জীবন যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ভোটের জোয়ারে ভাসছেন সাবেক ছাত্রনেতা ফারুক

ওমর ফারুক, জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জের সব মহলেই পরিচ্ছন্ন ইমেজধারী হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রনেতা ফারুক আহমদ জীবন যুদ্ধে জয় করে এখন ভোটের জোয়ারে ভাসছেন। ভোটের হিসেবে ফ্যাক্টর প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম এখন বেশ আলোচিত। অল্প কয়েকদিন আগেই তিনি সিলেটের একটি ক্লিনিকে ভুল অস্ত্রপাচারের শিকার হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছিলেন। পরে রাজধানী ঢাকার বিআরবি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। তাঁর অসুস্থতার খবরে উপজেলা জুড়ে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছিলো। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সর্বদলীয় নেতাকর্মী তাঁর সুস্থতা কামনায় দোয়া ও শিরনী বিতরণ করেন। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ফারুক আহমদ। এরমাঝে ঘোষণা হয় জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল। ভোটাররা আগে থেকেই তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অবগত ছিলেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর থেকে নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে অনেকটা ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়।

সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে মনোনয়ন চান ফারুক আহমদ। তাঁর সাথে আরও ৫জন নেতা দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিনের উপর আস্থা রেখে তাকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে। এতে ফারুক আহমদ ও উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক আহবায়ক আব্দুল আহাদ বিদ্রোহী প্রার্থী হন।

ফারুক আহমদ ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলে অল্প ভোটের ব্যবধানে দলীয় প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিনের কাছে হেরে যান। তবে সেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনো বির্তক শেষ হয়নি।

ছাত্রজীবন থেকে ফারুক আহমদ ছিলেন সৎ ও সাহসী ছাত্রলীগ কর্মী। দলের জন্য কেটেছেন একটানা ৫ বছর জেল। অনিয়ম, দুর্নীতি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্ছার। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়সহ বার বার অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জেল জীবন ভোগ করেছেন। তাঁর এমন কর্মকান্ডগুলো উপজেলা জুড়ে ছিল বেশ আলোচিত। ফারুক আহমদ প্রথমে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক, এরপর জেলে থেকে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক, জেলা যুবলীগের সদস্য হয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হন। গত বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হন। তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজে ভোটের মাঠে বড় প্রভাব ফেলে। ফ্যাক্টর প্রার্থীদের তালিকায় বার বার তাঁর নাম ভেসে উঠে। এবারও তিনি ফ্যাক্টর প্রার্থীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।

পৌর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্য মেয়র প্রার্থীদের সাথে পাল্লা দিয়েই ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করে ফারুক আহমদ ভোটের মাঠে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সদ্য সুস্থ হওয়া ফারুক আহমদকে ভোটারগণ প্রচারণায় পেয়ে উচ্ছ¡সিত হয়ে আবেগে জড়িয়ে ধরছেন। কেউ কেউ আবার কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নাও করতে দেখা যাচ্ছে। আবেগে কাঁদছেন ফারুকও। ভোট দেবার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন সাধারণ ভোটারগণ। ভোটের মাঠে সৃষ্টি হচ্ছে আবেগময় এক অন্যরকম পরিবেশ। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে ফারুক আহমদ এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে অনেকেরই ধারণা রয়েছে।
পৌর এলাকার ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ মোট ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।

তাঁরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন (নৌকা)। বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহবায়ক সাবেক মেয়র ইকবাল আহমদ তাপাদার (ধানের শীষ)। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন পৌর জাপার সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক (লাঙল)। আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ফারুক আহমদ (জগ), আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ), বিএনপি বিদ্রোহী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা (চামচ), স্বতন্ত্রভাবে পৌর আল ইসলাহর সভাপতি হিফজুর রহমান (মোবাইল), সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম (হ্যাঙ্গার)। তবে পৌরসভায় নানা কারণে এবার প্রতীকের চাইতে ব্যক্তি ইমেজের গুরুত্ব বেশী লক্ষ করা যাচ্ছে। ভোটের হিসেব নিকেশে বার বার আলোচনায় স্থান পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রতীকের প্রার্থী ফারুক আহমদ, আব্দুল আহাদ ও হিফজুর রহমান।

ভোটারদের ধারণা, ক্লিন ইমেজের কারণে ও অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসায় ফারুক আহমদ নির্বাচনী মাঠে বেশ আলোচিত হচ্ছেন। তাছাড়া গতবারের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে তাঁর ভোটের জোয়ার চোখে পড়ার মত। তাঁর সাথে এখন পর্যন্ত শক্ত টক্করে রয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক আহবায়ক দলের বিদ্রোহী আব্দুল আহাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আল ইসলাহর সভাপতি হিফজুর রহমান।

তবে ভোটাররা জানান, নির্বাচনী চিত্রের মেরুকরণ যেকোন সময় হতে পারে। সবশেষে আলোচনায় আসতে পারেন নৌকার প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন ও বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদারসহ অন্য প্রার্থীরাও। নানা কারণে অনেক প্রার্থীর ভোট ব্যাংকে ভাঙনের সুর রয়েছে। মেরুকরণ ঘটলে ভোটের হিসেব নিকেশ পরিবর্তন হতে পারে বলে একাধিকজন নিশ্চিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর