শাদমান সাকীব :: বর্তমান বিশ্বে ভয়াবহ একটি দূর্যোগের নাম করোনা ভাইরাস। সারা বিশ্ব আজ এর ভয়াল থাবায় আজ আতংকিত। লক্ষাধিক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। আক্রান্ত প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ। নামি-দামি দেশের হাজার হাজার বিজ্ঞানী শত প্রচেষ্টা করেও এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি।
এর একটি চিকিৎসা হতে পারে, যারা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন তাদের দেহ থেকে রক্তের নমুনা কালেক্ট করে নতুন এন্টিবডির খোজ করা। ইন ভিভো টেস্টের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের শরীরে তৈরি হওয়া নতুন এন্টিবডি নিয়ে গবেষণা করলে বিজ্ঞানী এবং ঔষধ বিশেষজ্ঞগণ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরি এন্টিবডির খোজ পেতে পারেন। এ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলতেছে।
আরেকটা চিকিৎসা হলো প্লাজমা থ্যারাপি। যেখানে সুস্থ হওয়া রোগীদের রক্ত কালেক্ট করা হয়। প্লাজমা আলাদা করে ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে এবং ক্রস ম্যাচিং করে অসুস্থ রোগীর শরীরে ওই প্লাজমা দেয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করা। এটি নিশ্চিৎভাবে করোনা আক্রান্তদের লক্ষণ কমিয়ে আনবে। রোগী সুস্থও হতে পারে। তবে এটি ব্যাক ফায়ার করতে পারে যদি স্বল্প পরিমাণ প্লাজমা রোগীকে দেওয়া হয়, তাহলে কোভিড-১৯ ডরমেন্ট স্ট্যাটে গিয়ে এর বিরুদ্ধে রেসিস্টেন্সি গ্রো করবে। তাই এর জন্য অনেক বেশি গবেষণা এবং হিউমান ট্রায়াল দরকার।
রেমডেসিভির যে ঔষধটি এফডিএ কর্তৃক অনোমুদিত হয়েছে তা শুধু খুব বেশি আক্রান্ত রোগীদের দেওয়া হচ্ছে। এটি হয়তবা করোনার এফেক্টকে কিছু মাত্রায় কমাতে পারে কিন্তু সুস্থ করতে পারে না। রেমডেসিভির সম্পর্কে এফডিএ (ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন অব আমেরিকা) এর প্রদত্ত তথ্য থেকে তাই মনে হলো। তাই এর ফল খুব সুদূরপ্রসারী হবে তা মনে হয় না।
এখন শুধু টিকাই একমাত্র ভরসা। যা নিয়ে বিভিন্ন দেশের গবেষকরা দিনরাত কাজ করছেন। তাই বলে কি আতংকিত হয়ে আমরা বসে থাকব? না।
আমরা যা করতে পারি তা হল-
১. নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। কোনো ভাইরাসই মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার চেয়ে শক্তিশালী নয়। এ পর্যন্ত যারাই আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের অনেকেরই কোনো না কোনো রোগ ছিল। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হরমোনজনিত সমস্যা, ফুসফুসের অসুখ বা বার্ধক্যজনিত সমস্যা। যার কারণে কোভিড-১৯ তাদের শরীরে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যাতিক্রম আছে,তবে তা কম।
২. চলুন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করি। যেহেতু কোভিড-১৯ ফুসফুসকেই টার্গেট করে আসুন যেনে নেই কয়েকটি খাবার সম্পর্কে যা ফুসফুসকে ভালো রাখে। আমাদের সাধ্যের মধ্যের খাবারগুলো হলো
ক) আপেল
খ)জাম
গ)আদা (আদা চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন)
ঘ)রসুন (কাচা খেতে পারেন মধু দিয়ে)
ঙ)হলুদ (তরকারিতে দিতে পারেন)
চ)ব্রকলি
ছ)অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার যেমন মাছ।
জ) লেবু (লেবুর রস আপনার ফুসফুসের টক্সিন দূর করে)
য) দুধ,ডিম। (ডিম পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল খাবার)
এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার ফুসফুসকে শক্তিশালী করবে। এছাড়াও ভিটামিন এ,ই, বিটা ক্যারোটিনসহ অনেক উপকারী উপাদান আছে যা আপনাকে একটি সুস্থ ফুসফুসের অধিকারী করবে। যারা ধূমপায়ী, এজমা অথবা ফুসফুস জনীত সমস্যায় ভুগতেছেন তাদের জন্য এইগুলা কার্যকরী।
৩. চলুন প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ মিনিট ব্যায়াম করি। এটি যারা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনীত অসুখে ভুগতেছেন তাদের জন্য এটা অনেক কার্যকরী। সুস্থ মানুষেরও সুস্থ থাকার জন্য হাটা বা শারিরীক কসরত করা উচিত।
৪. ভীড় এড়িয়ে চলি এবং প্রয়োজনবোধে মাক্স এবং হ্যান্ড গ্লাবস ব্যবহার করি। বাইরে থেকে আসার পর হাত-মুখ ভালো করে ধুই এবং জামা পাল্টে ফেলি।
৫.চলুন আতংকিত হওয়া বাদ দেই। টিকা আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত আমাদের করোনাকে সাথে নিয়েই চলতে হবে। তাই নিয়ম মেনে চলি এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখি৷
প্রকৃতি এতটা নিষ্ঠুর নয় যে আমাদের প্রাকৃতিকভাবে মেরে ফেলবে। কিন্তু প্রকৃতি তাই ফিরিয়ে দেয়,যা আমরা করি। নিজ নিজ ধর্মের প্রতি আস্থা রাখি এবং মনোবল না হারাই। আপনি করোনাকে আপনার কাছে আসার সুযোগ না দিলে সে নিজে থেকে আপনার কাছে আসবে না। আপনি যদি সুস্থ শরীরের অধিকারী হন, করোনা আক্রান্ত হলেও আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনাকে রক্ষা করবে।
যেহেতু আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এখনো জয়ী হতে পারছি না (টিকা আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত)। তাই নিজেকে প্রস্তত রাখি আরও কিছুদিন একে সাথে নিয়েই চলার জন্য। যখন যুদ্ধ অনর্থক সেখানে সমজোতাই শ্রেয় আমাদের সাধারণ মানুষদের জন্য। বড় বড় বিজ্ঞানীরা ত আছেন, তারা তাদের কাজ করুক।আমরা সেই সময় অব্দি ঠিকে থাকি।
নিজেকে সুস্থ রাখি এবং আমাদের জন্য অন্য কেউ যাতে আক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখি। কিছুদিনেরই ত ব্যাপার। নিজেকে সংযত করি। ভালো অভ্যাস গড়ে তুলি এবং নিরাপদ থাকি। আর এই শিক্ষা নেই যে এই ভালো অভ্যাসগুলো আমরা ত্যাগ করবো না।
মানবতার হাত সবার দিকে বাড়িয়ে দেই। মানবতাই এই বিশ্বকে আজ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। আসুন জাগ্রত হই, মানবিক হই এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলি। সকল প্রকার নেতিবাচক মন্তব্য ও ধারণাকে দূরে রাখি।
আরেকটা জিনিস মাথায় রাখি জে আমরা আমেরিকা বা ইউরোপ এর দেশ না। তারা সম্রীদ্ধশালী এবং তাদের দেশে সেবা বা কাজকর্মের সাথে নিজের দেশকে গুলিয়ে না ফেলি। সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। উন্নয়নশীল দেশ যার বাজেট ঘাটতি থাকে সে হিসেবে আমাদের সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তাই নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ না করি এবং অযথা সমালোচনা বন্ধ করি। সরকারের আদেশ মেনে চলি, নিজেকে সুস্থ ও সক্ষম রাখি এবং সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে নিজ নিজ এলাকার স্থানীয় সরকারকে সাহায্য করি এবং দরিদ্র প্রতিবেশীদের দিকে খেয়াল রাখি। করোনা চলে গেলেও তখন আমরা একটি মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাব, ইনশা আল্লাহ।
শাদমান সাকীব নির্বাচন অফিসার,জকিগঞ্জ,সিলেট রেজিস্ট্রার্ড ফার্মাসিস্ট, বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল।
Leave a Reply