আল হাছিব তাপাদার:: সুরমা-কুশিয়ারার নদীর ভাঙনের কবলে জকিগঞ্জ। এ দুটি নদী ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত নদী হওয়ায় বাংলাদেশের এপার ভেঙ্গে ভারতের অপারে বিশাল চর গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। জকিগঞ্জবাসীর প্রধান সমস্যাই নদী ভাঙন। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে যাযাবরের দিন যাপন করছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি রক্ষা করতে র্দীঘদিন থেকে সরকারের কাছে দাবী জানালেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সম্প্রতি সময়েও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা-সুরমা নদীর বেড়ী বাঁধে প্রবল ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। একাধিক এলাকায় বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গে সরকারী বিদ্যালয়, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, গোরস্থান নদীতে বিলিন হয়েছে। উপজেলার বিরশ্রী ইউপির লক্ষীবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাজরগ্রাম, লাফাকোনা ও গড়রগ্রাম নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন নদী ভাঙনে গ্রামের অর্ধেকের চাইতে বেশী জায়গা জমি কুশিয়ারা গ্রাস করে ফেলেছে। সীমান্ত নদী এখন পুরোপুরি বাংলাদেশের ভিতরে। নদী ভাঙনে এ গ্রামের আছার উদ্দিন আছাই, আবুল কালাম, আলতা হোসেন, সিদ্দেক আলী আব্দুশ শুক্কুর, বিলাল আহমদ, ফয়জুল ইসলাম, হারিছ আলীসহ প্রায় শতাধিক পরিবার ভূমিহীন হয়েছেন। ব্লক পাথর ফেলা হলে ভাঙন কিছুটা থামতে পারে বলে লোকজন জানিয়েছেন।
সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙন কবলিত বিভিন্ন বেঁড়ী বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বারহাল ইউপিতে চকগ্রাম নদী গ্রাস করে ফেলেছে। পৌর এলাকার কেছরী, ছয়লেন, মাইজকান্দি, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, মানিকপুর, বাখরশাল, লালোগ্রাম সেনাপতিরচক, রারাই, বিরশ্রী ইউপির বড়চালিয়া, পিয়াইপুর, বারজনী, উজিরপুর, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল, সুনাপুর, পশ্চিম ও পূর্ব সুপ্রাকান্দি, বেউর, সুলতানপুর ইউপির, অজরগ্রাম, গঙ্গাজল, সহিদাবাদ, বক্তিপুর, পিল্লাকান্দি, ইছাপুর, খাদিমান, বারঠাকুরী ইউপির উত্তরকুল, লাড়িগ্রাম, বিন্নাপাড়া, মুন্সিপাড়া, বলরামেরচক, মিয়াগুল, ছালেহপুর, কসকনপুর ইউনিয়নের ইনামতি, বিয়াবাইল, আজিগঞ্জ, মানিকপুর ইউপির বাল্লা, রঘুরচক, মানিকপুর, বারহাল ইউপির চকগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, নোয়াগ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভিটামাটি গ্রাস করার কারণে শতশত পরিবার নিঃস্ব হয়ে ফেরারী বসবাস গড়েছেন।
ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাঁরা পরিদর্শন করে শুধু শান্তনা দিয়ে যান কোন পদক্ষেপ নেন না। নদী ভাঙন রোধে সময় মত পদক্ষেপ না নেয়ায় লোকজন ভূমিহীন হয়ে পথে পথে ঘুরছেন। এখনো ভাঙন থামেনি। নদী ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। মনে হয় এক সময় পুরো জকিগঞ্জকে নদী গ্রাস করে ফেলবে।
লক্ষীবাজার এলাকার জাপা নেতা হেলাল আহমদ জানান, লক্ষীবাজার এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নেই। নদী নিয়ে গেছে। পূর্ব পুরুষের মাজারটাও নদীতে হারিয়েছে। ভাঙন রোধ করতে দ্রুত ব্লক ও পাথর ফেলতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত পাল জানান, মাজরগ্রাম, লাফাকোন, গড়রগ্রাম,বড়চালিয়াসহ উপজেলার সীমান্ত এলাকার বেশীর গ্রামের নদী ভাঙ্গনের চিত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। লোকজনের বসতবাড়ীর বেশী অংশই নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। যেটুকু রয়েছে তাও এখন বিলীন হওয়ার উপক্রম। তবুও ভাঙ্গন পিছু ছাড়ছে না।
সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ মৌসুমেই ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষা মৌসমে আরো ভয়াবহ ভাঙ্গন সৃষ্টি হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙ্গনে সরকারের অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ সুরমা-কুশিয়ারার এক ইঞ্চি নদী ভাঙ্গন মানে দেশের এক ইঞ্চি মানচিত্র কমে যাওয়া।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাহিদুল করীম বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নিয়েছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করে ভাঙ্গনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিন বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধ করতে আমি অনেক আগেই পদক্ষেপ নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন প্রতিরোধে বিশাল টাকার দরকার। বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছি। যখনই ফান্ড আসবে তখনই বেঁড়ী বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হবে। ভাঙনের কবলে পড়ে যারা ভূমিহীন হয়েছেন তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply