হাইকোর্ট

রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না ॥ হাইকোর্ট

আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো: জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রীমকোর্টের দেওয়া চিঠির বৈধতা নিয়ে জারি করা রুল নিস্পত্তি করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ৭ দফা পর্যবেক্ষণ সহ নিস্পত্তি করে রায় দেন।

আদালত রায়ে বলেছেন, সুপ্রীমকোর্টের দেয়া এই চিঠি জনমনে সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদার খর্ব করেছে। আদালত দুদকসহ অন্যন্য তদন্ত সংস্থাকে সর্তক করে দিয়ে বলেছে কোন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত করার সময় যেন সর্তক থাকে। কারণ এর সঙ্গে সুপ্রীম কোর্টের তথা বিচার বিভাগের মর্যাদা জড়িত। রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না। সুপ্রীম কোর্টের এই চিঠি জনগণের মাঝে এই বার্তা দিয়েছে যে একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতির ফৌজদারি কর্মকান্ডে দায়মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো যে রাষ্ট্রপতি ছাড়া কেউ আইনের উর্ধে নয়।

এই রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এ ধরণের চিঠি দেয়া অবৈধ। যার কোন আইনগত ভিত্তি নেই।

এই রায়ের ফলে প্রাক্তন বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলতে বাধা নেই বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ৩১ অক্টোবর প্রাক্তন বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রীমকোর্টের দেওয়া চিঠি বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।

আদালত অ্যামিক্যাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বার সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।

গত ২৪ অক্টোবর আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, অ্যামিকাস কিউরি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী ও সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের প্রাক্তন বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সুপ্রীমকোর্টের দেওয়া চিঠি কেন বেআইনী ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

১৯ অক্টোবর রুলের ওপর প্রথম শুনানি হয়।

দুদককে গত ২৮ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের দেওয়া চিঠিটি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান তরফদার। এরপর আদালত স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে ওই চিঠি কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। সুপ্রীম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেল, দুদক চেয়ারম্যান, আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

প্রাক্তন বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেন দুদক। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।

বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে চলতি বছরের ২ মার্চ সুপ্রীমকোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেন দুদক। এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেয়া রায় সবার ওপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না।’

তবে সুপ্রীম কোর্ট এই চিঠি দিলেও ওই বিচারকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান থেমে থাকেনি। আর দুদকের চাহিদা অনুযায়ী ওই বিচারকের বিষয়ে নথিপত্রও পাঠিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট।

সূত্র: জনকন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর