জকিগঞ্জে জলমহাল নিয়ে দুটি পক্ষ মুখোমুখি

জকিগঞ্জ টুডে ডেস্ক:: জকিগঞ্জের চারখালা জলমহালের বন্দোবস্তো এবং দখল নিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শাইটশৌলা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি মূখোমূখি অবস্থানে। যে কোন সময় মারাত্মক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় দুই শতাধিক লোকজন নিয়ে পতাকা উত্তোলন করে চারখাল জলমহাল পাহারা দিচ্ছেন।

অপরদিকে শাইটশৌলা গ্রামের আজব আলীর ছেলেরা ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী ভাড়া করে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ থানার ওসিকে লিখিত দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে দেয়া লিখিত কাগজে বলা হয়েছে, ২০ একরের নীচের চারখালা জলমহালটি বন্দোবস্তো দেয়ার জন্য উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিলাম্বরপুর গ্রামের শ্রবন প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধা উমর আলী জলমহালটি ১৪২৪ থেকে ১৪২৬ বাংলা সনের জন্য বন্দোবস্তো নেয়ার জন্য পশ্চিম নিলাম্বরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে সরকারী চাহিদা পত্রের টাকা জমা দিয়ে টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করেন। পরে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে তিনির সমিতিকে জলমহালের তীরবর্তী ও নিকটবর্তী উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাছাড়া স্থানীয় সংসদ উপজেলা চেয়ারম্যান অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে লিখিত সুপারিশ করেন।

পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা উমর আলীর সমিতিকে বন্দোবস্তো না দিয়ে কাকড়াকুড়ি ও মাকড়াকুড়ি জলমহালের সাথে চারখাল জলমহালকে গ্রুপভূক্ত করে টেন্ডারে অংশগ্রহন না নেয়া আজবের ছেলে আব্দুস শহিদ ও জামায়াত নেতা মুহিত মোল্লার শাইটশৌলা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে বন্দোবস্তো দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে এই কাকড়াকুড়ি ও মাকড়াকুড়ি নামের দু’টি জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে উন্নয়ন স্কীমের নামে বন্দোবস্তো নিয়ে তারা উন্নয়ন ছাড়াই দীর্ঘদিন থেকে লোটপাট করছে।

এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা উমর আলী সিলেটের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত দেন। কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে পরে হাইকোর্টে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগংদের বিবাদী করে ১০৮২৩/২০১৭ নাম্বারের রিট মামলা দায়ের করেন।

রিট শুনানী শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ গত ৭ আগষ্ট রুল নিশি জারি করে একত্রিকরণের সকল প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করে ৩০ দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা উমর আলীর বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশনা দেন।
কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা তামিল না করে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সুপ্রিম কোর্টের এপিলেইট ডিভিশনে আপিল করে হাইকোর্টের আদেশ স্ট্রে চাইলে চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন স্ট্রে এলাও করে ১৫ অক্টোবর ফুল বেঞ্চে শুনানীর আদেশ দেন। শুনানী শেষে চেম্বার জজের স্ট্রে বহাল রেখে মামলাটি আবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চে দ্রুত বিচার করে চুড়ান্ত রায় দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ফেরত পাঠান। বর্তমানে মামলাটি প্রস্তুত হয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

হাইকোর্টে বিচারাধীনবস্থায় সম্প্রতি সময়ে রাজাকার পুত্রদ্বয়ের সমিতির কাছ থেকে চারখাল জলমহালের খাজনা আদায় করে দখল দিতে গেলে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোব্ধ হয়ে উঠেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কেউ জলমহালে হস্তক্ষেপ করলে আমরা প্রতিহত করব।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাক সরকার বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারধীন রয়েছে। এরপরও জেলা প্রশাসন খতিয়ে দেখবে। আমি প্রশিক্ষনের জন্য ভারতে যাচ্ছি তাই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব হচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে জকিগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাহিদুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরো খবর