জকিগঞ্জে সুপারীর বাম্বার ফলন, হতাশ বিক্রেতা, প্রয়োজন সহযোগীতা

আল হাছিব তাপাদার::
সুপারীকে ঘিরে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনো বিদ্যমান। আশ্বিন কার্তিক মাস এলে নব আনন্দে জেগে উঠে উপজেলার অধিকাংশ মানুষ। সুপারী বছরে অন্তত একবার এনে দেয় এ জনপদের মানুষের হাঁসির ঝিলিক। সীমান্তঞ্চলের এমন কোন বাড়ী নেই যেখানে সুপারী গাছ নেই। বাড়ির আঙ্গিনা, ক্ষেতের আইল, রাস্তার দ্বার, পুকুর পাড় সর্বত্রই দৃষ্টিনন্দন সুপারির গাছ। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সুপারি ফলন হয়। এবারও মৌসুমী ফসল সুপারীর বাম্বার ফলন হয়েছে। কিন্তু অন্য বছরের চাইতে এবার সুপারীর দাম খুবই কম। সুপারী বিক্রি করতে গিয়ে মাথায় হাত কৃষকদের।

এবার প্রতি ভি (৪৪০টি) সুপারী ৫শ থেকে ৮শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতি ভি সুপারী ১২শ থেকে ১৫শ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিলো। দামে ধস নামায় বিক্রেতারা ফসল নিয়ে বিপাকে রয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অন্য বছরে ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা জকিগঞ্জে এসে সুপারী ক্রয় করতেন। কিন্তু বিগত বছর জকিগঞ্জের সুপারী অন্য জেলায় নেয়ার পথে ভারতীয় চোরাই সুপারী বলে বিজিবি সদস্যরা বার বার সুপারীর ট্রাক আটকে দিয়ে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। বিজিবি সদস্যদের কড়াকড়িতে এবার অন্য জেলার সুপারী ব্যবসায়ীরা জকিগঞ্জে আসতে নারাজ। তাই সুপারীর দাম কমে গেছে। বিজিবি সুপারী ব্যবসায়ীদের উপর থেকে কড়াকড়ি প্রত্যাহার করলে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা জকিগঞ্জে সুপারী কিনতে আসতে পারেন। এতে জকিগঞ্জের কৃষকরা সুপারী নায্য দাম পাবেন। উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের হিসেবে উপজেলার ২৭৮ একর জমিতে ফলবান ও ফলহীন মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫শ গাছে সুপারি উৎপাদিত হয়ছে।

একাধিক সুপারী কৃষক জানিয়েছেন, এবার সুপারীর দাম কম হওয়ায় শুকিয়ে মজুদ করে রাখছেন। শুকনো সুপারী হয়তো পরে চড়া দামে বিক্রি হতে পারে এমনটাই তাদের ধারণা। জকিগঞ্জ থেকে শুকনো সুপারী সারা বছরই চালান হয় বিভিন্ন জেলায়। মানের দিক থেকে এ অঞ্চলের সুপারি অন্য জেলার সুপারীর চেয়ে ভাল। এ কারণে জকিগঞ্জের সুপারীর চাহিদা রয়েছে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ প্রায় সকল জেলায়।

জকিগঞ্জের সুপারি ব্রিটিশ ভারতে খুবই খ্যাতি ছিল। ৪৭ পরবর্তীতে জকিগঞ্জই ছিল উভয় পাকিস্থানের একমাত্র সুপারির যোগানদার। তখন জকিগঞ্জে অবস্থাপন্ন গৃহস্থরা একরের পর একর জমিতে সুপারির বাগান গড়ে তুলেছিলেন। আশির দশকে হাজার হাজার সুপারি গাছ অজ্ঞাত রোগে মারা যায়। সুরমা- কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনেও সুপারি বাগানের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, সুপারী চাষে নেই কোন সরকারী প্রশিক্ষন। উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক পরিচর্যা, সরকারী ঋণ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে উৎপাদন বাড়বে। জকিগঞ্জে সুপারী প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা থাকলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে তাদের ধারণা।

সুপারী কৃষক আব্দুল মালিক বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম কম। বিজিবি সদস্যরা জকিগঞ্জের সুপারীকে ভারতীয় সুপারী বলে আটকে দেয় এ কারণে জকিগঞ্জে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা এবার সুপারী কিনতে আসেন নাই। অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা আসলে দাম বাড়তে পারে।

কৃষক কাওসার আহমদ বলেন, উচ্চ ফলনশীল জাত নির্বাচন, সঠিক পরিচর্যা আর উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে জকিগঞ্জে সুপারি উৎপাদন ভবিষ্যৎ আরো বাড়বে।
জকিগঞ্জ সদর ইউপির সদস্য আব্দুল মুকিত বলেন, এলাকায় সুপারী প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা থাকলে স্থানীয়রা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান। কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা আর সরকারী ঋণ সুবিধা পেলে জকিগঞ্জে সুপারী উৎপাদনে নব দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফারুক আহমদ বলেন, সুপারী জকিগঞ্জের একটি সম্ভাবনাময় খাত। সহযোগীতার হাত বাড়ালে এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন বলেন, জকিগঞ্জের সুপারীর ব্যাপক সুনাম রয়েছে। পরিকল্পিনা, সঠিক দিক নির্দেশনা, উৎসাহ আর পরিচর্যার অভাবে এ খাত থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সুপারী চাষ করে জকিগঞ্জের অনেক মানুষ লাভবান হয়েছেন। কৃষি বিভাগ এ খাতে সহযোগীতার হাত বাড়ালে কৃষকরা উপকৃত হতো। বছরে কোটি কোটি টাকার সুপারী উৎপাদিত হলেও বিভিন্ন কারণে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর