জকিগঞ্জ আ.লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিলুপ্তি চায় ত্যাগীরা, নেতৃত্বে আসছেন কারা?

আল হাছিব তাপাদার:: আজ বুধবার সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা। হতে পারে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এমন গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তবে এরই মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়া নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হয়েছে নানা বির্তক। পদপদবী পেতে পারেন হাইব্রিড ও সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সুবিধাভোগী কয়েকজনের নাম রয়েছে এমনটা চাউর হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে। দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদপদবী থেকে বাদ পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

দলীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র থেকে জানাগেছে, বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে জকিগঞ্জের রাজপথে যারা আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখে মামলা, হামলা, কারাবরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সেই নেতাদের মধ্যে অনেকের স্থান হচ্ছেনা উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ত্যাগী অনেকের স্থান হলেও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদপদবী থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দলীয় সূত্রটি এমন তথ্য নিশ্চিত করে আরও জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটিতে স্থান পেয়েছেন হাইব্রিড ও সুবিধাভোগী বেশ কয়েকজন নেতা। খসড়া কমিটিতে স্থান পাওয়া নেতাদের মধ্যে অনেকের প্রতি রয়েছে তৃণমূলের চরম অনিহা।

তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের সাথে এ নিয়ে কথা হলে তারা বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি বিলুপ্ত না করে পূর্ণাঙ্গ করাটা দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যক্রম। উপজেলা আওয়ামীলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে গঠনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি গঠন করলে দলের মাঝে কোন্দল সৃষ্টি হবেনা। তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামীলীগ আরো বেশী শক্তিশালী হবে বলে মত দিয়েছেন আহবায়ক কমিটির সাবেক তৃণমূল নেতারা।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক কমিটির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানাগেছে, ১৫ বছর পর ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না করে লোকমান উদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও মোস্তাকিম হায়দরকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যর কমিটি ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। সে সময় দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদের প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক হাজী লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মালিক মালই মিয়া, যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল, জকিগঞ্জ সদর ইউপির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।

সাধারণ সম্পাদক পদের প্রত্যাশী ছিলেন সাচিবিক যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাকিম হায়দর, যুগ্ম আহবায়ক এমএজি বারব, যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম ও আবু জাফর রায়হান। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল না করে সভাপতি পদের প্রত্যাশীদের মধ্যে লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রত্যাশী মোস্তকিম হায়দর ছাড়া অন্য প্রার্থীদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেন। জেলা আওয়ামীলীগের এমন নির্দেশের পর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী প্রার্থীরা প্রার্থীতা প্রত্যাহার করলেও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রত্যাশী ফারুক আহমদ ছিলেন প্রার্থীতা প্রত্যাহারে অনড়। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা সহ সভাপতি আশফাক আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীসহ জেলা নেতৃবৃন্দ ফারুকসহ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা নেতাদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে মূল্যায়ন করবেন এমন আশ্বাস দিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করিয়ে নেন। সেই ১৫ দিনের বাস্তবায়ন হয়নি প্রায় ৪ বছরেও। এরমধ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। আজ জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পায়তারা হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ হলে তৃণমূলে অসন্তুষ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ নিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ বলেন, দলের দুঃসময়ে জেল জুলুমসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন দলের সুসময়ে কোণঠাসা করতে রাখতে চায় সুসময়ের কুকিলরা। আমার রাজনৈতিক জীবনের করুণ ইতিহাসকে পেছনে ফেলে রেখে কেউ আমাকে দলীয় পদপদবী থেকে অবমূল্যায়ন করলে বঙ্গবন্ধুর আর্দশ বুকে লালন করে আজীবনে আওয়ামীলীগের সাধারণ কর্মী হয়ে কাজ করে যাবো। তবে দুর্দিনে ঠিকই আগের মত জেলজুলমকে উপেক্ষা করে রাজপথে সরব থাকবো।

জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, র্দীঘদিন থেকে আওয়ামীলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হুট করে পূর্ণাঙ্গ করা দলীয় গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করার শামিল। পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে ত্যাগীদের বাদ দেয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে জকিগঞ্জ আওয়ামীলীগকে কুক্ষিগত করতে চায় একটি মহল। যারা বিএনপি জোট সরকারের আমলে দলের জন্য সহায় সম্পত্তি ও যৌবনের বেশী সময় দিলো তাদেরকে বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগের কমিটি করা হলে নেতাকর্মীরা মেনে নিবেনা। আমি মনে করি মেয়াদোত্তীর্ণ ২ সদস্যর উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি বিলুপ্ত করে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন কমিটি গঠন করা হলে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামীলীগ শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হবে।

জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য ও আওয়ামীলীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত না করে পূর্ণাঙ্গ করাটা আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কার্যক্রম। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মারুফ বখতিয়ার চৌধুরী র্খুরম বলেন, ২ সদস্যর উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটির মেয়াদ ৩ বছর আগে শেষ হয়েছে। এখন নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলন করা প্রয়োজন। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করলে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামীলীগ দূর্বল হয়ে পড়বে। উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সজল বর্ম্মন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিটিতে ত্যাগীদের স্থান দেয়া হচ্ছেনা। হিন্দু সম্প্রদায় থেকে খসড়া কমিটিতে মাত্র ১জনকে স্থান দেয়া হয়েছে।

এ নিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে এটা ঠিক নয়। সংগঠন গঠনতন্ত্র মোতাবেক চলবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের ২ সদস্যর কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হলে জেলা শাখা সিদ্ধান্ত নেবেন। ত্যাগীদের বাদ পড়া প্রশ্নে বলেন, আমি ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রধান এজেন্টে ছিলাম তাই কে ত্যাগী আর কে ত্যাগী নয় তাদেরকে চিনি। প্রকৃত ত্যাগীরা কখনো বাদ পড়বেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর