জকিগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে মানুষ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

জকিগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে মানুষ, ত্রাণের জন্য হাহাকার

আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জের বিভিন্ন ইউপির প্রায় অর্ধলাখ মানুষ গত পাঁচদিন থেকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ভাসছে। ভারতের উজানের বরাক নদী হয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানভাসি লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। সময় সময় নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে সুরমা-কুশিয়ারার একাধিক স্থানে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চারপাশে অথৈ পানি থাকায় বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না বন্যা কবলিতরা। পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরের মজুদ খাদ্য। হাতে কাজ নেই, ঘরে নেই খাবার। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসীদের মধ্যে। ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা বানভাসীরা কোনো নৌকা দেখলেই আশায় বুক বাঁধেন- এই বুঝি এলো ত্রাণের নৌকা। সাংবাদিক দেখে ছুটে যান নিজের নাম লেখানোর জন্য। ভেবেছেন, ত্রাণের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বন্যাদুর্গত জকিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ বরাদ্দের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৩৬ টন চাল ও নগদ একলাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সরেজমিনে বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন এলাকার বানভাসী মানুষেরা।

ভয়াবহ বন্যার ভিডিও দেখুন এই লিংকে ‘জকিগঞ্জ আই টিভি’

সরকারি ত্রাণ সহায়তা শুরু করা হলেও অপ্রতুল ত্রাণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা। একই সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্যের মরাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্লাবিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। বানভাসীরা রোগে-শোকে ভুগলেও দুর্গত এলাকায় এখনো মেডিকেল টিম পৌঁছেনি। শ্রমজীবী মানুষরা খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দেয়ায় গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয়রা বলছেন, বন্যা কবলিত প্রায় অর্ধলাখ মানুষের মাঝে এই ত্রাণ সামগ্রী খুবই অপ্রতুল। ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন লোকজন। কিন্তু কেউ-ই ত্রাণ নিয়ে আসছেনা। বসতঘরে পানি থাকায় চুলায় আগুন জ্বালানোর মত পরিস্থিতি নেই। শিশু খাদ্যরও তীব্র সঙ্কট রয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) পল্লব হোম দাস জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ৩৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ভয়াবহ বন্যা কবলিত ৯টি ইউপি এলাকার মানুষের জন্য এই ত্রাণ অপ্রতুল বলে তিনিও মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। ভয়াবহ বন্যার মতো এত বড় মানবিক বিপর্যয় প্রশাসনের একার পক্ষে মোকাবেলা অনেকটা অসম্ভব। বেসরকারি সংস্থাসহ সর্বস্থরের মানুষকে বন্যার্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ তৎপরতায় এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর