জামায়াতের চরিত্রই হচ্ছে বেঈমানির। এরা একাত্তরে এদেশের মানুষের সাথে বেঈমানি করেছে। ‘৮৬ তে বেঈমানি করেছে। এখনো বেঈমানি করছে। এরা মিথ্যুকের দল। এদের সাথে আর ঐক্য হতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি আলাদা প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। মেয়র পদে আলাদা প্রার্থী দেওয়া নিয়ে ২০ দলীয় জোটসঙ্গী এই দুটি দলের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সিলেটে এর আভাসও মিলতে শুরু করেছে।
জামায়াতের আলাদা প্রার্থী দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা আলী আহমদ।
সিসিক নির্বাচনে বিএনপি থেকে আরিফুল হককে প্রার্থী করা হয়েছে। জোটের বেশিরভাগ শরীকই আরিফুল হকের পাশে থাকলেও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। একে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি চক্রান্ত হিসেবেও দেখছেন আলী আহমদ।
তবে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জামায়াত বলছে, সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা রাখেনি বিএনপি। এই নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত ছাড় দেওয়ার কথা দিলেও সময়ের ব্যবধানে এ কথা ভুলে গেছি বিএনপি।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ জামায়াতকে মিথ্যাবাদী চরিত্রের একটি দল অভিহিত করে বলেন, এ দলটি নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মিথ্যাকে হালাল করে নেয়। এদের কথার কোনো সত্যতা নেই। জামায়াতের আসল চরিত্র সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেরিয়ে এসেছে।
জামায়াতকে সুবিধাবাদী চক্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন কি কারো পৈতৃক সম্পত্তির অংশ যে চাইলেই তা ভাগ-বাটোয়ারা করা যায়? আমরা কোনো ভাগাভাগির রাজনীতি করি না। যে যেখানে যোগ্য আমরা তাকেই সেখানে দেব।
তবে এ সকল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও নাগরিক ফোরামের ব্যানারে মেয়র প্রার্থী হওয়া এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনের আগে আমি যখন জেলে ছিলাম তখন জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা সিলেট এসে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে গত নির্বাচনে আমাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন এবং আমাদের আশ্বস্ত করেন এই বছর জোটের পক্ষ থেকে আমাদের মনোনীত প্রার্থীকে তারা সমর্থন করবেন। হয়তো সময়ের ব্যবধানে অনেকেই এই বিষয়টাকে বিএনপি ভুলে গেছে।
তিনি বলেন, গত নির্বাচনেও জোটের সিদ্ধান্ত মেনে আমি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করি। সেবার বিএনপি থেকে বলা হয়েছিল পরের নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপি কথা রাখেনি। তাই তৃণমূলের চাপে আমি প্রার্থী হয়েছি। আলাদা প্রার্থী হওয়ায় ঐক্যে ফাটল ধরবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ঐক্য হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য। স্থানীয় নির্বাচনের কারণে এতে কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে আলী আহমেদ বলেন, জামায়াতের এ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অবশ্যই সারা দেশে জোটের ওপর বড় প্রভাব পড়বে। আগামীতে সিলেটে জামায়াতের ব্যাপারে আমরা অন্য চিন্তা করব।
তিনি বলেন, সিলেট বিএনপি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাস করে। জামায়াতের সাথে আমাদের সবসময়ই দুরত্ব আছে। সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থানের পর আগামীতে আর ঐক্য টিকিয়ে রাখাও বোধহয় সম্ভব হবে না।
তবে আলী আহমদের দাবি, ভোটের ফলাফলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আলী বলেন, গতবার আরিফুল হক ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে জেতেন। দুই বছরে তিনি সিটিতে কাজ করেছেন ২০ বছরের। তাই এমন জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থী পরাজিত হওয়ার কোনো কারণ দেখি না।
তিনি আরো বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনটি একটি স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ। এ লড়াইয়ে আমরা যেভাবে জয়লাভ করতে পারবো সেই চিন্তা ভাবনা নিয়েই এগোতে হবে।
তিনি প্রশ্ন তোলে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনটা কি কারো পৈতৃক সম্পত্তির অংশ যে চাইলেই তা ভাগ বাটোয়ারা করা যায়? জামায়াতের যদি সাত সিটি করপোরেশন যোগ্য প্রার্থী থাকতো তাহলে আমরা অবশ্যই সবকটিতেই তাদের প্রার্থীকে দিতে রাজী ছিলাম। তবে তাদের কথা হচ্ছে ঐটা তুমি নেও আর এইটা আমাকে দেও। আমরা কোন ভাগাভাগির
রাজনীতি করি না। যে যেখানে যোগ্য আমরা তাকেই সেখানে দিবো।
এদিকে জামাতের জোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করাটাকে সরকারের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে আলী আহমদ বলেন, আমি মনে করি তারা সরকারের সাথে যোগসাযোজ করে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ও সরকারের এজেন্ট হিসেবে জোটের বাইরে গিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
জামায়াতের ভোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে তাদের কি পরিমাণ ভোট আছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে আমি মনে করি যেহেতু তারা সরকারের সাথে যোগসাজোস করে নির্বাচনে এসেছে, সেহেতু তাদের সহযোগী হিসেবেও সরকার জামায়াতকে সহযোগিতা করতে পারে। আর এ সহযোগিতাটা হতে পারে বিএনপিকে দেখানোর জন্য।
তবে তাদের এ পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে ২০ দলীয় জোটের ভিতরের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন।
তিনি বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে জামায়াতের একক ভাবে প্রার্থী দেয়াটা ২০ দলীয় জোটের নিজেদের ভিতরের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আরো বলেন, সিটি নির্বাচনে দুই দলের এ মুখোমুখি অবস্থান এটাই ইঙ্গিত করে যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিজেরা এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি। আবার অনেকে এটাও ধারণা করছেন, সুবিধাভোগীয়ের কাছ থাকে জামায়াত এমন কোন আশ্বাস পেয়েছে যাতে তাদের নিজেদের কোন লাভ হতে পারে।
শাহিন বলেন, যেহেতু সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অন্য যে কোন সিটি নির্বাচন থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে সেহেতু স্থানীয় ভাবে এ দ্বন্দ্বের প্রভাব অবশ্যই কেন্দ্রতে পড়বে। আর প্রভাবটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জামায়েতের ভোটার সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনার আমার মতো সবাই এটা কোটি টাকার প্রশ্ন। সবাই এখন অপেক্ষমাণ রয়েছেন যে জামায়াত সিটি নির্বাচনে তার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে এটা কি তারা কোন ফাঁকিবাজি করছে না তাদের শক্তির জানান দেয়ার জন্যই সেটা করেছে। এটা নির্বাচনের ফলাফল হাতে না আসলে বলা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, জামায়াত যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পায় তাহলে বুঝে নিতে হবে বিএনপির সাথে সাথে ২০ দলীয় জোটের সাথে একটা অনৈক্যের সৃষ্টির হবে। তখন সে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাথে একটা দর কষাকষিতেও যেতে পারবে বলে আমি মনে করছি।
Leave a Reply