বাংলানিউজ:: খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে এতিমদের জন্য ‘তহবিল’ গঠনের নামে বিদেশ থেকে অর্থ আনলেও এই অর্থ পরে এফডিআর (ব্যাংকে স্থায়ী আমানত) করে রাখা হয় তার পুত্র তারেক রহমান ও ভাগ্নে মমিনুর রহমানের নামে। ওই এফডিআর থেকে নানা কায়দা করে অর্থ আত্মসাত করা হয়।
মামলার নথি, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়, যার চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬। ওই অ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ডিডি মারফত ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা) অনুদান হিসেবে জমা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খালেদা কোনো অর্থই এতিমখানায় দেননি। ৫ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, আরাফাত রহমান ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানের নামে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয় খালেদার তৎকালীন সেনানিবাসের ৩, মঈনুল রোডের বাসা।
সে বছরের ১৫ নভেম্বর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে অনুদানের টাকা ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা গুলশানের নিউ নর্থ সার্কেল শাখায় (বর্তমান হিসাব নম্বর ৭১০৫৪১৬৪) স্থানান্তর করা হয়। এই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে ১৯৯৩ সালের ৪ ডিসেম্বর এতিমখানার জন্য মাত্র ৪ লাখ টাকা তুলে (চেক নম্বর ৪৮৮২৪০১) বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দাড়াইল মৌজায় ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ২ দশমিক ৭৯ একর জমি কেনা হয়। যদিও সেখানে কোনো স্থাপনা কখনও গড়ে ওঠেনি। কার্যত মঈনুল রোডের বাসা আর বগুড়ার
জমিতেই থেমে যায় এতিমখানা তহবিলের কার্যক্রম।
এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনুদানের বাকি টাকা অন্য কোনো স্থাপনা বা দুস্থদের কল্যাণে অর্থ ব্যয় না করায় ওই হিসাবে ২০০৬ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ ব্যাংকে জমা পড়ে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকা।
পরে তারেক রহমান ও মমিনুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল, ১৫ জুন এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় এফডিআর খোলার জন্য হস্তান্তর করা হয়।
মাগুরার তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সলিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ট্রাস্টের কেউ না হওয়া সত্ত্বেও ১২ এপ্রিল এতিমখানার তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে একটি এফডিআর খোলেন। সলিমুল হকের নামেই এরপর ২ কোটি টাকার আরও দু’টি এফডিআর খোলা হয়। এছাড়া ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে ১ কোটি টাকার একটি এবং তাকে নিয়ে সলিমুল হক যৌথভাবে আরেকটি ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলেন। সৈয়দ আহমেদ যদিও এখন মৃত।
এই দু’টি এফডিআর থেকে অর্থ স্থানান্তর করা হয় গিয়াস উদ্দিন আহমেদ নামে একজনের এফডিআরে। কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন তার এফডিআরের সেই টাকা ভেঙে ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ট্রান্সফার করেন শরফুদ্দিনের অ্যাকাউন্টে। তিনি তুলে নেন ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ইকোনো কামালের কাছে ওই অর্থ পেতেন শরফুদ্দিন। সেই অর্থই সরানো হয় অবৈধভাবে। বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্তের প্রেক্ষিতে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ ।
খালেদা ও তার পুত্র তারেকসহ অভিযোগপত্রে নাম রয়েছে ইকোনো কামাল, শরফুদ্দিন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। তারেক চিকিৎসার নামে জামিন নিয়ে লন্ডনে থাকলেও মামলার শুরু থেকেই পলাতক কামাল ও মমিনুর।
Leave a Reply