জকিগঞ্জে এবারো আনসার সদস্যদের ভাতা মেরে দিলেন সেই দুই কর্মকর্তা

আল হাছিব তাপাদার:: দুর্গা পূজার সময় মন্ডপে দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্যদের ভাতা এবারো মেরে দিয়েছেন জকিগঞ্জ উপজেলার বির্তকিত সেই আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী ও প্রশিক্ষক আবু তাহের। গণমাধ্যমের নজর এড়িয়ে এবার আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী ও প্রশিক্ষক আবু তাহের ভাতার টাকা আত্মসাৎ করতে ছিলেন কৌশলী ভূমিকায়। এ ক্ষেত্রে তারা নতুন ফর্মূলা তৈরী করে আনসার সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাতার আংশিক টাকা নিয়ে হাজির হন। কয়েকজন সদস্য বাড়িতে বসে নামেমাত্র ভাতার টাকা নিলেও অনেক সদস্য ভাতার টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাদেরকে উপজেলা আনসার অফিসে আসতে বলেন আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী।

রবিবার বিকেলে আনসার সদস্যরা ভাতার টাকা নিতে অফিসে আসলে সারাদিন বসিয়ে সন্ধ্যার দিকে আনসার কর্মকর্তা ভাতার টাকা বিতরণ শুরু করেন। তখন প্রতি ৫ জনের গ্রুপ থেকে ১ জনের ভাতার টাকা রেখে ও অন্যদেরকে আংশিক টাকা দিয়ে দেনা মিঠিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে বিক্ষোব্ধ হয়ে উঠেন আনসার সদস্যরা।

খবর পেয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় উপজেলা আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী তার অফিসে কয়েকজন লোক ভাড়া করে বসিয়ে রেখে প্রশিক্ষক আবু তাহেরকে দিয়ে মাস্টার রোলের কপিতে স্বাক্ষর করাচ্ছেন। পাশে বসে থাকা মনিটরিং কর্মকর্তা সিলেট সদর উপজেলার আনসার কর্মকর্তা এমাদ উদ্দিন নিরবে বসে আছেন। মনিটরিং কর্মকর্তার সামনেই প্রতিটি পূজা মন্ডপের দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে আংশিক ভাতা বিতরণ করা হচ্ছে। কেউ আংশিক টাকা নিতে অপারগতা স্বীকার করলে আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী ও মনিটরিং কর্মকর্তা এমাদ উদ্দিন নানা ধমক দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেন এবং একই লোক দিয়ে মাস্টার রোলের কপিতে সবার ভাতা প্রাপ্তির স্বাক্ষর করিয়ে নেন।

তাৎক্ষণিক এমন স্বাক্ষরের বৈধতা নিয়ে আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী ও প্রশিক্ষক আবু তাহেরকে প্রশ্ন করা হলে, আর এমন হবেনা বলে তারা ভূল স্বীকার করে উত্তেজিত হয়ে আনসার সদস্যদের মাঝে ভাতা প্রদান বন্ধ করে দেন। এরআগে যে সকল আনসার সদস্য গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অনিয়ম নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তাদের মধ্যে অনেকের হাত থেকে ভাতার টাকাও কেড়ে রেখে দিতে দেখা যায়। ঘটনাটির ভিডিও ধারণ করেছেন উপস্থিত কয়েকজন।

জানা গেছে, উপজেলার ৯৩ টি পূজা মন্ডপে খাতাপত্রে ৫ জন করে মোট ৪৬৫ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন বলে দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিটি মন্ডপে একজন দলনেতার নেতৃত্বে ৩/৪ জন সদস্য দিয়েই দায়িত্ব পালন করান আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী। সরকার সাধারণ আনসারের ভাতা ২৩শ ৬০ টাকা ও দলনেতার ভাতা ২৬শ ১০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এরপরও উপজেলা আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী ও প্রশিক্ষক আবু তাহের সাধারণ আনসারকে ১৫ শত থেকে ২০ হাজার টাকা হারে ও দলনেতাকে ২ হাজার থেকে ২৩ টাকা হারে ভাতা দিয়ে নিজের লোক দিয়ে মাস্টার রোলের কপিতে ভাতা প্রাপ্তির স্বাক্ষর করে নেন। কেউ এর প্রতিবাদ করলে ভাতার টাকাও আটকে দিতে দেখা গেছে। দলনেতারা উপজেলার ৯৩টি পূজা মন্ডপে দায়িত্ব পাওয়ার আগেও উৎকুচ দিতে হয়েছিলো এমন বিস্তর অভিযোগ রয়েছে বিধান চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই আনসার সদস্যদের মনে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে বিলাল আহমদ নামের এক আনসার সদস্য জানান, বিধান চক্রবর্তী গণমাধ্যমের চোখ এড়িয়ে অনিয়ম করার পথ তৈরী করে অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাতার টাকা বিতরণ করেছেন। আমাকেও দলনেতার বাড়িতে ডেকে নিয়ে নামেমাত্র ভাতা দেয়ার চেষ্ঠা করেন আমি সেখানে যাইনি ভাতা আনতে। বাড়িতে গিয়ে ভাতা দেয়ার ঘটনায় তিনি বিস্মত হয়েছেন।

স্মৃতি রানী নামের দলনেত্রী জানান, বাড়িতে বসে আংশিক টাকা পেতাম সেই অফার ছিলো কিন্তু ভাতার পুরো টাকা পাওয়ার জন্য রবিবার অফিসে এসেছিলাম। অফিসে আসার পর সারাদিন বসিয়ে রাখেন আনসার কর্মকর্তা। সন্ধ্যার দিকে ভাতার টাকা দিয়েছেন তাও আমার ৫ জনের গ্রুপের মধ্যে চারজনের আংশিক ভাতা পেয়েছি। ১ জনের আংশিক ভাতাও আর পাবো না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

শামিম আহমদ নামের একজন দলনেতা জানিয়েছেন ৫ জনের গ্রুপের মধ্যে ৪ জনের ভাতা পেয়েছি। প্রতিটি গ্রুপের একজনের ভাতা মেরে দিয়েছেন আনসার কর্মকর্তা। বেশ কয়েক বছর একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে বিধান চক্রবর্তী অনিয়মের শিকড় পুতে ফেলেছেন। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে পরে আর দায়িত্ব পাওয়া যায়না বলেই কেউ প্রতিবাদ করতে যায়না। এরপরও অতীতে অনেকবার আমরা লিখিত দিয়েছি বিভিন্ন দপ্তরে কিন্তু এরপরও তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা আনসার প্রশিক্ষক আবু তাহের বলেন, কয়েকটা মাস্টার রোলে একই ব্যক্তি দিয়ে স্বাক্ষর করানো হলেও পরে তা আর হয়নি। বিধান চক্রবর্তী বাড়িতে গিয়ে টাকা দিলে তা তিনি জানেন কেন দিলেন। প্রকৃতপক্ষে বাড়িতে গিয়ে টাকা দেয়ার কোন নিয়ম নেই। আমি যা করি উনার কথায় করতে হয়।

উপজেলা আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী এ নিয়ে বলেন, অফিস আমি আমার মত করেই চালাবো। অফিস যারা চালায় তারাই জানে কিভাবে অফিস চালাতে হয়। লেখালেখি করে লাভ নেই। গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার পর একজন সদস্যর টাকা কেন কেড়ে নিলেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন পরে আবার ফেরত দিয়েছি তাতে আপনার সমস্যা কোথায়? বিষয়টি নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার মানে কি? অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজনকে দিয়ে মাস্টার রোলের কপিতে একাধিকজনের স্বাক্ষর ভূলে করানো হয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ’র সাথে এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো। প্রসঙ্গত এরআগে আনসার কর্মকর্তা বিধান চক্রবর্তী প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতা মেরে ও নানা কর্মকান্ডে গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর