আল হাছিব তাপাদার:: ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকদের নামের চূড়ান্ত তালিকা শনিবার (৩১ আগস্ট) প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন রাজ্যের প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। তালিকা প্রকাশের পরেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আসাম। এমন খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
এরপর থেকে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা সিলেটের জকিগঞ্জের সীমান্তগুলোতে কড়া সর্তকর্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যাতে আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কেউ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। সেজন্য সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বসবাসকারীদেরকে বিজিবির ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, জকিগঞ্জ সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে চোরাকারবারিরা একাধিক চোরাই পথ তৈরী করে দীর্ঘদিন থেকে ভারতের লোকজনের সাথে চোরাচালান চালিয়ে আসছে। এসব পথ দিয়ে প্রায় সময় চোরাকারবারিরা ভারতে অনুপ্রবেশও করে থাকে। আসামে নাগরিক তালিকা নিয়ে মারাত্মক উত্তেজনা দেখা দিলে এসব চোরাই পথ ব্যবহার করেই তালিকা থেকে বাদ পড়া আসামের নাগরিকরা জকিগঞ্জে অনুপ্রবেশ করতে পারে কিংবা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে পাঠাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে জকিগঞ্জসহ সিলেটের সীমান্ত এলাকায় যেকোন অনুপ্রবেশ ঢেকাতে বিজিবি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন। তিনি জানান, ‘আসামের বিষয়ে জকিগঞ্জ তথা সিলেট সীমান্তে তেমন কোন প্রভাব পড়বে বলে আমাদের কাছে কোন খবর নেই। এরপরও বিজিবিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া আছে। যাতে এর প্রভাব জকিগঞ্জসহ সিলেটের অন্য সীমান্তে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বসবাসকারীদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।’
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ভারতের আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে সিলেটের সীমান্তগুলোতে কোন প্রভাব পড়বে না। এখন পর্যন্ত এমন কোন আশঙ্কা নেই। এরপরও আমরা সর্তকর্তা অবলম্বন করছি। যাতে সীমান্ত এলাকা কিংবা চোরাই পথে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াদের পুশ-ইন করতে না পারে সেদিকে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক দায়িত্বশীল জানিয়েছেন, প্রায় ৬ মাস আগে আসামের নাগরিক তালিকা নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগাম একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে ‘আসামের নাগরিকরা তালিকা থেকে বাদ পড়লেও তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার কোনও আশঙ্কা নেই।’ ‘আসামের বাদ পড়া নাগরিকরা আন্দোলন করে তারা তাদের দেশেই থাকতে চায়’। ‘সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করলে জকিগঞ্জে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে সে বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসামে নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর এখন পর্যন্ত জকিগঞ্জসহ সিলেটের কোন সীমান্তে বাদ পড়া আসামের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ চেষ্ঠার কোন আগাম খবর পাওয়া যায়নি।’ ‘যদি জোর করে পুশ ইন করা হয় সেটা ভিন্ন কথা’। ‘আসামের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে’। ‘সিলেটের সকল সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে এ দায়িত্বশীল জানান।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা অনুপ্রবেশ ঢেকাতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি’। ‘আসামের নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর তাদের পরিস্থিতি কেমন হচ্ছে আমরা তা খোজখবর রাখছি। এখন পর্যন্ত আসামের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে বলে জানতে পেরেছি।’ ‘প্রাপ্ত এ খবর থেকে বলা যায় এখন পর্যন্ত জকিগঞ্জসহ সিলেটের কোন সীমান্তে আসামের নাগরিক তালিকার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই বলে ধারণা হচ্ছে। ‘এরপরও আসামের পরিস্থিতি কোন সময় অবনতি হলে আমরা আমাদের সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পথ কিংবা অন্য কোনও অবৈধ পথ দিয়ে যদি কোনও ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে তা মোকাবিলা করার জন্য বিজিবির যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।’ ‘সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকদের বলা আছে তারা যাতে সর্তক থাকেন। ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের কোনও তৎপরতা কেউ দেখতে পেলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট বিজিবি ক্যাম্পকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।’
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পররাষ্ট্র নিয়ে আমাদের কথা বলা ঠিক হবেনা। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব বিষয় নিয়ে দেখবে।’ ‘আসাম নিয়ে আমাদের কাছে সরকারের নতুন কোনও নির্দেশনা এখনো আসেনি।’ ‘নির্দেশনা আসলে সে মোতাবেক কাজ করা হবে।’
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, ‘আসামে উত্তেজনা দেখা দিলে আসামের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া নাগরিকদের বাংলাদেশে যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে সেদিকে সর্তক থাকতে জকিগঞ্জ সীমান্ত এলাকার সকল জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদেরকে বলা হয়েছে।’ ‘অনুপ্রবেশের বিষয়ে কেউ কোন তৎপরতা দেখতে পেলে তাৎক্ষণিক প্রশাসন ও বিজিবিকে অবহিত করতে সকলের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান।’
জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবু নাসের জানিয়েছেন, ভারতের আসাম নিয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত নতুন কোনও নির্দেশনা আসেনি। যদি কোনও নির্দেশনা আসে তাহলে সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে। আসাম নিয়ে নতুন কোনও নির্দেশনা না থাকলেও পুলিশ সবসময় জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। সীমান্তের বিষয়টি বিজিবি দেখছে। ‘নতুন কোন নির্দেশনা পেলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
Leave a Reply