আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ এমন বচন অনেক দিন আগে থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত আছে। কিন্তু সিলেটের জকিগঞ্জ পৌর নির্বাচনে ভোটাররা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচলিত পুরানো এই বচন অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবারের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত দলীয় প্রতীকের চাইতের ব্যক্তির গুরুত্ব বেশী বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ভোটাররা।
জকিগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পৌরসভার বর্তমান মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন (নৌকা)। বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহবায়ক সাবেক মেয়র ইকবাল আহমদ তাপাদার (ধানের শীষ)। জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হয়েছেন পৌর জাপার সভাপতি সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক (লাঙল)।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ (জগ), উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল আহাদ (নারিকেল গাছ), উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা (চামচ), পৌর আল ইসলাহর সভাপতি হিফজুর রহমান (মোবাইল), সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম (হ্যাঙ্গার)।
পৌর এলাকার একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানাগেছে, স্বাধীনতার পর থেকে জকিগঞ্জ সদরে (বর্তমান পৌর এলাকা) আওয়ামী লীগের আধিপত্য বেশি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘাটি বলে পৌরবাসী দাবি করেন। সেই হিসেবে নৌকা মার্কার জয় পাওয়ার কথা। কিন্তু নৌকার ভোটে ভাগ বসিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদের জগ মার্কা ও আব্দুল আহাদের নারিকেল গাছ। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিল উদ্দিন গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিফজুর রহমানের সাথে তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচিত হয়ে নিজ ভোট ব্যাংকের ভোটারসহ দলের নেতাকর্মীদের মনে খুব একটা জায়গা করে নিতে পারেননি। দলীয় নেতাকর্মীদেও একটি অংশ বর্তমান মেয়রের ভাতিজা সাবেক মেয়রপুত্র আব্দুল আহাদকে ও অন্য একটি অংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা ফারুক আহমদকে দলীয় প্রার্থী চেয়েছিলো। কিন্তু দল খলিল উদ্দিনের উপরই আস্থা রেখেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে খলিল উদ্দিনের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নামেন তার ভাতিজা আব্দুল আহাদ। সর্বস্থরের নাগরিকের ব্যানারে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ফারুক আহমদ। ফলে দলীয় ভোট ৩ ভাগে বিভক্ত হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের যেকেউ বিজয়ী হলে উন্নয়ন কাজ বেশি হবে। দলীয় ভোটের বাইরে ব্যক্তি ইমেজে যিনি বেশী ভোট টানতে পারবেন তিনি এগিয়ে থাকবেন।
এখানে বিএনপির দলীয় ইমেজ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারছে না। ব্যক্তি ইমেজে ইকবাল আহমদ আলোচনায় আছেন। তবে তার ভোটেও ভাগ বসিয়েছেন দলের বিদ্রোহী এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা অনেকটা প্রকাশ্যেই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব রয়েছেন।
বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদ তাপাদারের ব্যক্তি ইমেজ ভাল। পৌর এলাকায় বিএনপি ঘরানো ভোট তেমন বেশী নেই। এরপরও যা আছে তাতে ভাগ বসাবেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন হীরা। এছাড়া ব্যক্তি ইমজে ভোট টানার মতো যোগ্যতাও রয়েছে ইকবাল আহমদের। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের কারণে ভোটারদের কাছে তার এ ইমেজ খুব কাজে আসছে না।
বিদ্রোহী ছাড়াই লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন সাবেক মেয়র আব্দুল মালেক ফারুক। পৌর এলাকায় জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য ভোট না থাকলেও ব্যক্তি ইমেজে আগে মেয়র হয়েছিলেন তিনি। এবার ভোটযুদ্ধ তার জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের। এর কারণ হিসেবে ভোটাররা মনে করেন, পাশাপাশি বাড়িতে রয়েছেন অপর মেয়রপ্রার্থী বিএনপির ইকবাল আহমদ তাপাদার। নিজ ভোট সেন্টারে বিজয় নিশ্চিত করতে দুজনই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের প্রতিষ্ঠিত দলের প্রার্থী হিফজুর রহমান ভোটের আলোচনায় রয়েছেন। তবে পৌর এলাকায় ক্বওমী ঘরানোর ভোট বেশী থাকায় অনেকটা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ক্বওমী-ফুলতলীর পুরনো মতানৈক্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনে আসছে।
পরিকল্পনা করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা সমিতির সভাপতি জাফরুল ইসলাম। তিনি বিগত নির্বাচনে খেলাফত মজলিসের ঘড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও এবার স্বতন্ত্রভাবে হ্যাঙ্গার নিয়ে লড়ছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের কারণে তিনিও আলোচনায় আছেন। তবে নিজের দল খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীরা পাশে নেই।
এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬হাজার ৩ জন এবং নারী ৬ হাজার ৩৪২ জন। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯ জন নারী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
Leave a Reply