নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে পুলিশের কথিত সোর্স দাবিদার জামালসহ আরও তিনজন মিলে এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ ও র্যাব পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। মামলার আসামীরা হলেন কথিত পুলিশ সোর্স সুলতানপুর ইউপির গঙ্গাজল গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে জামাল আহমদ (৩৫), একই গ্রামের মৃত সোহাগ মিয়ার ছেলে জিল্লুর রহমান জিলু (৩৫), সোনারগ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রুবেল আহমদ (২৫) ও অজ্ঞাত একজন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, কথিত পুলিশ সোর্স জামাল, জিল্লু, রুবেল ও অজ্ঞাত একজন সম্প্রতি সময়ে গঙ্গাজল গ্রামের মৃত আব্দুল মুছব্বিরের ছেলে সুপারী ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে কল করে নিজেদেরকে র্যাব ও পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে শিহাব মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। থানায় তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে তার নাম অর্ন্তভূক্ত আছে। তাদেরকে ৩ লাখ টাকা না দিলে অবৈধ মালামাল দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে। কিন্তু সুপারী ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা না থাকায় তিনি হতভম্ব হয়ে মোবাইল কলের কথোপকথন রেকর্ড করেন। পরবর্তীতে তিনি কথিত পুলিশ সোর্স জামালের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। জামাল তাকে জানান, জকিগঞ্জ থানা পুলিশ মাদকের তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করে সিলেটে প্রেরণ করেছে। মাদকের তালিকা থেকে নাম কর্তন করতে হলে টাকা লাগবে। তখন মাদকের তালিকা থেকে নাম কাটাতে জামাল ও জিল্লুর রহমান জিলুর কাছে প্রাথমিকভাবে নগদ ৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন ব্যবসায়ী শিহাব। কিন্তু টাকা দেবার পর জামাল চক্রের আচরনে ও কথাবার্তায় ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিনের সন্দেহ সৃষ্টি হলে তিনি বিষয়টির খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জানতে পারেন কথিত পুলিশ সোর্স দাবীদার জামাল, জিল্লুর রহমান জিলু রুবেল আহমদ ও অপর অজ্ঞাত একজন মিলে মোবাইল ফোনে নিজেদেরকে পুলিশ ও র্যাব পরিচয় দিয়ে ভয় দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ব্যবসায়ী শিহাব উদ্দিন জকিগঞ্জ থানায় জামালসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে ৪০৬/৪১৭/১৭০ পেনাল কোডে মামলা রুজু করে। মামলা নং ৭, তাং ১০/১১/২২। বর্তমানে জামালসহ চার প্রতারকই পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে।
ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, জামাল বেশ কয়েকদিন ধরে নিজেকে পুলিশ সোর্স দাবী করে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে যাচ্ছে। তার অত্যাচারে ও চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছেন সাধারণ লোকজন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয়ে নানা অপকর্ম করলেও কৌশলে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। ইতোপূর্বে জকিগঞ্জ সদর ইউপির শিমেরবন্দ গ্রামের মৃত রইছ আলীর ছেলে নিরীহ দিনমজুর শাহজাহান আহমদ, বারঠাকুরী ইউপির কস্তইল গ্রামের ছালেহ আহমদ ও খাদিমান গ্রামের এক শিক্ষিকার স্বামী আব্দুর রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জামাল হয়রানী করেছে বলে সিলেটের ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। জামালের মিথ্যা মামলার হয়রানীতে নিঃস্ব হয়েছেন দিনমজুর শাহজাহানসহ অনেকজন। মিথ্যা মামলায় পড়ে দেশ ছেড়েছেন খাদিমান গ্রামের ওয়েছ আহমদ। কিন্তু অবশেষে কথিত পুলিশ সোর্স দাবিদার জামাল আহমদসহ তার সহযোগীদেরকে আইনের আওতায় আনায় এলাকাবাসী জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার এসআই রিপন চন্দ্র দাস জানান, মামলা রুজুর পর থেকে আসামীরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছেনা। আসামীদের গ্রেফতারে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।
জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি মামলা রুজুর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ ও র্যাবের পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে আসামীরা। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করছে।
Leave a Reply