চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ৫৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। ফিরে এসেছেন মাত্র ১২ জন। ফিরে আসা নতুন তিনজনের মধ্যে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান এবং সাংবাদিক উৎপলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে রাতের আঁধারে।
এ বছর যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের মথ্যে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিকটিম হয়েছে। নিখোঁজ যারা হয়েছে তার মধ্যে একটা বড় অংশ হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এছাড়া ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, প্রকাশক, কুটনীতিক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকারসহ পেশাজীবারা নিখোঁজ হয়েছেন।
নিখোঁজের ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশ মানুষ গুম অপহরণের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, নিখোঁজের ক্ষেত্রে আগে অধিকাংশ সময় পরিচয় দেয়া হতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে এসেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। পরে তাকে ডিনাই করা হতো এবং বাসা থেকে, অফিস থেকে, পরিচিত জায়গা থেকে, কোনো ক্ষেত্রে রাস্তা থেকে অপহরণ করা হতো। সাম্প্রতিকালে আমরা লক্ষ্য করছি যে অপহরণ প্রক্রিয়ায় একটা পরিবর্তন এসেছে। সেটা হচ্ছে, অতি সংগোপনে এ কাজটি করা হচ্ছে যাতে কোনো সাক্ষী না থাকে, যাতে কোনো মানুষ সাক্ষ্য দিতে না পারে।
নিখোঁজের নতুন এই কৌশল সম্পর্কে মি. লিটন বলেন, এনফোর্সড ডিজএপিয়ারেন্স এর ব্যাপারে জাতিসংঘের যে নিয়ম-কানুন আছে, কনভেনশনগুলো আছে সেখানে ধারা উপধারায় যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আছে সেই সংজ্ঞার মধ্যে যাতে এ বিষয়গুলো না পড়ে এই ধরনের একটা প্রবণতা লক্ষ্য করছি কৌশল হিসেবে গ্রহণ করার।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বাংলাদেশে গুম পরিস্থিতির একজন পর্যবেক্ষক। অপহরণ কিংবা গুমের শিকার হয়ে জীবিত ফিরে আসা অন্তত ২০ জনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তিনি কথা বলেছেন।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা ফেরার পর চুপ থাকার কারন হিসেবে মি. লিটন বলছেন, এখন যারা ফিরে আসছেন তারা প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। এবং তাদের বক্তব্যে এক ধরনের ভীতির ছাপ আছে। বডি ল্যাংগুয়েজ এক ধরনের বার্তা দেয় যে এখনো তারা মুক্তভাবে কথা বলতে পারছেন না। এই বার্তাটি পড়া যায় তাদের বাহ্যিক আচরণে। এবং তারা যে সমস্ত কথাবার্তা বলেন সেগুলো খাপছাড়া। কেউ কেউ প্রথমে যে কথাগুলো বলেন পরবর্তীতে সে জায়গা থেকে সরে আসেন। তার মানে হচ্ছে এমন একটা গোষ্ঠী বা এমন একটা গ্রুপ এর সাথে জড়িত তারা আমাদের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত দশবছরে সাড়ে পাঁচ’শ মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন। নিখোঁজ এসব মানুষের পরবর্তী পরিণতি সম্পর্কে তাদের যে ক্যাটাগরি সেখানে দেখা যায়, কাউকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। কয়েকজন কে ডিবি অফিসে পাওয়া গেছে। হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কারাগারে প্রেরণ করার তথ্য রয়েছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরবর্তী সময়ে র্যাব হাজির করেছে। এছাড়া অপহরণ বা গুমের শিকার বেশ কয়েকজনকে পরে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গুমের ঘটনায় প্রায় সবক্ষেত্রেই কোনো না কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশন্স সহেলী ফেরদৌস বলেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একমাত্র ডিবি সাদা পোশাকে গ্রেফতার করে থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিট এবং থানা এ বিষয়টি অবগত থাকে। তবে পুলিশের কোনো সদস্য ক্রাইমের উদ্দেশ্যে ডিবি পরিচয়ে যদি কিছু করে থাকে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এরকম ব্যবস্থা নেয়াও হয়েছে।
তবে মিস ফেরদৌস বলছেন, অন্য কোন বাহিনী বা ডিবির নামে কেউ যদি এরকম কোনো কর্মকা-ে জড়িত থাকে তার দায় পুলিশ নেবে না।
বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কারা ধরে নিচ্ছে বা কোথায় রাখা হচ্ছে তার কোনো স্পষ্ট জবাব মেলে না কখোনোই। এ কারণে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a Reply