নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: করোনা মহামারিতে জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নে সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহের কাছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা তুতিউর রহমান, সুলতানপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুস ছত্তার ও সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের সাথে গণস্বাক্ষরের একটি কপিও সংযুক্ত রয়েছে। এ কপিতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বাক্ষর রয়েছে।
তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ একটি তদন্ত টিম গঠন করেছেন। ঐ তদন্ত টিম কাল বুধবার অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত করবে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সরকারি মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণে একই পরিবারে কয়েকজনকে একাধিকবার ত্রাণ দেয়া হলেও বঞ্চিত থেকে গেছেন অসহায়, এতিম, ছোট ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী ও দিনমজুর লোকজন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা মনে করেন ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করায় সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে প্রকৃত অসহায় লোকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলেন।
অভিযোগপত্রে কয়েকটি ওয়ার্ডের অনিয়মের উদাহরণ দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার জয়নাল আবেদীন ও ৪ নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ ছায়দুল ইসলামের মাতা আছমা বেগম ভিজিডি তালিকায় ১০৫ ক্রমিকে গ্রহীতা থাকার পরও তার মেয়ে রুকিয়া বেগম জিআর ৯৪ ক্রমিকের গ্রহীতা। ৫ নং ওয়ার্ডের নালুচক গ্রামের রেশমা বেগম ভিজিডি ৬১ ক্রমিকের গ্রহীতা আবার খাদ্য বান্ধবের ৯২ ক্রমিকেও উপকারভোগী। ৮ নং ওয়ার্ডে হাসনা বেগম ভিজিডি ১১৬ ক্রমিকে উপকারভোগী হবার পরও তার ছেলে খাদ্য বান্ধব তালিকার ৯৭ ক্রমিকে উপকারভোগী। ৬ নং ওয়ার্ডে খাদ্য বান্ধব তালিকায় থাকা ৩৭ জনের মধ্যে ২৬ জনই বার বার জি.আর তালিকায় উপকারভোগী। একই ওয়ার্ডে জি.আর ৮২ ক্রমিকের চাল অন্যরা একাধিকবার গ্রহণ করেছেন। ২ নং ওয়ার্ডের বিলপার গ্রামের ৪০০জন ভোটারের মধ্যে খাদ্য বান্ধব তালিকায় দুজনের নাম রয়েছে। ৫ নং ওয়ার্ডের খাদ্য বান্ধব তালিকায় ৩৪ জনের নাম থাকলেও নওয়াগ্রামে মাত্র একজন। জি.আর তালিকায় ৯ নং ওয়ার্ডের মাজবন্দ গ্রামে ভূয়া ১৩ জনের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ত্রাণ আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই পরিবারে স্বামী স্ত্রী ও অন্য পরিবারে আপন দুই ভাই একই সাথে জি.আর তালিকা থেকে সুবিধা পান। আবার একই ওয়ার্ডের ৩১ জন খাদ্য বন্ধব তালিকার উপকারভোগীর মধ্যে ৭ জনকে একাধিকবার জি.আর সুবিধা দেয়া হয়। ঐ ওয়ার্ডের ভিজিডির ১২৩ ক্রমিকের উপকারভোগীর স্বামী হেলাল আহমদ একাধিকবার জি.আর তালিকায় সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ২ নং ওয়ার্ডের ভিজিডি তালিকাভূক্ত ৭ জন আবার একাধিকবার জি.আর সুবিধা নিয়েছেন।
অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন, সরকারের ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ১ নং ওয়ার্ডের প্রকৃত অসহায় ফলাহাট গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে দিনমজুর মোস্তাক আহমদ, মৃত ইছকন্দর আলীর প্রতিবন্ধী ছেলে আলতাফ হোসেন, স্বামী পরিত্যক্ত জাহেদা বেগম, ২ নং ওয়ার্ডের হাজারীচক গ্রামের মৃত মাহমুদুর রহমানের ছেলে দিনমজুর মাসুক আহমদ, গৃহিনী আইনুল বিবি, বিলপার গ্রামের গৃহিনী রেফা বেগম, দিনমজুর মুসলিম উদ্দিন, ৯নং ওয়ার্ডের মাজবন্দ গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কুদ্দুছ, প্রতিবন্ধী ফয়জুল হক, দিনমজুর আব্দুর রহমান, দিনমজুর শিহাব উদ্দিন, দিনমজুর আব্দুস সামাদ, সিরাজপাড়া গ্রামের দিনমজুর আতাউর রহমান, মজলি গ্রামের রাবিয়া বেগম, ভ্যান চালক আতাউর রহমান, মাজবন্দ গ্রামের ইসলাম উদ্দিন। ৬ নং ওয়ার্ডের হাওয়ারুন নেসার পরিবারে পাগল একটি ছেলে ও স্বামী পরিত্যক্ত মেয়ে এবং নাতি নাতনীসহ যুবতী মেয়েরা রয়েছে। এরপরও ঐ নারী ত্রাণ পাননি। গণিপুর গ্রামে একই পরিবারে দুটি প্রতিবন্ধী মেয়ে ও মানসিক বিকাশগ্রস্ত একটি ছেলে থাকার পরও মেনী বেগম নামের নারী ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এছাড়াও ত্রাণ সহায়তা তালিকা থেকে বঞ্চিত আরো বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয় দরখাস্তে।
এ প্রসঙ্গে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, ভিজিডি ও খাদ্য বান্ধব থেকে যারা উপকারভোগী তারা কোনভাবেই ত্রাণ পাওয়ার কথা নয়। করোনা পরিস্থিতি শুরু হবার পরপরই আমার ইউপি সচিব ও সদস্যদেরকে নিয়ে সভা করে বলে দিয়েছি প্রত্যেক ওয়ার্ডে যেন অসহায় ও ত্রাণ পাওয়ার উপযোগী লোকজনের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়। যারা ভিজিডি ও খাদ্য বান্ধবে উপকারভোগী তাদেরকে ত্রাণ দেয়া যাবেনা এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে। এরপরও দুএকজন সদস্য এদেরকে ত্রাণ দিয়েছেন। যা তাৎক্ষণিক যাচাই বাছাই আমি করতে পারেননি। এরপরও যে নামগুলো নজরে এসেছে সেগুলো বাতিল করেছি। উপকারভোগী কয়েকজনের নাম মঙ্গলবার নতুন একটি তালিকায় দেখতে পেয়েছি পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যর প্রত্যয়ন নিয়ে নামগুলো বাতিল করেছি।
তিনি বলেন, অনেকে একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছে তা সত্য। যখন আমাদের কাছে এসে বলে তার ঘরে খাবার নেই বাচ্চারা উপুস রয়েছে তখন তাকে আবারো ত্রাণ না দিয়ে উপায় থাকেনা। এখনো ত্রাণ পাওয়ার উপযোগী কারো নাম ইউপি সদস্য ত্রাণ সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে থাকলে ঐ লোকজনরা আমার কাছে সরাসরি এসে বললে আসলে আমি তাদেরকে ত্রাণ দেবার ব্যবস্থা করবো। করোনা পরিস্থিতিতে কম সময়ের কারণে তিনি সকল এলাকায় ত্রাণ বন্টন নিয়ে তাৎক্ষণিক যাচাই বাছাই করতে পারেন নি বলে জানান। মাজবন্দ গ্রামে ভূয়া নাম ঠিকানা দিয়ে ত্রাণ আত্মসাৎ প্রসঙ্গে বলেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে কোন ত্রাণ উত্তোলন করা হয়নি।
Leave a Reply