জকিগঞ্জে চাঁদার টাকা না দেয়ায় দিনমজুরকে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানীর অভিযোগ

জকিগঞ্জ আই টিভি প্রতিবেদন:: জকিগঞ্জে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ায় দিনমজুরকে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জকিগঞ্জের সীমেরবন্দ গ্রামের মৃত রইছ আলীর ছেলে হেলাল আহমদ। সুলতানপুর ইউনিয়নের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে জামাল আহমদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, গঙ্গাজল জায়ফরপুর গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে জামাল আহমদের চাহিদাকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জামালের দায়েরকৃত হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলায় তার ভাই দিনমজুর শাহজাহান আহমদ হয়রানী ও হেনাস্থার শিকার হচ্ছে। উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলার আসামী হয়ে শাহজাহান আহমদ ফেরারী হয়ে দিন কাটাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের পরিবার চরমভাবে অনাহারে অর্ধহারে দিন যাপন করছে। গত ১৫/০৪/২১ ইংরেজী তারিখ রাত সাড়ে ৭টার দিকে জামাল আহমদকে কারা তার বাড়ির সামনে মারধর করে জখম করে।

এ ঘটনার ৪/৫ দিন পরে জামাল শাহাজাহানের বাড়িতে গিয়ে তার মা খয়রুন নেসাকে জানান, শাহজাহান তাকে মারধর করেছে। তিনি মামলা দায়ের করবেন। তখন শাহাজাহানের মা ও পরিবারের লোকজন জামালের কাছে কান্নাকাটি করে রেহাই চান। তখন জামাল ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়ে তাদেরকে জানান, ঘটনাটি পুলিশসহ সাংবাদিকরা শুনে গেছেন। ৫০ হাজার টাকা দিলে সিস্টেম করে শাহজাহানকে বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু অসহায় পরিবার জামালের চাহিদাকৃত চাঁদা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান জামাল। পরে শাহজাহানসহ অপর আরেকজনের বিরুদ্ধে থানায় ৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২৫, ২২/০৪/২১ ইং। এ মামলায় শাহজাহানকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সময় মাটি শ্রমিক শাহজাহান আহমদ সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত বাবুর বাজারে ছিলো। সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে ঘটনার আগে থেকেই বাবুর বাজারে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বাবুর বাজারের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজার বণিক সমিতির কাছ থেকে সংগ্রহ করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাছাড়াও ঘটনার আগ থেকেই শাহজাহানকে বাবুর বাজারে অবস্থান করতে দেখেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মুজিব, ইউপি সদস্য লুকন আহমদ, বাবুর বাজার বণিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ হাসান আহমদ, পশ্চিমবন্দ গ্রামের তজ্জমুল আলীর ছেলে বেবুল আহমদ, পশ্চিম গঙ্গাজল গ্রামের লতু মিয়ার ছেলে বুছুল আহমদ, পশ্চিমবন্দ গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে রুবেল আহমদ, সুন্দরারচক গ্রামের মৃত কালু মিয়ার ছেলে খোকনসহ বাবুর বাজারের বহু লোকজন।

এরআগেও জামাল অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে শাহজাহানসহ এলাকার বেশ কয়েকজনকে মামলায় ফাঁসিয়েছে। সেই সময়েও শাহজাহানের পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করে ১০ হাজার টাকা আদায় করেছিলো। কিন্তু চাহিদামত টাকা না পাওয়ার কারণে পরে ডাকাতি মামলায় শাহজাহানকে অভিযুক্ত করে। সেই মামলায় শাহজাহানের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টির ব্যাপারে স্থানীয় সুলতানপুর ইউপির সদস্য তাজ উদ্দিন তাজনও অবগত রয়েছেন।

অভিযোগে হেলাল আহমদ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলে, জামালের দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সময়ে ও এরআগে পরে শাহজাহানের ব্যবহৃত মোবাইল ট্র্যাকিং করে এবং বাবুর বাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শাহজাহানকে হয়রানীমূলক মামলা থেকে রেহাই দেবার দাবী জানিয়ে উল্লেখ করেন, হয়রানীর ভয়ে জামালের এহেন কর্মকাÐের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়না। চাঁদাবাজ জামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। জামালের বিরুদ্ধে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানীর কথা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মুজিব জানিয়েছেন, ঘটনার সময় শাহজাহান বাবুর বাজার থেকে কল করে তার কাছে এসে মাটির কাজের মজুরীর টাকা গ্রহণ করেছে। সিসি ক্যামেরায়ও স্পষ্ট তাকে দেখা গেছে। নিরপরাধ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী করা কাম্য নয়।

সুলতানপুর ইউপির সদস্য তাজ উদ্দিন তাজন জানিয়েছেন, জামালের ঘরে ডাকাতির পর তিনি তাকে নিয়ে সিলেটের হাসপাতালে গেছেন। তখন কোন কাউকে জামাল চিনতে পারেননি বলে জানান। এরপর শাহজাহানকে তার ডাকাতি মামলার স্বাক্ষী হতে চাপ দেন জামাল। কিন্তু অবশেষে শাহজাহানকে মামলার স্বাক্ষী না করে আসামী করে ফেলেন। ঐ কথাবার্তার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। জামাল অযথা নিরীহ মানুষকে মামলায় হয়রানী করছেন বলেও তিনি দাবী করেন।

বাবুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার আগে থেকেই বাজারের সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেয়া হয়েছে। শাহজাহান ঘটনার আগে থেকেই বাজারের ক্যামেরার সামনে ছিলো। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখেছি। তাই মামলার আসামী হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে জামাল আহমদ জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে দেখার কথা নয়। হয়তো সে হামলা করে বাবুর বাজারে গিয়েছে। জামালের দাবী, শাহজাহানই তার উপর হামলা করেছে। চাঁদা দাবীর অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, শাহজাহানের পরিবারের কাছে তিনি চাঁদা দাবী করেননি। শাহজাহানকে ডাকাতি মামলায় তিনি স্বাক্ষী করার কথা কখনো বলেননি। তাজন মেম্বার কি বলছেন না বলছেন তিনি সেটা জানেন না। মুঠোফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন।

পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগকারী হেলাল আহমদ বলেন, জামালের চাহিদাকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে পারলে এখন হয়তো মিথ্যা মামলায় তার ভাই হয়রানীর শিকার হতে হতো না। জামাল মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার বহু মানুষকে হয়রানী করেছেন। তার নাম শুনলে অসহায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। সে কথিত ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হেনাস্তা করেছেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সখ্যতা গড়ে তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানীর হুমকি দেন। এলাকায় জামাল এক ‘ভয়ঙ্কর’ নাম। জামালের চাঁদাবাজীর ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভালো করে দেখা হচ্ছে। ফুটেজ দিয়েছে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন। তবে জামালের চাঁদা দাবীর বিষয়ে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, তদন্তের জন্য এখনো অভিযোগটি আমাদের কাছে আসেনি। এ ব্যাপারে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর সাথে মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর