ফেসবুকে সাংবাদিক হাছিবকে নিয়ে মিথ্যাচার: ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

ফেসবুকে সাংবাদিক হাছিবকে নিয়ে মিথ্যাচার: ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিকের ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য, আক্রমণাত্মক ও হুমকিমূলক স্ট্যাটাস, অশালীন ও বানোয়াট কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং আদালতের রায়ের পর একটি মামলার বিবরণ বিকৃত করে প্রচার করার ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন জকিগঞ্জের সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার। সোমবার দুপুরে সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে উপস্থিত হয়ে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। আল হাছিব তাপাদার দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সিলেটের ডাক, সিলেটভিউ২৪ ডটকম’র জকিগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত এবং জকিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য। পাশাপাশি তিনি জকিগঞ্জ টুডে ও জকিগঞ্জ আই টিভি সম্পাদনা করেন।

মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, জকিগঞ্জের ফেসবুক ব্যবহারকারী মিজান রাজ, আব্দুর রহিম পল্লী চিকিৎসক, জুনেদ আহমদ, কামাল আহমদ, হাফিজ খালেদ, আব্দুল হালিম, একে মাসুদ তালুকদার, জাফরান আহমদ, নাঈফ আহমদ, মাসুদ আহমদ ও বাঁশ সাংবাদিক নামের আরেকটি ফ্যাক ফেসবুক আইডির ব্যবহারকারীকে। বাদীপক্ষে মামলা শুনানি করেন এডভোকেট টিপু রঞ্জন দাশ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি এডভোকেট আজহার দেলোয়ার। মামলার এজাহারে ফেসবুক স্ট্যাটাসের বেশ কয়েকটি পোস্ট লিংক ও কমেন্টস লিংকের বিষয়বস্তু উল্লেখ করেছেন বাদী আল হাছিব তাপাদার।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, জকিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদারের বিরুদ্ধে হাসপাতালের একজন ডাক্তার ২০১৬ সালে ‘সরকারী কর্মচারীকে কাজে বাধাদানের অভিযোগ’ এনে ১৮৯ ধারায় একটি নন জি.আর মামলা করেন। এ মামলায় সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার বিরুদ্ধে রায় হলে তিনি আপিল করেন। চলতি বছরের ৩ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালত সিলেট তাঁর আপিল খারিজ করে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ১৬ আগস্ট সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাঁকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদারকে কারাগারে পাঠানোর পর ১৮৯ ধারার নন.জিআর মামলাকে অসৎ উদ্দেশ্যে আড়াল করে মামলার প্রকৃত ঘটনার বিবরণ বিকৃতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় ‘চাঁদাবাজী মামলায় সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদারের সাজা হয়েছে’। তাছাড়াও আসামীদের লাগাতার স্ট্যাটাস সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বানোয়াটভাবে মানহানিমূলক মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটনা, অশালীন আক্রমণাত্মক ও হুমকিমূলক কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করে। এতে সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার ও তাঁর পরিবার সামাজিক ও মানসিকভাবে চরম আকারে ক্ষতিগ্রস্থ হন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪/২৫/২৬/২৯/৩৫ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফেসবুকে দেখতে পান আসামীরা তাঁর ছবি ব্যবহার করে মানহানিমূলক মিথ্যা তথ্য, মামলাকে বিকৃত করে চাঁদাবাজীর মামলা হিসেবে উপস্থাপন, কুৎসা রটনা, অশালীন আক্রমণাত্মক ও হুমকিমূলক কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করেছে। এরপর ঘটনাটি নিয়ে তিনি তাঁর আইনজীবির সঙ্গে পরামর্শ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ সিলেট সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেন।

সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার জানান, বিভিন্ন সময় পত্রিকায় সঠিক সংবাদ প্রচার করায় তিনি একাধিকবার অপরাধী গোষ্টির রোষানলে পড়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সংবাদ সংশ্লিষ্ট একটি নন.জিআর মামলায় তিনি কারাগারে যাবার পর কুচক্রীমহল তাঁর ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হীন উদ্দেশ্যে নানাবিধ মিথ্যা বানোয়াট, মানহানিমূলক মিথ্যা তথ্য, প্রকৃত মামলার বিবরণকে বিকৃত করে উপস্থাপন, কুৎসা রটনা, অশালীন আক্রমণাত্মক ও হুমকিমূলক কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এ ঘটনায় আসামীদের অপরাধের পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহের পর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন। এই আসামীরা ছাড়াও অন্য যারা ফেসবুকে এসব মিথ্যা মানহানিকর কর্মকাণ্ড তথা কুৎসা রটনায় জড়িত ছিলো তাদের বিরুদ্ধেও বিদ্যমান আইনের এই মামলা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদার আশাবাদী, সঠিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবি টিপু রঞ্জন দাশ। তিনি জানান, সাংবাদিক আল হাছিব তাপাদারের বিরুদ্ধে আসামীরা ফেসবুকে মানহানিমূলক মিথ্যা তথ্য, ১৮৯ ধারা মামলার বিবরণকে বিকৃত করে চাঁদাবাজী মামলা হিসেবে প্রচার, কুৎসা রটনা, অশালীন আক্রমণাত্মক ও হুমকিমূলক কুরুচিপূর্ণ স্ট্যাটাস ও মন্তব্য করে তাঁকে ও পরিবারের লোকজনকে সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার ঘটনায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে প্রতিবেদন দিতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ছবিসহ জঘন্যতম কুরুচিপূর্ণ মিথ্যাচার, কুৎসা রটনার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছেন। জড়িত আসামীরা দ্রæত বিচারের আওতায় আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর