জকিগঞ্জে জাল আপোষনামা দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে শ্যালক ছাড়িয়ে নিলেন চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জে জাল আপোষনামা তৈরী করে থানা হাজত থেকে এক আসামি মুক্ত হয়েছে। ঐ আসামি জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সেনাপতিরচক গ্রামের মুহিবুর রহমান ময়নার ছেলে ও সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের শ্যালক বদরুল আলম আফজল। গত সোমবার বাবুর বাজারের একটি দোকানে আফজলের নেতৃত্বে হাতুড়ি বাহিনীর কয়েকজন যুবক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। হাতুড়ি বাহিনীর হামলায় দোকান মালিকসহ মোট ৩জন আহত হন। এরমধ্যে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সিলেটে প্রেরণ করা হয়েছিলো।

এ ঘটনায় চেয়ারম্যান শ্যালক বদরুল আলম আফজলকে আটক করে পুলিশ। ঐ রাতে আফজলসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে দোকান মালিক ইকবাল আহমেদ থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র পাঠান। এ অভিযোগের পর ঘটনাটি আপোষে মিমাংসা করতে তৎপর হন সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন লোক। কিন্তু মামলার বাদী সিলেটে চিকিৎসাধীন থাকায় ঐ রাতে আপোষ হয়নি ঘটনাটি। পুলিশ হেফাজতে থেকে যায় আটক বদরুল আলম আফজল। মঙ্গলবার দিনের বেলায় বিষয়টি আপোষে নিষ্পত্তি হয়েছে মর্মে জকিগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে একটি জাল আপোষনামা দেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। পরে থানা পুলিশ এ আপোষনামার উপর ভিত্তি করেই আফজলকে প্রায় ২০ ঘন্টা পর থানা হাজত থেকে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জিম্মায় মুক্তি দেয়।

এ খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে জকিগঞ্জ থানায় গিয়ে হাজির হন মামলার বাদী ইকবাল আহমেদ। তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে জানান, হাতুড়ি হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তিনি কোন আপোষ করেননি। আসামি পক্ষের লোকজন জাল আপোষনামা দাখিল করে আসামিকে মুক্ত করেছে। এমন কথা শুনে ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে তাৎক্ষণিক থানায় আসতে বলেন। রফিকুল ইসলাম থানায় আসার পর মামলার বাদীর সামনেই আপোষনামা নিয়ে কথা বলেন ওসি। তখন নিশ্চিত হন মামলার বাদী ইকবাল আহমদের স্বাক্ষর জাল করে পুলিশের কাছে আপোষনামা দিয়ে আসামি মুক্ত করা হয়েছে। পরে ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের নির্দেশ দেন আসামি আফজলসহ যারা তাকে মুক্ত করতে জড়িত ছিলেন সবাই রাতে থানায় আসতে হবে। কিন্তু রাতে তারা কেউ থানায় না আসায় পরে ওসি বুধবার বিকেল ৩টায় মামলার বাদী ও আসামি আফজল এবং তাকে ছাড়িয়ে নিতে যারা থানায় এসেছিলেন সবাইকে থানায় ডাকেন। পরে উভয় পক্ষের লোকজন রাত ১০টায় থানায় যাবেন বলে জানিয়েছেন।

মামলার বাদী ইকবাল আহমেদ বলেন, তার স্বাক্ষর জাল করে আসামি পক্ষের লোকজন আসামি আফজলকে থানা থেকে মুক্ত করেছে। পুলিশের সাথে আসামি পক্ষের জালিয়াতির ঘটনা শুনে তিনি থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসার জন্য সিলেটে ছিলেন এ সুযোগে আসামি পক্ষের লোকজন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। জালিয়াতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে ইকবাল পুলিশের কাছে দাবী জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সোমবার বিকেলে বাবুর বাজারে ব্যবসায়ীর দোকানে হামলার ঘটনা শুনেই পুলিশ বদরুল আলম আফজল নামের একজনকে জড়িত সন্দেহে আটক করে। পরে ইকবাল আহমেদ বাদী হয়ে আটক ব্যক্তিসহ ৬ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর বিষয়টি আপোষে মিমাংসা করতে প্রক্রিয়া শুরু করেন সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামসহ স্থানীয়রা। তখন বাদীর সাথে আমি বিষয়টি নিয়ে মোবাইলে কথা বলে তাকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় থানায় আসার জন্য বলি। তাকে বলেছিলাম স্থানীয়ভাবে আপোষ করলে লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করবেন এবং আপোষ না করলে অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করবো। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত বাদী ইকবাল আহমেদ থানায় আসেননি এবং তার মোবাইল বন্ধ করে দেন। আমরা বার বার বাদীর মোবাইলে কল করে বন্ধ পেয়েছি। এর মধ্যে বাদী ইকবাল আহমদের স্বাক্ষরিত একটি আপোষনামা দেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। এ আপোষনামার উপর ভিত্তি করে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জিম্মায় আসামিকে ছেড়ে দেই। বুধবার রাত ১০টার দিকে বাদী থানায় হাজির হয়ে জানান, আপোষনামাটি তার স্বাক্ষরিত নয়। জাল স্বাক্ষর দিয়ে আসামী পক্ষের লোকজন জালিয়াতি ও প্রতারণা করেছে। এমতাবস্থায় স্বাক্ষরটি যাচাই বাছাই করে প্রাথমিকভাবে জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে রাত ১০টায় ৩টায় উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।

জালিয়াতি প্রসঙ্গে সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কি বলেছেন ওসিকে এমন প্রশ্ন করা হলে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন অন্যরা কাগজটি তার হাতে দিয়েছে। তিনি সরল বিশ্বাসেই এটা আমাদেরকে দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর