সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি পর্যবেক্ষণে উচ্চ প্রযুক্তির কারিগরি যন্ত্র কিনতে যাচ্ছে সরকার। গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করতে এসব যন্ত্র কেনা হচ্ছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সরাসরি ক্রয় বা ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতি অনুসরণ করে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হবে। ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপশন সিস্টেম এবং মোবাইল ইন্টারসিপেটর-জিএসএম সেলুলার/ মোবাইল ডিভাইস সাবসক্রাইভার ‘অফ দ্য এয়ার’ ম্যাস ইন্টারসেপশন সিস্টেম (জিএসএম+ ডাউনগ্রেডেড ইউএমটিএস) যন্ত্র দুটি কিনতে লাগছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপশন সিস্টেম কিনতে লাগছে ২৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং মোবাইল ইন্টারসিপেটর-জিএসএম সেলুলার/মোবাইল ডিভাইস সাবসক্রাইভার ‘অফ দ্য এয়ার’ ম্যাস ইন্টারসেপশন সিস্টেম (জিএসএম+ ডাউনগ্রেডেড ইউএমটিএস) কিনতে লাগছে ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো যন্ত্র দুটি কেনার প্রস্তাবে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে উচ্চ প্রযুক্তি বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ২৪শে আগস্ট জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই) একটি প্রস্তাব পাঠায়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে প্রায় প্রতিটি প্রতারণা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হুমকি, জঙ্গিবাদ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোবাইল ফোন এবং মোবাইল ফোনভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিরসনে এবং অল্প সময়ের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গোয়েন্দা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে মোবাইল ইন্টারসেপ্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ইন্টারনেট প্রযুক্তির অপব্যবহারকারীরা বিকল্প ও উন্নত যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতায় দিন দিন ওয়েব বেইজড ডাটা প্ল্যাটফরমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এতে বলা হয়, দ্রুত ধাবমান প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরাও এসব নিত্য নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভ্যস্ত ও দক্ষ হয়ে উঠছে। ফলে অপরাধীদের যোগাযোগ ও বার্তা দেয়ার বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করা এবং তাদের কার্যক্রম অবগত হওয়া ও তাদের সঠিক অবস্থান নিরুপণ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এ কারণে বর্তমানে ওয়েব বেইজড প্রযুক্তির ল’ফুল ইন্টারসেপশন বা ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপশন সিস্টেম অত্যন্ত সময় উপযোগী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এনএসআই মনে করছে তিন কারণে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতি অনুসরণ করে উচ্চ প্রযুক্তির কারিগরি যন্ত্রপাতিগুলো কেনা প্রয়োজন। কারণ হিসেবে এনএসআইয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উচ্চ প্রযুক্তির বিশেষায়িত কারিগরি যন্ত্রপাতির সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ এবং সুনির্দিষ্টভাবে স্পেসিফিকেশন তৈরি করে সুপারিশ দেয়ার জন্য গঠিত উপ-কমিটির সভার আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, মোবাইল ইন্টারসেপ্টর এবং ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর-এর মতো বিশেষায়িত এসব যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা হলে অত্র সংস্থার (এনএসআই) গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তথ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
এছাড়া দেশে বিদ্যমান জঙ্গি পরিস্থিতি বিবেচনায় অত্র সংস্থার (এনএসআই) গোয়েন্দা কার্যক্রম বেগবান করতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সম্পূর্ণ ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অত্যন্ত সহায়ক হবে। এর আগে এনএসআইয়ের জন্য বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি বা ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এনএসআইয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী এ দুই যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
সূত্র: মানবজমিন।
Leave a Reply