আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: কুমিল্লার ইস্যুতে এবার জকিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনে ছিলো না তেমন আমেজ। পূজার্থীদের মধ্যে ছিলো অজানা এক আতঙ্ক। প্রতিবার শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীর দিনে সীমান্তের ভারত-বাংলার দুই পারে ঘটতো হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা। কিন্তু এবার ভারতের ঐ পারে মিলনমেলা হলেও বাংলার এপারে ছিলো অনেকটা নিরবতা। ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনিতে মূখরিত হয়নি গোটা এলাকা। মর্ত্যলোক থেকে কৈলাশে দেবীকে বিদায় জানাতে নেচে গেয়ে মাতোয়ারা হয়ে আসেনি ভক্তরা। জকিগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর কাস্টমঘাট উৎসবের বর্ণিল রঙে সাজানো থাকলেও কাস্টমঘাটে এসে প্রতিমা বিসর্জনে আগ্রহ দেখায়নি পূজার্থীরা। প্রতিবার প্রায় অর্ধশতাধিক মন্ডপ থেকে ট্রাকযোগে জকিগঞ্জ কুশিয়ারা নদীর কাস্টমঘাটে প্রতিমা নিয়ে আসলেও এবার বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে কাস্টমঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করতে আসেননি বলে জানান অনেকইে। তবে যেকোন ধরণের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, নৌ পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সতর্ক অবস্থায়। গোয়েন্দা তৎপরতা ছিলো লক্ষ্যনীয়। মোতায়েন ছিলো অতিরিক্ত পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১০৪ টি মন্ডপে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্টিত হয়েছে। কিন্তু মাত্র কয়েকটি মন্ডপ থেকে ভক্তরা হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে শেষবারের মতো’ তেল-সিঁদুর পরিয়ে, চোখের জলে বিসর্জন দিতে কাস্টমঘাটে নিয়ে আসেন। অন্য মন্ডপগুলোর প্রতিমা হাওর, পুকুরে এবং নদীতে বিসর্জন দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম জানিয়েছেন, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। জকিগঞ্জের দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সকলের আন্তরিক হওয়া দরকার।
এদিকে, বিসর্জন দিতে আসা পূজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে কাস্টমঘাটে আসেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পূজা পরিষদের সহসভাপতি সজল বর্ম্মণের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুজন দে’র ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিভাকর দেশমূখ্যের যৌথ পরিচালনায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি মোস্তাক আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ আব্দুল করিম, উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম, নুরুল ইসলাম সুহেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী, সমাজসেবা সম্পাদক হাসান আহমদ প্রমূখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার ও গুজবকে সম্বল করে বিভিন্ন ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা নতুন নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এদেশে যে কোন মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে বদ্ধ পরিকর। বাংলাদেশের উন্নয়ন যেমন আজকের বিশ্বের বিস্ময়, রোল মডেল, ঠিক তেমনি এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিও বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। বিভিন্ন সময় স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর পরিবেশকে নস্যাৎ করতে চায়। আমাদের সকলকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
Leave a Reply