জকিগঞ্জে বন্যার পানি কমছে, বাড়ছে দুর্ভোগ

আল হাছিব তাপাদার:: সিলেটের জকিগঞ্জে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে থাকলেও বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অধিক বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলের কারনে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো বন্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ও মৌসমে ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত গ্রামগুলোর লোকজনের বসবাসের উপায় নেই।

মারাত্মক আকারে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্মরোগ ও ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হ্েচ্ছন বন্যা কবলিত এলাকার অনেকজন। গৃহ পালিত পশু পাখির খাবারও সংকট রয়েছে।

বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পানি কমার পরেই বেরিয়ে আসছে ক্ষত-বিক্ষত সড়ক। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় পানি নেমে গেলেও কাঁদা ও ভাঙা ব্রীজ, কালভার্ট ও রাস্তার কারণে মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে। চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে গ্রামঞ্চলের মানুষের। জকিগঞ্জ-সিলেট প্রধান সড়কের অবস্থা আগেই নাজুক ছিলো। বন্যার পরে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

অন্যদিকে, ফিটনেস বিহীন অবৈধ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য চরমে। বিশেষ করে বিদ্যুৎচালিত টমটম ও অবৈধ লেগুনা, সিএনজি চালকদের কাছে জিম্মি বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। ভাড়া বাড়িয়েছে চরম মাত্রায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, বিরশ্রী, বারঠাকুরী, কসকনপুর, কাজলসার, বারহাল, মানিকপুর ইউনিয়নের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর বন্যা নিয়স্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। বিভিন্ন ফিসারীর অন্তত ১০ কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আউস ক্ষেত ও আমনের চারা, মৌসুমী শাক সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষককুলে চরম হতাশা। গ্রামে’গঞ্জে হাহাকার নেমেছে। অনেক এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের শ্রেণী কক্ষে এখনো পানি জমে আছে। কিছু কিছু এলাকায় পানি কমতে থাকায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ঘরবাড়ি বাসযোগ্য না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।

বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ না থাকায় দিনমজুররা বসে আছেন বেকার হয়ে। উজান এলাকায় পানি নেমে গেলেও ভাটি এলাকার গ্রামগুলোর পানি এখনো নামা শেষ হয়নি।

অনেক এলাকায় নলকুপের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেট জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যাক্তিগণ বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই ত্রাণ অপ্রতুল। এ অবস্থায় দুর্ভোগের শেষ নেই বন্যাদুর্গত এলাকায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত তিনদিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় ও ভারতের ঢল না নামায় পানি কমতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতি বহাল থাকলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।’ তবে উজানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাটিতে পানি ধীরগীতীতে কমছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী এলাকার লোকজন জানান, বন্যায় ঘরবাড়ী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। থাকার জন্য যদি ঘর না থাকে, তাহলে ত্রাণ দিয়ে কি হবে? বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুধু ত্রাণ দিয়ে নয়, বরং নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন। বেকার দিনমজুর লোকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে অনেকের ধারণা।

সিলেট জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান জানান, সিলেট জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ২৩১ মেট্রিকটন চাল ও তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোতে সব ধরনের সরকারী সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ জানান, জকিগঞ্জের বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩৭ টন চাল বরাদ্ধ হয়েছে। এখনো বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় বন্যার পানি থাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। পানি কমার পর পরই চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিক প্রস্তুত করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সরকারী সহায়তা দেয়া হবে। অবৈধ পরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্যে নিয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, যেকেউ ভাড়া নৈরাজ্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর