দ্বিমুখী লড়াইয়ের পথে তিনটি ভোট

আল হাছিব তাপাদার:: আজ ১৮ মার্চ পঞ্চম বারের মত অনুষ্ঠিত হবে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোন কোন প্রার্থীর উপর আস্থা রাখছেন জকিগঞ্জের ৯ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ভোটারগণ তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কোন পদে কে হাসবেন বিজয়ে হাসি তা জানতে উপজেলাবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে ফলাফল ঘোষণার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।

ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবাদ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্টিত হবে বলে রবিবার ভোটারদেরকে আশ^স্থ করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তারা। সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বাড়ী ফিরতে পারেন তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ ও উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা হারুন মোল্লা। প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের এমন আশ্বাসের পর ভোটারদের মনের শঙ্কা অনেকটা কেটেছে বলে মনে করছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। এতে ধারণা করা হচ্ছে বেশীর ভাগ ভোট কেন্দ্রে দিনের যেকোন সময়ে ভোটারের উপস্থিতি বাড়তে পারে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩শ’ ৯০ জন। প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ¦ লোকমান উদ্দিন চৌধুরী (নৌকা)। তাঁর সাথে রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী জেলা যুব সংহতির সদস্য সচিব মরতুজা আহমদ চৌধুরী (লাঙ্গল), ইসলামী ঐক্যজোট মনোনীত হয়ে মাওলানা আব্দুস সামাদ (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুয়েব লস্কর (আনারস)।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ভোটারের আলোচনায় অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ¦ লোকমান উদ্দিন চৌধুরী (নৌকা)। নির্বাচনের পাক্কা খেলোয়াড় আলহাজ¦ লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এর পিছনে অন্যতম কারণ ছিলো আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় কোন্দল। কিন্তু এবার আগের মত কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীকে। বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্ত আওয়ামীলীগ। লোকমান চৌধুরীতেই আস্থা রেখেছেন নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যর একান্তজন হিসেবে আলহাজ¦ লোকমান উদ্দিন চৌধুরী সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত। এ কারণে সাধারণ মানুষের জরিপে তিনি এখন পর্যন্ত অনেকটা এগিয়ে আছেন।

তবে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মরতুজা আহমদ চৌধুরী একজন ভালো বক্তা হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা ও সভা সমাবেশে কথার ছন্দে মানুষের মন গলাতে শেষ চেষ্টা করেছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে তার অনুসারী নেতাকর্মীদের দাবী। জকিগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় পার্টির বড় একটি ভোট ব্যাংক থাকায় সাধারণ ভোটাররা শেষ হিসেব নিকেশে চেয়ারম্যান পদে নৌকা ও লাঙ্গল প্রতীকে লড়াই হচ্ছে বলে আভাস দিয়েছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকেলে নামার পরেই সাধারণ মানুষের আস্থার প্রকাশ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটবে।

অন্যদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উড়োজাহাজ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, চশমা প্রতীকে সিলেট মহানগর আল ইসলাহর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সবুর, বই প্রতীকে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, মাইক প্রতীকে উপজেলা শ্রমিকলীগের নির্বাহী সভাপতি সজল কুমার সিংহ, তালা প্রতীকে জকিগঞ্জ উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুহেল, বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে যুবলীগ নেতা শামীম হোসেন, টিউবওয়েল প্রতীকে বহিস্কৃত ছাত্রদল নেতা ফজলে আশরাফ মান্না।

পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আল্লামা ফুলতলী ছাহেবের সংগঠন বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহর প্রার্থী মাওলানা আব্দুস সবুর (চশমা) ও উপজেলা শ্রমিকলীগের নির্বাহী সভাপতি সজল কুমার সিংহ (মাইক) প্রতীক নিয়ে ভোটারদের আলোচনায় আছেন।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, জকিগঞ্জে মোট ভোটারের মধ্যে বড় একটি অংশ কোন না কোন ইসলামপন্থী দলের সমর্থক। এ ভোট ব্যাংকে কাজে লাগিয়ে মাওলানা আব্দুস সবুর ও বৃহত্তর কালিগঞ্জ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাংকে কাজে লাগিয়ে সজল কুমার সিংহ শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে আছেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

আবার অনেক ভোটারের মতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ত্রি-মুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকা, দলীয়, গ্রুপিং ও সাম্প্রদায়িকতাসহ নানা সমীকরণের কারণে দিনের যেকোন সময় ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে যেতে পারে বলে অনেক ভোটার মত দিয়েছেন। নানা হিসেবে নিকেশের কারণে দিনের যেকোন সময়ে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে পারেন উড়োজাহাজ প্রতীকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, বই প্রতীকে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল আহাদ, তালা প্রতীকে উপজেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুহেল, বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে যুবলীগ নেতা শামীম হোসেন।

অন্যদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা মাজেদা রওশন শ্যামলী (কলসি), উপজেলা মহিলা দলের বহিস্কৃত সভানেত্রী ইয়াহিয়া বেগম (হাঁস), নারী নেত্রী সুলতানা বেগম (ফুটবল), আওয়ামী লীগ নেত্রী রুশনা বেগম রফা (প্রজাপ্রতি)।

নারী পদের ভোট নিয়ে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূল লড়াইয়ে আছেন কলসি প্রতীক নিয়ে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা মাজেদা রওশন শ্যামলী ও ফুটবল প্রতীক নিয়ে নারী নেত্রী সুলতানা বেগম। ভোটারদের ধারণা শেষ পর্যন্ত এই দুজনের মধ্যে যে কেউ চমক দেখাতে পারেন।

তবে তাদের পিছু থাকতে পারেন উপজেলা মহিলা দলের বহিস্কৃত সভানেত্রী ইয়াহিয়া বেগম (হাঁস)। তিনি বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষের সাথে তেমন সু সম্পর্ক ও পরিচিতি গড়ে তুলতে পারেন নি। এ ক্ষেত্রে বিগত সময়ে সামাজিক নানা অনুষ্টানে মাজেদা রওশন শ্যামলী ও সুলতানা বেগম উপস্থিত হয়ে সাধারণ মানুষের সাথে অনেকটা সু সম্পর্ক ও পরিচিতি গড়ে তুলেন। এ হিসেবে নিকেশ কষে সাধারণ মানুষ তাদের মধ্যেই হার-জিত দেখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর