এখলাছুর রহমান:: স্যারকে বলেছিলাম, আপনাকে তারা খুব বেশি জানেনা, যারা নতুন প্রজন্মের। আপনার বিষয়ে নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানে না বিস্তারিত। আপনার বিষয়ে পুরোটা জানাতে চাই। নতুন প্রজন্ম জানবে, পুরোপুরি জানবে, একজন মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে। সবদিক থেকেই তিনি একজন প্রতিথযশা নাট্যকার, একজন অভিনেতা, একজন পরিচালক, একজন নির্দেশক, একজন শিক্ষক, শিল্পী, উপস্থাপক লেখক হিসেবেই শুধু নয়। নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। একজন পরিপূর্ণ মাজেদ আহমদ চঞ্চল স্যারকে। আমাদের প্রিয় নাট্যজনকে। নতুনদের জানতে হবে চির নতুন মাজেদ আহমদ চঞ্চলকে।
তাঁর সাথে আমার পরিচয় ১৯৭৮ সালে স্কুল জীবনে। আমি তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। তখন তিনির সম্পাদনায় “সীমান্তিক” নামের একটি সাহিত্য সংকলন নিয়মিত প্রকাশ হতো। এ সংকলনে আমি মাঝে মাঝে লিখতাম। এ সুবাদে ছাত্র জীবনেই একজন কর্মবীর মাজেদ আহমদ চঞ্চলের সাথে আমি পরিচয় হয়। তিনির সাথে আমার ভাই সুলভ সম্পর্ক। আমার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় আমি খুব কাছে থেকেই উনার অনেক লুকানো গুণাবলী দেখতে পেরেছি। আনন্দ ভাগাভাগির দারুণ একটা জ্বলন্ত উদাহরণ আমাদের শ্রদ্ধেয় মাজেদ আহমদ চঞ্চল ভাই। অনেক সিরিয়াস বিষয়কে এতোটা তরল করে দিতে পারেন তিনি। এতে বিস্মিত হতে বাধ্য যে কেউই। এতো বড় মাপের মানুষ। অথচ এতো বিনয়, এতোটা বিনম্র। খুব কমই দেখেছি আমার ক্ষুদ্র এ জীবনে। জকিগঞ্জের মানিকপুর ইউপির নুরপুর গ্রামের মৃত নজমুল ইসলামের সুযোগ্য সন্তান মাজেদ আহমদ চঞ্চল।
পড়াশুনা করেছেন: ১৯৭৮ ইংরেজীতে ইছামতি স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮০ ইংরেজীতে সিলেট মদনমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি, মদনমোহন কলেজ থেকেই বি.কম ১৯৮৩ ইংরেজীতে ও বিএড এবং এমএড সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন সময়ে অনেক বিষয়ের উপর কৃতৃত্বের সাথে নিয়েছেন প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকতা: তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয় গোলাপগঞ্জের আল এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর জকিগঞ্জের হাফিজ মজুমদার বিদ্যানিকেতন, গণিপুর কামালগঞ্জ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে তিনি তিনি ঐতিহ্যবাহী আটগ্রাম লুৎফুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিগত জীবন: ব্যক্তিগত জীবনে বিধির বিধান অনুসারে তিনি গোটারগ্রামের সেলিনা আক্তারের সাথে বিবাহে আবদ্ধ হন। মাজেদ ভাই ও সেলিনা ভাবির পারিবারিক জীবনে ১ মেয়ে ২ ছেলে রয়েছেন। পরিবার সামাল দেয়ার পাশাপাশি আমাদের ভাবি সেলিনা আক্তার সেলিও একজন সরকারী চাকুরীজীবি ও সাহিত্যিমনা মানুষ। প্রায় সময় রসালো কবিতা লেখে মাজেদ ভাইয়ের মত তিনিও সাড়া জাগিয়েছেন।
লেখালেখিতে তাঁর দক্ষতা: ১৯৭৮ সাল থেকে সিলেট কন্ঠ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯৮৪ সালে তখনকার সিলেটের স্থানীয় প্রভাবশালী সাপ্তাহিক যুগভেরী পত্রিকায় জকিগঞ্জ প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় উল্লেখযোগ্য দুটি কবিতার বই’সহ অসংখ্য সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। একজন মাজেদ আহমদ চঞ্চলের রসাত্মক অনেক লেখা এখনো স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। কলম যুদ্ধের জগতে পরিচিত এক নাম মাজেদ আহমদ চঞ্চল।
মিষ্টিভাষী শিল্পী: মাজেদ আহমদ চঞ্চল একজন মিষ্ঠিভাষী শিল্পী, কবি, সুবক্তা, সিলেট বেতারসহ বিভিন্ন সময়ে নাট্য রচনা ও অভিনয় করেছেন। চিত্রনাট্যের এবং অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন পুরস্কার।
একজন স্বাধীনতা প্রেমী: বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা বিষয়ে তাঁর অনেক উল্লেখযোগ্য নাটক রয়েছে। নাটকে ছন্দনামে পাঠ নেয়া সেই ব্যক্তিটিই আমাদের মাজেদ আহমদ চঞ্চল। মাজেদ আহমদ চঞ্চল সুদৃঢ় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, আদর্শের বিষয়ে তিনি কখনো কোনো আপোষ করতে রাজী নন। নীতি-আদর্শে দৃঢ়চেতা, স্বাধীনচেতা, নির্লোভ-নিরহংকার, তারুণ্যভরা চির নতুন, আধুনিক সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রপথিক এমন ব্যক্তিত্ববান সফল পুরুষ সম্পর্কে জানবার-জানাবার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরই। খুব কঠিন সময়ের কঠিন কথাগুলো অতি সহজ করে হাস্যরস দিয়ে আনন্দবর্ণনায় সার্বজনীন উপস্থাপনের নিপুণ কারিগরের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা।
Leave a Reply