জকিগঞ্জের দুটি ইউপিতে চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা, শেষ হাসি কার? প্রার্থী-সমর্থকের উৎকণ্ঠা

জকিগঞ্জের দুটি ইউপিতে চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকা, শেষ হাসি কার?

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে বাতিল হওয়া সুলতানপুর ও কাজলসার ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে কাল বুধবার। সোমবার মধ্যেরাত থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়ে যাবে। বসে নেই চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদের প্রার্থীরা। নিরব ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভোট চেয়ে। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রæতি। দিন গড়িয়ে রাত শেষে ভোরের আলো ফোটার পরপরই ভোট কেন্দ্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভোটাররা। তবে বৃষ্টির মৌসুমে নারী ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। দুটি ইউপিতেই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে অপর প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছাড়া বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে। নানা নাটকীয়তা শেষে সুলতানপুর ও কাজলসার ইউপির নির্বাচনে কারা হাসছেন বিজয়ের হাসি এ নিয়েও প্রার্থীদের সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে চলছে জল্পনা কল্পনা। ভোট নিয়ে ভোটার ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শঙ্কা থাকলেও নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের’ প্রশ্নে কাউছে ছাড় দেয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, সুলতানপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মোট পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল (নৌকা), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম (আনারস), উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ চশমা। বাকি দুই প্রার্থী জালাল উদ্দিন ও জাপার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খাঁন ভোটের মাঠে নেই। কাজলাসর ইউপিতে আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। তবে এরমধ্যে ভোটের মাঠ কাপিয়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জুলকার নাইন লস্কর (নৌকা), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল আম্বিয়া (আনারস), বিএনপি ঘরানো চেরাগ আলী (চশমা)।

গত ৫ জানুয়ারী জকিগঞ্জের ৯টি ইউপির সঙ্গে এ দুই ইউপি ভোট গ্রহণ হয়েছিলো। কিন্তু ভোটের দিন বিকেল ৩টার দিকে কাজলসার ইউপির মরিচা ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে নৌকায় সিল দেয়া ব্যালটসহ আটক হন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা শাদমান সাকীব এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। ঐদিন সাথে সাথে কাজলসার ইউপির ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। সুলতানপুর ইউপির নির্বাচনে ঐদিন বিকেলের দিকে অনিয়মের অভিযোগে গণিপুর ভোটকেন্দ্রের ব্যালেট ছিনতাই করে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। পরে ঐ ইউপির একটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত হয়। পরে পরাজিত কয়েকজন সদস্য পদপ্রার্থী উচ্চ আদালতে সুলতানপুর ইউপির নির্বাচন বাতিল চেয়ে রিট করেন। ঐ রিটের শুনানি শেষে উচ্চ আদালত সুলতানপুর ইউপির নির্বাচন বাতিল করে পুন:তফসিলের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ ইউপিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাতিল হওয়া নির্বাচনে এ ইউপিতে বড় ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। তাঁর নিকটতম ছিলেন বিএনপি নেতা হাসান আহমদ।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় ভোটার, প্রার্থী ও সমর্থকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সুলতানপুর ইউপির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা হাসান আহমদকে একলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক রফিকুল ইসলাম। ভোটের মাঠেও তাঁর অবস্থান অনেকটা শক্তিশালী। তবে রফিকুল ইসলামের ও বিএনপি নেতা হাসান আহমদের ভোটের ঘাটিতে হানা দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল। এ দুই প্রার্থীর ভোট ব্যাংকে হানা দিয়ে চমক দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ইকবাল আহমদ চৌধুরী। নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীও শেষ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের মাঠেও তৈরী করেছেন শক্তিশালী অবস্থান। এলাকায় ঐক্য গড়ে হারানো চেয়ার ফিরে পেতে দিনরাত পার করছেন ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল। বিজয় নিশ্চিতে বসে নেই বিএনপি নেতা হাসান আহমদও। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর টক্করের মধ্যে কৌশলী হয়ে বিজয়ের মালা পরতে চান। রফিকের ভোট ব্যাংক টার্গেট করেই কাজ করছেন বিএনপি নেতা হাসান আহমদ ও নৌকার প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী। তবুও বিজয়ের ব্যাপারে অনড় রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। চেয়ার ধরে রাখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী ভোটের লড়াইয়ের আভাস দেখা যাচ্ছে।

কাজলসার ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জুলকার নাইন লস্করকে ধরাশায়ী করতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আম্বিয়া ও বিএনপি নেতা চেরাগ আলী। এই তিন প্রার্থীকে ঘিরেই এখন ভোটের আলোচনা। আশরাফুল আম্বিয়া ও চেরাগ আলীর ভোট ব্যাংকে হানা দিতে শেষ চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী জুলকার নাইন লস্কর। কিন্তু আশরাফুল আম্বিয়া কৌশলী হয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকটি এলাকাকে টার্গেট করেই বিজয় নিশ্চিতের স্বপ্ন দেখছেন। শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিকতার প্রভাবও পড়েছে ভোটের মাঠে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বিদ্রোহীর প্রার্থীর সঙ্গে টক্কর দিচ্ছেন বিএনপি নেতা চেরাগ আলী। তাঁকে ঘিরেও ব্যাপক আলোচনা চলছে। ফ্যাক্টর প্রার্থী চেরাগ আলী এবার বিজয়ের মালা পরতে ভোটারদের পিছু ছাড়ছেন না। আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আশরাফুল আম্বিয়া ও বিএনপি নেতা চেরাগ আলীর চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থী জুলকার নাইন লস্কর চেয়ার ধরে রাখতে এলাকা ভিত্তিক ঐক্য গড়ে তুলেছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী প্রতিদ্ব›দ্বীতার আভাস পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তপন চন্দ্র জানান, দুই ইউপিতে অবাদ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে। এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যেদিয়ে নির্বাচন শেষ হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। ভোটারের রায়ের প্রতিফলন হবে। নির্বাচনে জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবেন। দুটি ইউপির সবগুলো ভোট কেন্দ্রকে ঝূঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ করছে প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর