জকিগঞ্জের গ্যাসকূপে খরচ ৭৫ কোটি টাকা: মজুদ গ্যাসের দাম এক হাজার ২৭৬ কোটি টাকা

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জে বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রকে দেশের ২৮ তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সোমবার দুপুরে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ‘এনার্জি সিকিউরিটি: মডার্ন কনটেক্সট, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ ঘোষণা দেন।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, জকিগঞ্জের নতুন এই গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ রয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। যেখান থেকে প্রতিদিন ১০০ কোটি (১০ মিলিয়ন) ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে এবং এই হারে ১২ থেকে ১৩ বছর জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে এই গ্যাস। উত্তোলন যোগ্য এই গ্যাসের মূল্য প্রায় এক হাজার ২৭৬ কোটি টাকা বলে জানান।

জানা যায়, রুপকল্প -২ খনন প্রকল্পের অধিনে জকিগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম আনন্দপুরে একটি কুপ খননের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। লক্ষ্যমাত্রা ও প্রত্যাশা  ছিলো ২৯৯১ মিটার খনন আর ৬০ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করা। জমিঅধিগ্রহন শেষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানী বাপক্সে  নিজস্ব বিজয়-১২ রিগ স্থাপনের মাধ্যমে মূল কূপ খননের শুরু করে গত ১ মার্চ। রাত দিন এক কর্মযজ্ঞ চলে এখানে। সে কারনেই মাত্র ২ মাস ৭ দিনে ২৮৮৮ মিটার কুপ খনন কাজ শেষ হয় ৮ মে। যদিও ২৮৭০ থেকে ২৮৮৮ মিটারের মধ্যেই গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। গত ৮ মে ডিএসটি পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হয় এখানে গ্যাস মজুদের বিষয়টি।

প্রকল্পটির পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ কবির জানান, এই স্থানে গ্যাস পাওয়ার পর তাদের ধারনা এই অঞ্চলে আরো গ্যাস রয়েছে। তাই তারা আরো ১৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপ চালাতে চায়। অনুমোদন পেলে খুব দ্রæতই জরিপের কাজ শুরু করবে বাপেক্স। বাপেক্স এই প্রকল্পটিতে যুক্ত হওয়ায় ৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৭৫ কোটি টাকা খরচ করেই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে বাপেক্স। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রæত অনুসন্ধান এবং সফলতা। মাত্র ২ মাস ৭ দিনেই কুপ খনন শেষ হওয়াকেও তিনি দেশের ইতিহাসে দ্রæততম খনন কাজ দাবী করেন। এই গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হতে কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নে সাঈদ মোহাম্মদ কবির জানান, সেটা নির্ভর করবে গ্রীড লাইন স্থাপনে কত সময় লাগবে। এ বিষয়টি নির্ভর করবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান জিটিসিএল এর উপর।

এর আগে গতকাল দুপুরে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে ‘এনার্জি সিকিউরিটি: মডার্ন কনটেক্সট, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন ‘নতুন করে গ্যাস এক্সপ্লরেশনের বিষয়ে আজকে আমি বিশেষভাবে জানাতে চাই- জকিগঞ্জে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ৬৮ বিসিএফ গ্যাসের সন্ধ্যান আমরা পেয়েছি। প্রতিদিন প্রায় ১০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন করতে পারব। যেখান থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করতে পারব। যার ম‚ল্য প্রায় এক হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বাপেক্সকে ধন্যবাদ জানাই, তারা দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পেরেছে। এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমি ধন্যবাদ জানাই। সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে জ্বালানি বিভাগের যে টিম এই কাজ করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই।’

এদিকে জকিগঞ্জে গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের খবরে সীমান্ত উপজেলায় আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সাথে আছে নানা প্রত্যাশাও। স্থানীয়দের দাবী নতুন এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে জকিগঞ্জে যেন সংযোগ দেয়া হয়। জকিগঞ্জে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে অবহেলিত এ উপজেলা উন্নত হবে। শিক্ষিত বেকার লোকজনের কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। হাওরে বেকার হয়ে যাওয়া জমিতে গ্যাসনির্ভর কলকারখানা গড়ে উঠবে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক শক্তি আরও বাড়বে।

জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ বলেন, এই গ্যাসক্ষেত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে ষোষণা দেয়ায় এলাকাবাসী খুশি। এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে জকিগঞ্জে গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবী সীমান্তঞ্চলের মানুষের। গ্যাস সংযোগ পেলে বেকারত্ব কমে আসবে। সেই সাথে এ অঞ্চলে  গ্যাস ভিত্তিক কল কারখানা স্থাপনের আহবান  জানান তিনি।

আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ বলেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে পশ্চিম আনন্দপুরের ঐ জায়গাটি বাপেক্সের নজরে এনেছিলাম। এরপর বাপেক্স দীর্ঘ অনুসন্ধান করে গ্যাস পেয়েছে। আজ ঘোষণা হওয়ায় আমিসহ জকিগঞ্জবাসী খুবই খুশি। এখন আমাদের দাবী, জকিগঞ্জে যেন দ্রæত গ্যাস সংযোগ দেয়া হয় এবং গ্যাসক্ষেত্রে যেন স্থানীয় শিক্ষিত বেকার তরুণদেরকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।

জকিগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার দাবী জানিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নতুন এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে জকিগঞ্জে সংযোগ দেয়া হলে অবহেলিত এলাকা উন্নত হবে। হাওরে অনেক জায়গা বেকার পড়ে আছে। গ্যাসের অভাবে এতদিন কলকারখানা গড়ে উঠতে পারেনি। তিনি বলেন, গ্যাসক্ষেত্রে এলাকার বেকার লোকজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। জনবল স্থানীয় এলাকা থেকে নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর