জকিগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

জকিগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান-চাল সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ অভিযানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহে কৃষকদের বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান-চাল কেনার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে। ফলে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হলেও লাভবান হচ্ছেন সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ী ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে নি¤œমানের চাল ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কয়েক লাখ টাকা। ধানের ভরা মৌসুমে সারাদেশের মতো সিলেটেও চাল-ধানের বাজারের অস্থিরতা বিরাজ করছে। অস্থির সময়ে ঘুষসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

রুমানা আফরোজের বিরুদ্ধে কৃষকদের অভিযোগ, তিনি ঘুষ ছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেন না এবং সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে নি¤œমানের চাল ক্রয় করছেন। এমন কি ঘুষ না পেলে কৃষকদের তাড়িয়ে দেয়াসহ গালমন্দ করেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বেপরোয়া অনিয়মের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন কৃষকরা। রোববার ও সোমবার পৃথকভাবে খাদ্য মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা ও জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৃষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ফুলতলী গ্রামের মুহিবুর রহমান চৌধুরীর ছেলে কৃষক (কৃষি কার্ড নং-৫১১১০৯২৭০৩৬) মিনহাজ আহমদ চৌধুরীসহ কয়েকজন।

অভিযোগে কৃষকরা অনিয়মের বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রতিটন ধানে দুই হাজার টাকা ঘুষ ছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেন না উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ। তিনি উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই কৃষকরা অসহায়। উপজেলার ২ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি খাদ্য গোদামে দায়িত্বরতরা তার অনিয়ম দুনীর্তির কাছে জিম্মি। গত ২ জুন একজন কৃষক ধান বিক্রি করতে গিয়ে ঘুষ না দেয়ায় ঐ কৃষককে গালমন্দ করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘জেলা খাদ্য অফিস টাকা খায়, আমাকে টাকা দিবেন না কেন’। গালমন্দের ঘটনাটি ঐ কৃষক অডিও রেকর্ড করেছেন।

অভিযোগে আরও দাবী করেন, ৯টি ইউনিয়নের কাবিখা গোদাম থেকে সরবরাহ দেখিয়ে স্থানীয় ছোট্ট একটা রাইছ মিল (মকবুল হাইস্কিং রাইছ মিল) এর নামে কাগজপত্র তৈরী করে নিম্মমানের চাল ক্রয় দেখিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন খাদ্য কর্মকর্তা। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি উপজেলা খাদ্য বিষয়ক কমিটিকেও পাত্তা দেননা। অভিযোগের বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

এদিকে একটি সূত্রে জানাগেছে, সোমবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে সকল উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিয়ে সভায় জকিগঞ্জের অনিয়ম, দুর্নীতির ঘটনায় রুমানা আফরোজকে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন জেলা অফিসের কর্মকর্তাগণ। পরে এক পর্যায়ে রুমানা আফরোজ সভা থেকে বের হয়ে যান। এরআগে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রুমানা আফরোজ সুনামগঞ্জে কর্মরত থাকাকালে খাদ্য নিয়ে কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরে সেখান থেকে জকিগঞ্জে বদলী করা হয় তাকে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুমানা আফরোজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী মিনহাজ চৌধুরী আসলে কোনো কৃষক নয়। তিনি একজন মিল মালিকের ভাই। আমাকে ধান কেনার জন্য চাপ দিয়েছিলেন কিন্তু আমি ক্রয় করিনি। আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর