আল হাছিব তাপাদার/ওমর ফারুক:: জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের সিলেট-৫ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত দশটি নির্বাচন পর্যন্ত এ আসন থেকে চারবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও তিনবার আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার সংসদ সদস্য হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন।
এবারের নির্বাচনে সিলেট-৫ আসনটিতে মহাজোটগত ভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নানা নাটকীয়তা শেষে আওয়ামীলীগের ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামীলীগ হাফিজ মজুমদারকে দিয়ে আসনটি জাতীয় পার্টির কাছ থেকে পুনরুদ্ধারে মরিয়া। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সেলিম উদ্দিনকে দিয়ে ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বি দুই প্রার্থী এ আসনে এমপি থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। এ কারণে প্রতিটি এলাকায় দুজনের কম বেশী ভোটার রয়েছে। ব্যক্তিত্বের দিক দিয়েও দুজন প্রার্থী জনপ্রিয়। আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিতে মজুমদার-সেলিম নিয়ে দলের কিছু নেতাকর্মী দ্বিমত থাকলেও আসন উদ্ধার ও ধরে রাখার প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক সারিতে দাঁড়িয়েছেন তারা।
সম্প্রতি সময়ে আওয়ামীলীগের মনোনয় বঞ্চিত সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনয়ন বঞ্চিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, মনোনয়ন বঞ্চিত আইনজীবি মোস্তাক আহমদ তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে নেতাকর্মীরা নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরদিকে, জাতীয় পার্টিতেও ঐক্য গড়ে উঠেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত শাব্বির আহমদ লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে সেলিম উদ্দিনকে নিয়ে ভোটের মাঠে দিনরাত পার করছেন। মনোনয়ন বঞ্চিত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য শিল্পপতি এম জাকির হোসেইনও লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে লন্ডন থেকে তাঁর অনুসারী নেতাকর্মীদেরকে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছেন। এতে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিভেদ ভূলে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আপ্রাণ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আওয়ামীলীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আওয়ামীলীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার ও জাতীয় পার্টির আলহাজ্ব সেলিম উদ্দিন বিগত সময়ে জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের এমপি থাকায় দুজনেরই ভোট ব্যাংক রয়েছে। জাতীয় পার্টির কবল থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে হলে আওয়ামীলীগের তৃণমূলকে আরও সংগঠিত করতে হবে। জাতীয় পার্টি আসন ধরে রাখতে হলে সেলিম উদ্দিনের উন্নয়নগুলো সাধারণ ভোটারদের কাছে জানাতে হবে।
হাফিজ আহমদ মজুমদারের সমর্থকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত সকল নেতা ঐক্যবদ্ধ থাকায় হারানো আসনটি ফিরে পেতে বেশি বেগ পেতে হবে না তাদের। সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হাফিজ আহমদ মজুমদারকে বিজয়ী করতে মনোনয়ন বঞ্চিত সকল নেতাদের কর্মী সমর্থকরা কাজ করে যাচ্ছেন। বিগত সময়ে দুই বার হাফিজ আহমদ মজুমদার এ জনপদের এমপি হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। এছাড়াও স্কুল, কলেজ স্থাপন করে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে ব্যক্তি হাফিজ আহমদের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই হাফিজ মজুমদার বিজয়ী হবেন বলে তাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
সেলিম উদ্দিনের সমর্থকরা জানান, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিভেদ ভূলে লাঙল মার্কাকে বিজয়ী করতে একাট্টা হয়েছেন। সেলিম উদ্দিন জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের এমপি হওয়ার সুবাদে তিনি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামেগঞ্জে শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করে নিয়েছেন। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তিনিও কম নয়। এছাড়াও জকিগঞ্জ-কানাইঘাটে জাতীয় পার্টির বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরেও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে সেলিম উদ্দিন অন্য দলের সমর্থকদের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে তিনি বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদী জাপা নেতাকর্মীরা।
Leave a Reply