবার। একই সঙ্গে জড়িত কালনকে দ্রæত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে পুলিশের দাবী অভিযুক্তকে গ্রেফতারে অভিযান থেমে নেই।

নিহত তানিয়ার বাবা জামাল উদ্দিনের অভিযোগ, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় তার স্কুল পড়–য়া মেয়ে তানিয়া ১৯ জুলাই সকালে স্কুলে যাবার পথে পাশের বাড়ির রশিদ আলীর ছেলে কালন আহমদ জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে পান করায়। পরে মেয়ে অসুস্থ হলে জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর বিষয়টি তানিয়া পরিবারকে জানায়। এ ঘটনার পর কালন আহমদকে আসামি করে জকিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি। গত ১ আগস্ট চিকিৎসাধীন থাকাকালে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে তানিয়া মারা যায়। ঘটনার পর থেকে পুলিশ বার বার আশ্বাস দিয়েছে দ্রæত গ্রেফতার করা হবে কালনকে। কিন্তু ২৬ দিন পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত কালনকে গ্রেফতার করা হয়নি। আসামি কালনের পক্ষের লোকজন মামলা প্রত্যাহার করতে জামাল উদ্দিনের পরিবারকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ নানা ধরণের হুমকি ধমকি দিচ্ছে। এতে ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিনপার করছেন পরিবার ও স্বজনরা। হুমকি ধমকির ঘটনায় নিহত তানিয়ার চাচা আব্দুল কাদির চারজনের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ডায়েরী নং ১৩৫, তারিখ ০৩/০৮/২৩ইং।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনার পরেই আসামি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। বিষয় খাওয়ানোর ৭ দিন পর তানিয়ার পরিবার থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা রুজু করে আসামি গ্রেফতারে অভিযান শুরু করি। এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জ, ঢাকা এবং বিভিন্ন জায়গায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু আসামি গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরপরই থানায় অভিযোগ দিলে আসামি দ্রæত গ্রেফতার করা সম্ভব হতো। এখন আসামির মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, সুলতানপুর ইউপির গণিপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে স্থানীয় আব্দুল আজিজ গার্লস একাডেমির অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না আক্তার তানিয়া বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে উত্যক্ত করতো এবং প্রেমের প্রস্তাব দিতো পাশের বাড়ির রশিদ আলীর ছেলে কালন আহমদ (২২)। এ বিষয়ে স্কুলছাত্রীর পরিবার কালনের বিরুদ্ধে তার অভিভাবকদের কাছে নালিশ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে দিন দিন উত্যক্ততা বাড়তে থাকে। গত ১৯ জুলাই সকালে তামান্না আক্তার তানিয়া স্কুলে যাবার পথে কালন তামান্নার হাতে একটি জুস দিয়ে পান করতে বলে। মান-ইজ্জতের ভয়ে সে সময় জুস পান করে বিদ্যালয়ে চলে যায় তামান্না। কিন্তু বিদ্যালয়ে যাবার পর তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে যায় এবং পরিবারের লোকদের কাছে ঘটনা জানায় এবং নিজহাতে একটি চিরকুটও লিখে রাখে। এরপর অসুস্থ স্কুলছাত্রীর পিতা তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বিষ জাতীয় দ্রব্য খাওয়ার আলামত পেয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কালন এলাকা ছেড়ে চলে যায়। গত ১ আগস্ট চিকিৎসাধীন থাকাকালে রাত ৮টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে তানিয়া মারা যায়। এ নিয়ে এলাকায় ও নিহত তানিয়ার সহপাঠীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত কালন আহমদকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসী জানান, পরিকল্পিতভাবে জুসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে মেধাবী স্কুলছাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত যুবককে গ্রেফতারপূর্বক দ্রæত সম্পন্ন করে ফাঁসির দাবি জানান তারা। অন্যদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, তানিয়া হত্যায় জড়িত কালন আহমদ তার নাম পরিবর্তন করে হাছান নাম ব্যবহার করে কয়েকদিন ঢাকার একটি বেকারিতে চাকরি করেছে। সে তার আসল নাম গোপন করে ভিন্ন নাম ব্যবহার করছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার পরপরই আসামি এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। বিলম্বে থানায় অভিযোগ দেয়ায় সে অজ্ঞাত স্থানে পালানোর সুযোগ পেয়েছে। তাকে গ্রেফতারে একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছি। এখনো সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। আশা করি দ্রæত সময়ের মধ্যে সফল হবো।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর