আল হাছিব তাপাদার:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির ২০ দলীয় জোটের মনোনীত হয়ে কোন আসনে শরিকদলের কে প্রার্থী হবেন সে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এতে আওয়ামীলীগ-বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সিলেট-৫ আসনের নেতাদের স্বপ্ন ভাঙ্গতে পারে।
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত হওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনটিও রয়েছে। এ আসনটি এবারো আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তার শরিকদল জাতীয় পার্টিকে ও ঐক্যফ্রটে থাকা বিএনপি তার ২০ দলীয় জোটের শরীকদল জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহাজোট ও জোটের শরিক দলের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে আসন বন্টন করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
সে অনুযায়ী, সিলেট-৫ আসন গত বারের মত এবারো মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির হাতে ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের হাতে ছেড়ে দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এবারের নির্বাচনে সিলেট-৫ আসন নিজেদের কাছে ধরে রাখার চেষ্ঠা করলেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আসনটি চেয়ে বসায় বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে কারণে এবারো এ আসনে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী যেকেউ ভোটের মাঠে লড়তে পারেন। তবে কে হচ্ছেন মহাজোটের প্রার্থী তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানাগেছে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ধারণা শেষ পর্যন্ত মহাজোটের এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটতে পারে। নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগের যেকেউ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে থাকবেন।
জাপার দলীয় সূত্র জানায়, এ আসনে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাপা চেয়ারম্যানের আন্তর্জাতিক উপদেষ্ঠা আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন এমপি, জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাব্বির আহমদ ও জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা শিল্পপতি এম জাকির হোসেইন। এই তিন হেভিয়েট নেতার মধ্যে ঘুরতে পারে মহাজোটের টিকেট।
এদিকে, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে গঠন হওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সিলেট-৫ আসনে জামায়াত নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে চূড়ান্ত করে রেখেছেন ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির হাই কমান্ডের নেতারা। এতে স্থানীয় বিএনপির স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের কথা শুনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন, জামায়াত নেতা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী অতীতে এ আসন থেকে থেকে বিএনপি জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে সংসদে গেছেন কিন্তু বিএনপিকে তিনি অনেকটা এড়িয়ে চলেছেন। এতে জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির ভিত্তি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপরও জকিগঞ্জ-কানাইঘাট নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার উদাহরণ হিসেবে তারা, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি সামনে এনেছেন। নির্বাচনী এলাকার এ দুটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুই নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, জামায়াতের প্রার্থীকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি জোটের প্রার্থী করা হলে ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থক সাধারণ মানুষকে পক্ষে আনা যাবেনা। বিষয়টি মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে তারা ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির হাই কমান্ডের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
অপরদিকে, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি থেকে প্রার্থীতার আভাস পেয়ে মাঠ গুছাতে শুরু করেছে জামায়াত। মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যেকোন মূল্যে হারানো আসনটি উদ্ধার করতে তারা কৌশলী অবস্থানে থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
Leave a Reply