ভোর হলেই জকিগঞ্জের ৯ ইউপিতে ভোট গ্রহণ, কারা আসছেন শেষ লড়াইয়ে?

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: আজ রাত পোহালেই জকিগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ভোট উৎসব শুরু হবে। পঞ্চম ধাপে এ উপজেলার ৯টি ইউপি ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিরামহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম পৌছে গেছে ভোট কেন্দ্রগুলোতে। তবে ব্যালেট পেপার বুধবার ভোরে সকল সেন্টারে পৌছাবে। শেষ পর্যন্ত সহিসংতা ছাড়া ভোট উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক আকারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা, আনসার সদস্যসহ প্রায় এক হাজারেরও বেশী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

তাছাড়াও ভোট উৎসবে কেউ যাতে ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য জুডিসিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্ট্রাইকিং ফোর্স, পুলিশের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউপির ৮১টি ভোট কেন্দ্র নিরাপত্তার চাদরে অনেকটা মোড়ে ফেলা হয়েছে। তবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের দিন ও ফলাফল শেষে যে মাত্রায় সহিংসতা দেখা গেছে এ কারণে জকিগঞ্জের কয়েকটি ভোট সেন্টারে অজানা শঙ্কা রয়েছে জনমনে। উপজেলা নির্বাচন অফিস ৯টি ইউপির মাঝে ১১টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোতে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছে প্রশাসন। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার লক্ষ্যে উপজেলা পরিষদে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, জকিগঞ্জের বারহাল ইউপিতে পুরুষ মহিলা মিলিয়ে মোট ২৩ হাজার ৩৫৬জন ভোটার। এ ইউপিতে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল হামিদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউপি সদস্য সুমন আহমদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, বিএনপি ঘরানোর স্বতন্ত্র প্রার্থী বুরহান উদ্দিন রনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সবুর চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুক্তাউর রহমান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জিয়াউর রহমান চৌধুরী। এদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে নৌকার প্রার্থী মঞ্জুরুল হামিদ চৌধুরী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর মাঝে। বিরশ্রী ইউনিয়নে মোট ১৭ হাজার ৬১৮জন ভোটার রয়েছেন। এ ইউপিতে মাত্র দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার। তাঁর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর দিবেন বিএনপি ঘরানো প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম চৌধুরী পানু। দিন শেষে সন্ধ্যা এলে সামান্য ভোটের ব্যবধানে ফলাফল হতে পারে।

কাজলসার ইউপিতে মোট ১৮ হাজার ৭৭৬জন ভোটার রয়েছেন। এ ইউপিতে মোট ৯জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। নৌকা নিয়ে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জুলকারনাইন লস্কর, বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আশরাফুল আম্বিয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ বাহাদুর, বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট মোস্তাক আহমদ, বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র চেরাগ আলী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আল ইমরান হোসেন, জমিয়তের প্রার্থী মাওলানা হুমায়ুন কবির লস্কর কয়েছ। শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী জুলকার নাইন লস্কর, বিদ্রোহী স্বতন্ত্র আশরাফুল আম্বিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ বাহাদুরের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নানা কারণে হিসেব নিকেশে পরিবর্তন ঘটতে পারে। খলাছড়া ইউপিতে মোট ১৪ হাজার ২৪৪জন ভোটার। খলাছড়া ইউনিয়নে ৫জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরমধ্যে দু’বারের চেয়ারম্যান কবির আহমদ নৌকার মাঝি তাঁর সাথে বিদ্রোহী প্রার্থী, আব্দুল গফুর, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মস্তুফা মাসুক, স্বতন্ত্র প্রার্থী জামরুল হক। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী কবির আহমদ, বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল গফুর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

জকিগঞ্জ সদর ইউপিতে ভোট সব ইউনিয়নের চাইতে কম। পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে মোট ১০ হাজার ৯২৫জন ভোটার। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাওলানা আফতাব আহমদ, তাঁর সাথে হেভিয়েট প্রার্থী বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান আহমদ, জামায়াত নেতা সাবেক চেয়ারম্যান ফয়েজ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সালেহ আহমদ, জমিয়তের দলীয় প্রার্থী জামিল আহমদ আশুক প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। এ ইউপিতে শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী মাওলানা আফতাব আহমদ ও বিএনপি ঘরানো হাসান আহমদের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। সুলতানপুর ইউপিতে মোট ১৮ হাজার ৫১৮ জন ভোটার। এখানে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, জাপা নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল উদ্দিন, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আপন চাচাতো ভাই রিমন আহমদ চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান বুরহান উদ্দিন, বিএনপি নেতা হাসান আহমদ, জাপা নেতা আনোয়ার হোসেন হেলালী। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ভোটের হিসেব নিকেশে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল ও জাপা নেতা জালাল উদ্দিনের মধ্যে শক্ত ত্রিমুখী প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। কিন্তু নানা কারণে ভোটের মেরুকরণ ঘটলে অন্য যেকোন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ত্রিমুখী লড়াইয়ে আসতে পারেন।

বারঠাকুরী ইউপিতে মোট ১৫ হাজার ৮৪৯ জন ভোটার। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দুবারের চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু, তাঁর সাথে ভোটের মাঠে পাল্লা দিচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র নাছির উদ্দিন নছির, বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র আক্তার হোসেন রাজু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফিজ জিল্লুর রহমান তাপাদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান আহমদ খাঁন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র নাছির উদ্দিন নছির, বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র আক্তার হোসেন রাজুর মধ্যে ভোটের টক্কর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কসকনকপুর ইউপিতে মোট ১৪ হাজার ৫৫০জন ভোটার। এ ইউপিতে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ, তার সঙ্গে দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লস্কর, জাপা নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার মঈন ও জাপার দলীয় প্রার্থী সুলেমান লস্কর, স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজ, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লস্কর, জাপা নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার মঈনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা আছে। মানিকপুর ইউপিতে মোট ২১ হাজার ৭২৮ জন ভোটার। এখানে নৌকার মাঝি সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী, বিএনপি ঘরানো স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জাহাঙ্গীর শাহ চৌধুরীর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শিহাব উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ। শেষ পর্যন্ত নৌকার প্রার্থী আবু জাফর মো. রায়হান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাব আহমদ চৌধুরী ও বিএনপি ঘরানো প্রার্থী জাহাঙ্গীর শাহ চৌধুরীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়াও উপজেলার ৯ ইউপিতে সাধারন সদস্য পদে ৩৫১ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ৯৭ জন নারী প্রার্থী ভোটযুদ্ধে রয়েছেন। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই জানা যাবে কারা হাসছেন বিজয়ের হাসি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাদমান সাকীব জানিয়েছেন, ৯টি ইউপিতে অবাদ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। কাউকে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেয়া হবেনা। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। ব্যালেট পেপার সকালে ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনে সুষ্ঠুতার প্রশ্নে আশাঙ্কার কিছু নেই। অবাদ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ শেষ করতে সরকার হার্ডলাইনে রয়েছে। জনগনের ভোটে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।

জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম জানিয়েছেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ৯টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ শেষ করা হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যাক সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তাছাড়াও যেকোন নাশকতা ও অরাজকতা ঠেকাতে যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। ভোট কেন্দ্রে কেউ প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ নেই। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সুন্দরভাবে ভোট উৎসব শেষে জনগনের রায় হাসি মুখে মেনে নিতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর