হাড্ডাহাড্ডি টক্করে শামিম-ইফজাল কে হাসবেন বিজয়ের হাসি

হাড্ডাহাড্ডি টক্করে শামিম-ইফজাল, কে হাসবেন বিজয়ের হাসি?

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: রাত পেরিয়ে সকাল হলেই সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। এ নির্বাচনে ১৩ নং ওয়ার্ড (জকিগঞ্জ) সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ (বৈদ্যুতিক পাখা), যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবলীগ নেতা ও ইফজাল চৌধুরী এডুকেশন ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ইফজাল আহমদ চৌধুরী (টিউবওয়েল), উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান (তালা)। নির্বাচনকে ঘিরে ব্যাপক আমেজ তৈরি হয়েছে পুরো উপজেলা জুড়ে। জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, জকিগঞ্জ পৌরসভাসহ আট ইউপি নিয়ে গঠিত ১৩ নং ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছেন ১২০ জন।

 

নির্বাচনে সদস্য পদে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধে লড়ছেন সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবলীগ নেতা ইফজাল আহমদ চৌধুরী। তাঁরা দুজনই সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু চেয়ারের লড়াই কেউ কাউকেই দেননি ছাড়। চেয়ার ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শামিম আহমদ। ঠিক তেমনি জেলা পরিষদের চেয়ারে বসতে কোমর বেঁধে মাঠে কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী যুবলীগ নেতা ইফজাল আহমদ চৌধুরী।

 

একাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে জানাগেছে, সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শামিম আহমদ দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চেয়েছেন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করার অঙ্গীকারও দিয়েছেন। তাঁর প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। প্রথম দিকে তিনি ভোটের মাঠে বেশ এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইফজাল চৌধুরী শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। কৌশলের ক্ষেত্রে একই পথে হাটেন শামিম আহমদ এবং ইফজাল চৌধুরী। প্রচার প্রচারণায় দলীয় নেতাকর্মীদেরকে সম্পৃক্ত করেন দুজনই। দলীয় নেতাকর্মীরাও বিভক্ত হয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে নির্বাচনে এ দুজনের বিরুদ্ধেই রয়েছে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ। তবে গণমাধ্যমের কাছে সেই অভিযোগ তাঁরা অস্বীকার করেছেন।

 

নির্বাচনে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান। সহজ সরল প্রকৃতির এই সদস্য প্রার্থীকে নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে সবচেয়ে সরব ছিলেন তিনি। ভোটারের কাছে গিয়েও চেয়েছেন ভোট। তাঁকে ঘিরে নির্বাচনে ব্যাপক কৌতূহল ছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত অভিমানে তিনি অনেকটা নিরবতা পালন করছেন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝেও উত্তাপ ছড়ায়। হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর দিকে নজর সকল মানুষের। কাল সোমবার জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সকাল ৯টা থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে দুপুর দুইটায় শেষ হবে। নির্বাচন অবাদ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনে ভোটারের ভোটাধিকারের মধ্যেদিয়ে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শামিম আহমদকে হারিয়ে চেয়ারে বসার স্বপ্ন দেখছেন ইফজাল চৌধুরী। কিন্তু ইফজাল চৌধুরীর সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে বিজয়ের হাসি হেসে আবারো চেয়ারে বসবেন বলে আশাবাদী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ।

 

অন্যদিকে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩নং ওয়ার্ড (জকিগঞ্জ উপজেলা) থেকে এককভাবে নির্বাচন অংশ নিয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নারীনেত্রী সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী। একই সংরক্ষিত আসনের অন্তর্ভুক্ত ১২নং ওয়ার্ড (কানাইঘাট উপজেলা) থেকে এককভাবে অংশ নিয়েছেন মনিজা বেগম নামের অপর এক প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত সাজনা সুলতানা অনেকটা আলোচনায় চলে এসেছেন।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা হয় প্রার্থীদের সঙ্গে। এ সময় সদস্য প্রার্থী ইফজাল আহমদ চৌধুরী বলেন, জকিগঞ্জের জনপ্রতিনিধিগণ পরিবর্তনের পক্ষে। তাই তাঁর বিজয় শতভাগ নিশ্চিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রসারে কাজ করছেন। নির্বাচিত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন করবেন এটাই তার অঙ্গীকার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত নির্বাচনে শামিম আহমদকে ভোটারগণ নির্বাচিত করেছিলেন কিন্তু নির্বাচিত হয়ে শামিম আহমদ আর ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগও করেন নাই। জেলা পরিষদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে করা হয়েছে। এসব কারণে এবার ভোটারগণ পরির্বতন করবেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে অন্য রাজনৈতিক দল সমর্থিত তাঁর অনেক ভোটারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিরব করে রাখা হয়েছিলো। পরে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে সেটি সমাধান করেছেন। এখন সকল ভোটারই প্রকাশ্যে তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন।

তিনি বলেন, শামিম আহমদ টাকা দিয়ে ভোট কিনছেন। কিন্তু ভোটারগণ শেষ পর্যন্ত টাকার কাছে নিজের বিবেক বিক্রি করবেনা। ইভিএমে ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে বলে আমি এবং ভোটারগণ খুবই আনন্দিত। তবে প্রত্যেক ভোটার যেন তার ভোট প্রদান শেষে নিজে বোতাম টিপে ভোট নিশ্চিত করতে পারে সেই বিষয়ে প্রশাসন সর্তক থাকতে হবে। অবাদ সুষ্টুভাবে ভোটগ্রহণ হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে জানান।

 

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ বলেন, অতীতে গণমানুষের সুখে-দুঃখে আমি পাশে ছিলাম। দলমত ছাড়াই মানুষ সকল সময় আমাকে কাছে পেয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। গত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ভোটারসহ সকল মানুষের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ ছিলো। এখন পর্যন্ত আমি কাউকেই কোন হুমকি-ধমকি দেইনি। আমার বিজয় নিশ্চিত দেখে মিথ্যা, বানোয়াট অপপ্রচার শুরু হয়েছে। প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী ইফজাল আহমদ চৌধুরীর অভিযোগগুলো একেবারে অবান্তর ও কাল্পনিক। টাকা দিয়ে ভোট কেনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি টাকা দিয়ে ভোট কেনার প্রশ্নই ওঠেনা। ভোটারের ভালোবাসা ছাড়া বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচিত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন করবো।

 

শামিম আহমদ অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ইফজাল চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে থেকে নির্বাচনের নামে টাকা তুলে এনে মানুষের চরিত্রহনন করছেন। কিন্তু টাকা দিয়ে মানুষের ভালোবাসা অর্জন সম্ভব নয়। জকিগঞ্জে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ইভিএমে স্বচ্ছভাবে ভোটগ্রহণ হবে। প্রথম বারের মতো ইভিএমে জনপ্রতিনিধিগণ ভোট দিচ্ছেন বলে আনন্দিত। ইভিএমের ভোটে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। তাই তিনি সন্তুষ্ট।

 

অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, অনেক ভোটারগণ অঙ্গীকার করেছেন আমাকে ভোট দেবেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা অঙ্গীকার ঠিক রাখলে আমি বিজয়ী হবো। তবে শেষ পর্যন্ত কালো টাকার ছড়াছড়ি তাঁর বিজয়ে বড় বাধা বলে তিনি মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর