হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয় : জনসভায় খালেদা জিয়া

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারণ দলীয় সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে না, পারবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনেও কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব আপনাদের। নির্বাচনে ইভিএম চলবে না। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। প্রধান বিচারপতিকে চাপ দিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ১৯ মাস পর রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। এরপর ভোট কেন্দ্রে এসে দেখেন মানুষ কী চায়, কাদের ভোট দেয়। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করব না। ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের প্রতি প্রতিহিংসা নয়, আপনাদের সংশোধন করে দেব। এ সময় জনসভায় আসার পথে নানাভাবে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, রাস্তায় বাস রেখে আমাকেও জনসভায় আসতে বাধা দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট মন নিয়ে রাজনীতি হয় না।’ আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে কী করবেন তার একটি ধারণাও দেন খালেদা জিয়া। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের কারও চাকরি যাবে না। নির্ভয়ে কাজ করুন।

খালেদা জিয়া বলেন, আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই। আলাপ-আলোচনা ছাড়া কোনোভাবেই এ পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সংসদে থাকুক আর বাইরে থাকুক সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রোববার

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করে বিএনপি।

রোববার দুপুর পৌনে ২টায় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এর আগে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে জনসভায় যোগ দেয়ার উদ্দেশে বের হন। জনসভা শুরুর আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢলে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করেন। নেতাকর্মীদের হাতে শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে। জনসভাটি অনেকটা নির্বাচনী সভায় রূপ নেয়।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ ঘরে ঘরে কান্না আর আহাজারি। এ সরকারের হাত থেকে মানুষ মুক্তি চায়, পরিবর্তন চায়। এ পরিবর্তন হতে হবে ভোটের মাধ্যমে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। যেই নির্বাচনে মানুষ নির্দ্বিধায় ভোট দিতে যাবে। তাদের যাকে পছন্দ তাকে ভোট দেবে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে পারবেন, ভোট দিতে পারবেন। তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তুলে সমস্বরে বলেন, ‘না’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা জনগণকে ভয় পায়। তাই আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। সবাই যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, সেজন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের কিছু কথা বলেছি। ইসির সংস্কারের জন্য প্রস্তাব দিয়ে এসেছি। বলেছি, যদি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হয় তবে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আজকে নির্বাচন কমিশন কেন বলে সেনা মোতায়েন হবে না, ইভিএম হবে। সরকার যা বলে তাই করবে। ইসির (ইলেকশন কমিশন) উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনি সরকারের অন্যায় আবদার মানতে পারেন না। নির্বাচন কমিশনারদের বলতে চাই, অবাধ নির্বাচন করার দায়িত্ব আপনাদের। ইভিএম বন্ধ করতে হবে। সেনা মোতায়েন করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে। পুলিশ বাহিনীও থাকবে, এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। হাসিনার গুণ্ডাবাহিনীর হাতে অবৈধ অস্ত্র। তারা মানুষকে খুন করছে। সেনা বাহিনী না দিলে হাসিনার গুণ্ডাবাহিনী কেন্দ্র দখল করে অত্যাচার চালাবে। এ দেশের মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে পরিবর্তনের জন্য ধানের শীষে ভোট দিয়ে দেখিয়ে দেবে যে তারা জিয়াকে ভোলেনি। তিনি আছেন মানুষের মনে।

তিনি বলেন, আমি তাদের (আওয়ামী লীগকে) ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু জনগণ সেটা মানতে রাজি নয়। কারণ এরা কত অবিচার করেছে তা জনগণ জানে। তার পরও দেশের স্বার্থে আমি তাদের ক্ষমা করব। কারণ আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই, যা আলাপ-আলোচনা ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা জবাবদিহিমূলক সংসদ দেখতে চাই। সরকারি দল ও বিরোধী দল মিলে আলোচনা করে কোনো সমস্যা হলে সমাধান করব।

খালেদা জিয়া বলেন, আজ দেশে বিচার বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগ বলতে কিছু নেই। প্রধান বিচারপতিকে পর্যন্ত অসুস্থ বানিয়ে জোর করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিদেশে এজেন্সির লোক পাঠিয়ে তাকে চাপ দিয়ে পদত্যাগপত্র নিয়ে আসা হয়। তিনি দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি কিছু সত্য কথা বলেছেন- এটাই তার অপরাধ। নিন্ম আদালতকে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, এখন উচ্চ আদালতকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের এত ক্ষতি করেছেন। সম্পদ লুট করেছেন। পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমতায় থাকতে হবে বলে যা ভাবছেন তা হবে না। আমরা সহিংসতার রাজনীতি করি না। আমরা আপনাদের শুদ্ধ করব। যে খারাপ কাজ করেছেন তা বাদ দিয়ে আপনাদের সত্যিকার অর্থে মানুষ বানাব। সেজন্য আপনাদের একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। আপনারা কি জনগণের পালস বোঝেন? তারা কী চাচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণ চাচ্ছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নয়। কাজেই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন দিয়ে আপনাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন।

চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, মাঠে আপনারাও যাবেন, আমরাও যাব। চ্যালেঞ্জ করছি একটি জায়গায় আপনারা সভা করেন আমরাও করব, দেখবেন আমাদের লোক বেশি হবে। জনগণই আমাদের শক্তি। তাদের নিয়ে আমাদের পথচলা। আমরা এটা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আমি কেন বলছি তত্ত্বাবধায়ক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছিল আওয়ামী লীগের, জামায়াতের। তার জন্য তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। রাস্তাঘাট বন্ধ রেখেছে। হরতালের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এমনকি ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছে। অফিসগামী বয়স্ক লোকদের তারা দিগম্বর করেছে। এসবই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তারা তত্ত্বাবধায়কের দাবির জন্য দিনের পর দিন সমুদ্রবন্দর বন্ধ রেখেছে। যাত্রীবাহী বাসে গানপাউডার দিয়ে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে আওয়ামী লীগ। এদের অপকীর্তির শেষ নেই। তাই আপনাদের বলব, নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন দিয়ে দেশের মানুষ কী চায় সেটা যাচাই করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৪ সালে কোনো নির্বাচন হয়নি। তাহলে কী করে এই সরকার বৈধ সরকার। এই সরকার ও সংসদ অবৈধ। এই সংসদে কোনো বিরোধী দল আছে? এ সময় সমস্বরে সবাই বলে- না।

খালেদা জিয়া সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এই সরকার হয়তো আপনাদের বলে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আপনাদের চাকরি যাবে, মামলা-হয়রানির শিকার হতে হবে। কিন্তু না। আমরা আগেই বলেছি, আমরা হিংসাত্মক রাজনীতি করি না। সরকারি আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই আপনাদের দায়িত্ব। আমরা দেখব সরকারি চাকরিতে কে কতটা যোগ্য। সেখানে বিএনপি বা আওয়ালী লীগ বলতে কিছু নেই। যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে তাদের চাকরি ও পদোন্নতি হবে। আপনারা নির্দিধায় কাজ করতে পারেন।

সমাবেশে বাধা দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ৭ নভেম্বর আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম তারা দেয়নি। জনসভার অনুমতি তারা দিয়েছে কিন্তু জনসভা যাতে সফল না হয়, জনগণ যাতে আসতে না পারে সে জন্য বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষকে অনেক কষ্ট করে আসতে হয়েছে। বাড়ি বাড়ি এবং হোটেলগুলোতে তল্লাশি করছে। পাবলিক যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি আমিও যাতে আপনাদের সামনে এসে পৌঁছাতে না পারি সে জন্য পথে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান পার হতেই দেখি বাস দিয়ে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। এরা যে কত ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করে তা আবার প্রমাণ করল। এত ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা যায় না।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনতে ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতা কাজ করেছেন। এ জন্য আওয়ামী লীগ এ দিনকে ভয় পায়। আওয়ামী লীগ জনগণকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। সে জন্যই তারা আমাদের কোথাও জনসভা করতে দেয় না। বিভিন্ন জায়গায় বাধা সৃষ্টি করে। ছেলেদের হয়রানি করছে মিথ্যা মামলা দিয়ে, জেলখানায় বন্দি করছে। আমাদের রাজনীতি হল জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি। বহুদলীয় গণতন্ত্রে মতের পার্থক্য থাকবে কিন্তু জনগণের স্বার্থে এক হতে হবে। তাহলেই দেশের জনগণের উন্নতি করা সম্ভব। এরা ক্ষমতায় থেকে জনগণকে যেমন ভয় পাচ্ছে তেমনি বিএনপির মতো বড় দলকেও ভয় পায়। বিএনপি সম্পর্কে তারা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে। আমরা মন্তব্য করলে তাদের ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে। এরা গণতন্ত্র ভয় পায়, মানুষকে ভয় পায়। সে জন্য বাকশাল কায়েম করেছিল। এখন অঘোষিতভাবে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। জনগণের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। যে-ই এ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে হয় তাদের উঠিয়ে নেবে না হয় মামলা দিয়ে হয়রানি করা হবে। গত ১০টি বছর ধরে কত জুলুম-অত্যাচার করেছে তার হিসাব নেই।

তিনি বলেন, আমরা দেশে রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই। তার জন্য দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বহু মতের মানুষকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যতক্ষণ এগুলো প্রতিষ্ঠা করা না যাবে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

সরকারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এ সরকার দেশ শেষ করে দিয়েছে। ১০ টাকার চাল আজ ৭০ টাকা। সবজি, তরি-তরকারির দাম ৭০-৮০ টাকার নিচে নয়, পেঁয়াজ ১০০ টাকা। এ অবস্থায় আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিনামূল্যে সার তো দেয়নি। উল্টো কৃষকদের বিএনপির আমলের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। কৃষক আজ মহাদুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তারা কৃষি উপকরণ পাচ্ছেন না। ক্ষমতায় গেলে ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু চাকরি দেয়নি। এ সময় ভুয়া ভুয়া সমস্বরে স্লোগান ধরেন সমাবেশে আগতরা। চাকরি না দিয়ে ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, দফায় দফায় উন্নয়নের কথা বলে। উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। রাস্তা-ব্রিজ বানানোর ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। চলছে নানারকম ধাপ্পাবাজি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু মানুষ বিদ্যুৎ পায় না। গুলশানের মতো জায়গায়ও বিদ্যুৎ আসে-যায়। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হল। তাহলে মানুষ বিদ্যুৎ পায় না কেন। পদে পদে ধোঁকাবাজি। দীর্ঘদিন ধরে এ ধোঁকাবাজি, অত্যাচার-নির্যাতন চলতে পারে না।

নেতাকর্মীর ঢল ঠেলে বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন খালেদা জিয়া। মঞ্চে উঠে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে তাদের অভিনন্দনের জবাব দেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভা পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, শওকত মাহমুদ, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশিদ, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নীরব, মুন্সী বজলুল বাছিত আনজু, শফিউল বারী বাবু, সুলতানা আহমেদ, আনোয়ার হোসাইন, রাজীব আহসান প্রমুখ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া নেই- এমন দাবি করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে চলছে ছাত্রলীগের মাস্তানি। তারা শিক্ষকের গায়ে হাত তোলে, নারীদের নির্যাতন-অত্যাচার করছে নানাভাবে। কখনও শুনিনি বাস-ট্রাকে মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়। তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজ আমদানি করছে।

এ সময় শেয়ারবাজার ধসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই শেয়ারবাজার লুট হয়। এর আগে কখনও শুনিনি সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের মানুষের টাকা আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই ব্যাংকে টাকা পাঠিয়েছে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা। মানুষের রক্ত চুষে টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়েছে। ২০১৫ সালে পাঁচ হাজার কোটি ও গত ১০ বছরে সুইস ব্যাংকে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা গেছে। আওয়ামী লীগ পদে পদে দুর্নীতি করছে। এসব কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদক কোনো মামলা বা তদন্ত করেনি। অথচ দুদক পড়ে আছে আমাদের পেছনে।

তিনি আরও বলেন, গত ৭ বছরে ব্যাংক থেকে চুরি হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা কারসাজি করে পাচার করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো নিয়ে কোনো তদন্ত হয় না। কাউকে ধরা হয়নি। এগুলো তো আওয়ামী লীগের টাকা নয়, জনগণের টাকা। জনগণের টাকা এভাবে পাচার হচ্ছে অথচ তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ দেশের মানুষ বাঁচল কি মরল তাদের জন্য কোনো মাথাব্যথা নেই।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু ভোটারবিহীন সরকারের সমস্যা নয়, এটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইন্ডিয়া, চীনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে কী করবেন তারও একটি ধারণা দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, যারা এক বছরের বেশি বেকার থাকবে তাদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে অনেক মানুষ মেরে ফেলবে বলে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি মানুষ মারার রাজনীতি করে না। এক-এগারোর সময়ে নির্যাতনের কথা স্মরণ করে খালেদা জিয়া বলেন, সে সময় আমার ছেলেদের নির্যাতন করা হয়েছে। এক ছেলেকে পঙ্গু করেছে। আরেক ছেলে মারা গেল। (এ সময় কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। নিজেকে সামলে আবারও বক্তব্য রাখা শুরু করেন) লন্ডন থেকে খালেদা জিয়া আর ফিরবেন না আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, জনগণই আমার শক্তি। এ দেশেই আমি থাকতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন হবে না। আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৮ সাল আওয়ামী লীগের বিদায়ের বছর।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সরকার নিজের হাতে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।

খালেদা জিয়াকে মাদার অব ডেমোক্রেসি আখ্যা দিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নেত্রী (খালেদা জিয়া) আপনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনও আপস করবেন না। খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

 

সূত্র: যুগান্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর