দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ জকিগঞ্জ: দ্রুত প্রথম মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের আহবান

দাবী আদায়ে ঐক্যবদ্ধ জকিগঞ্জ: দ্রুত প্রথম মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের আহবান

নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যখন যুদ্ধ চলছিলো ঠিক এরআগেই জকিগঞ্জ উপজেলাকে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাগণ হানাদার মুক্ত করে বিজয় উৎসব উদযাপন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল জকিগঞ্জ হিসেবে প্রতি বছর এ দিন স্থানীয়ভাবে পালন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে জকিগঞ্জ প্রথম মুক্তাঞ্চল সেই স্বীকৃতি এখনো মেলেনি। স্বীকৃতির দাবীতে গতকাল সোমবার প্রথম মুক্তাঞ্চল দিবসে জকিগঞ্জ মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটি নানা কর্মসূচি পালন করেছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা চত্বর প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবীদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর মুক্ত দিবসের আনন্দ র‌্যালি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল, জকিগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান মাওলানা আফতাব আহমদ, যুবলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সাহেদ, উজ্জল আহমদ তোফায়েলসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন। বেলা সাড়ে ১১টায় স্বীকৃতির দাবীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হলরুমে জকিগঞ্জ মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া, জকিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইউকের প্রতিনিধি আব্দুল বাসিত খাঁন, ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শফিউল আলম মুন্নাসহ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবীদ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা জকিগঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যখন বড় ধরণের যুদ্ধ চলছে ঠিক তখনই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী ধরে জকিগঞ্জ শত্রæ মুক্ত করে গৌরব উজ্জল অধ্যায় রচনা করেন। জকিগঞ্জেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় উৎসব উদযাপন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আজও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে পাওয়া যায়নি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ শত্রæ মুক্ত হবার পর ২৮ নভেম্বর জকিগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেটা ইতিহাসের পাতায় তুলে ধরে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করবে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি না দিলে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাবে। ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ প্রথম শত্রæমুক্ত এলাকা হিসেবে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। তবুও রাষ্ট্রীয়ভাবে জকিগঞ্জকে দেশের প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি না দেয়া দুঃখজনক। ইতিহাস যাচাই বাছাই করে দ্রæত সময়ের মধ্যে জকিগঞ্জ প্রথম শত্রæ মুক্ত এলাকা সেই স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা না করলে মুক্তিযোদ্ধারা আইনী লড়াই শুরু করবেন। প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতির জন্য জকিগঞ্জের সর্বদলীয় মানুষ ঐক্যবদ্ধ। স্বীকৃতির দাবীতে দেশ বিদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লালন করতে চায়। তাদেরকে সঠিক ইতিহাস লালনের সুযোগ করে দিতে হবে। বইপুস্তকে প্রথম মুক্তাঞ্চল এলাকা জকিগঞ্জ সেটা অর্ন্তভূক্ত করুন। বক্তারা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস যাচাই-বাছাই করুন। যাচাই বাছাইয়ে জকিগঞ্জ প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা সেটা প্রমাণে মুক্তিযোদ্ধাগণ সক্ষম হবেন। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ আহবান জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২১ নভেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় জকিগঞ্জ উপজেলাকে পাক হানাদার মুক্ত করে বিজয় উৎসব উদযাপন করেন মুক্তিযোদ্ধাগণ। পাকসেনাদের হাতে বন্দি হওয়া লোকজনকে জকিগঞ্জ থানা থেকে মুক্ত করেন। জকিগঞ্জকে শত্রæ মুক্ত করার যুদ্ধে অংশ নিয়ে বর্বর পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর মেজর চমন লালসহ তাঁর অপর আরও দুই সহযোগী। মহান মুক্তিযুদ্ধে জকিগঞ্জ ছিল ৪ নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। অধিনায়ক ছিলেন মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত। প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী এমপি দেওয়ান ফরিদ গাজী ছিলেন এই সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। ৬টি সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব রব সাদী, লে. জহির উদ্দিন ও ক্যাপ্টেন এম.এ.রব। ২১ নভেম্বর বিজয়ের প্রভাতে স্বাধীনতার নিঃশ্বাস নেয়া এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দাবী ‘জকিগঞ্জকে যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর