জকিগঞ্জে দুইলাখ মানুষ পানিবন্দি, দূরবর্তী বন্যার্তরা ত্রাণ পাচ্ছেন না, দুর্ভোগ চরমে

জকিগঞ্জে দুইলাখ মানুষ পানিবন্দি, দূরবর্তী বন্যার্তরা ত্রাণ পাচ্ছেন না, দুর্ভোগ চরমে

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের ৯টি ইউপি এলাকার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় দুইলাখ মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাম ও নি¤œাঞ্চলের বাসিন্দারা।

সরেজমিন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। অনেক এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রের পাশেও পানি রয়েছে। বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। শেওলা-জকিগঞ্জ সড়ক দিয়ে সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়ক দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্যসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামঞ্চলে ডিঙিনৌকার অভাবে চলাচল করা যাচ্ছেনা। সময় সময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় কেউ কেউ গবাদিপশুসহ জরুরী মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। বন্যার্তদের অনেকে গবাদিপশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। সময় সময় বন্যা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক এলাকার লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে ডিঙি নৌকায় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার কারণে সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছেনা। খলাছড়া ইউপির শাইটষৌলা, বেউর, বিরশ্রী ইউপির সোনাপুর, সিঙ্গাইরকুড়ি, বিরশ্রী, পিরনগর, জকিগঞ্জ ইউপির হাইল ইসলামপুর, আনোরাশী, গদিরাশী, রহিমখারচক, মুমিনপুর, সুলতানপুর ইউপির ঘেছুয়া, এলংজুরি, বাদেজমা, সকড়াসহ বিভিন্ন ইউপির গ্রামঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত রয়েছে বন্যার্তরা। গ্রামঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের অভিযোগ, সড়কের আশপাশে যারা পানিবন্দি রয়েছে তারা বার বার ত্রাণ পাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামের ভিতরের পানিবন্দি লোকজন একবারও সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। খাবারের জন্য নি¤œাঞ্চলের লোকজন মারাত্মক কষ্টের মধ্যে দিনরাত কাটাচ্ছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় কেউ ত্রাণের নৌকা নিয়ে যায়না। দূরবর্তী অনেক আশ্রয়কেন্দ্রেও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

ফলাহাট গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, ‘বন্যায় ঘরে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই। গ্রামের অনেকের ঘরে খাবার নেই। ত্রাণের অপেক্ষায় লোকজন পথচেয়ে থাকেন। কেউ কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও অনেকে নিজের শেষ সম্ভল রেখে যাচ্ছেনা। ঘরে রাখা ধানসহ বাকি সবকিছু পানির নিচে তলাইয়া গেছে।’

থানা বাজার এলাকার আব্দুশ শহীদ বলেন, ২০০৪ সালের পরে তাঁরা কখনো এত পানি দেখেননি। গত ১৮ বছরে যেসব জায়গায় পানি ওঠেনি, সেসব জায়গায়ও এবার পানি উঠেছে। যেভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে ২০০৪ সালের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। গ্রামঞ্চলে দুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আতাউর রহমান জানান, পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এখন পর্যন্ত জকিগঞ্জের প্রায় দুইলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিবন্দি লোকজনকে ত্রাণ দেয়া অব্যাহত আছে। তবে অনেক এলাকায় ভয়াবহ বন্যা থাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছেনা। কিন্তু যেকোন অবস্থায় ত্রাণ পৌঁছাতে প্রশাসন চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে আড়াই হাজারের চেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ২৫টি গবাদিপশু আছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল জানান, ৯টি ইউপির এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি সদরের অনেক এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যা নিয়ে তাঁরা সতর্ক থেকে সারাক্ষণ কাজ করছেন। পানিবন্দীদের সহযোগিতায় বিভিন্ন এলাকায় চালসহ শুকনো খাবার দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ সাড়ে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর